স্পোর্টস ডেস্ক : বৃষ্টি বাধা পেরিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ডাকওয়াথ লুইস পদ্ধতিতে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
আরও পড়ুন : ষষ্ঠবার বাড়লো হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়
সোমবার (২৭ মার্চ) টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ। শুরুতে লিটন-রনিদের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ভর করে ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেটের বিনিময়ে ২০৭ রান সংগ্রহ করে টাইগারা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ৮১ রান সংগ্রহ করে আয়ারল্যান্ড।
এদিন বৃষ্টির কারনে দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু হতে বিলম্ব হয়। তাই ডাকওয়াথ লুইস পদ্ধতিতে আয়ারল্যান্ডের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৮ ওভারে ১০৪ রানের। এই লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই চার হাঁকান পল স্টার্লিং। দুই ওপেনার মিলে এই ওভারে চার চারে ১৮ রান তোলে। পরের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমান খরচ করেন ১৪ রান। তাতে ২ ওভার শেষে ৩২ রান তোলে তারা।
সফরকারীদের এমন উড়ন্ত সূচনার পর তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে রানের লাগাম টেনে ধরেন দেন হাসান মাহমুদ। তার করা ওভারের প্রথম তিন বল ডট দেয়ার পর চতুর্থ বলে পুরোপুরি পরাস্ত হয়েছেন রস অ্যাডায়ার। মিডল স্টাম্পের ওপর নিখুঁত এক ইয়র্কারে চোখে রীতিমতো সর্ষে ফুল দেখেছেন রস। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১৩ রান।
আরও পড়ুন : ভিজিট নিয়ে রোগী দেখবেন চিকিৎসকরা
পরের ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ। এই পেসারের স্বপ্নের মতো এক ইয়র্কারে স্টাম্প উপড়ে গেছে লরকার টাকারের। মাত্র ১ রান করেই বিদায় নেন এই উইকেটকিপারের ব্যাটার।
একই ওভারে আবারো আঘাত হানেন তাসকিন। এবার গুড লেন্থে করা বলে চোখ বন্ধ করে শট খেলতে গেলেন স্টার্লিং, আর তাতে বল আঘাত হানলো তার উইকেটে। এই ওপেনার নামের পাশে যোগ করেছেন ১৭ রান। পরের বলে তাসকিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে থার্ডম্যানে শামিম পাটুয়ারীর হাতে ধরা পড়েন জর্জ ডকরেল। গোল্ডেন ডাক খেয়েছেন এই অলরাউন্ডার। তাতে নিজের প্রথম ওভারেই ৩ উইকেট তুলে নেন তাসকিন।
এই বিপর্যয়ে ফলে ৫০ পূর্ণ করার আগেই সাজঘরে ফেরেন আইরিশদের ৪ টপ অর্ডার ব্যাটার। এরপর বাকিরাব চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। হ্যারি টেক্টর-ডেলানিরা কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে।
আরও পড়ুন : জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ চূর্ণ করার অঙ্গীকার
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৮ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ৮১ রানে থেমেছে আয়ারল্যান্ড। ১৬ রানে ৪ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার তাসকিন। এই পেসারের এটা ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার।
এর আগে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ছক্কা হাঁকিয়ে ঝড় তোলার আভাস দেন লিটন দাস। এরপর বোলারদের ওপর চড়াও হন আরেক ওপেনার রনি তালুকদার। এ দুজনের ব্যাটে পাওয়ারপ্লেতে রেকর্ড ৮১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭৬, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে।
দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিলেও বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি লিটন। ক্রেইগ ইয়াংয়ের স্লোয়ার বল মিড অফের মাথার ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। টাইমিংটা ঠিকঠাক হয়নি, সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করেন পল স্টার্লিং। ভাঙে ৪৩ বল স্থায়ী ৯১ রানের জুটি। ২৩ বলে চারটি চার ও তিনটি ছক্কায় ৪৭ রান করেন লিটন।
লিটনের বিদায়ের পরপরই শান্তর সঙ্গে জুটি গড়ে ইনিংস এগিয়ে নেন রনি। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা টাইগার এ ব্যাটার ফিফটি তুলে নিতেও বেশি সময় নিলেন না। ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে প্রথম ফিফটির জন্য তিনি খেলেছেন স্রেফ ২৪ বল। ৬টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মেরেছেন ৩২ বছর বয়সী ওপেনার।
আরও পড়ুন : বাইডেনের স্বাধীনতার দিবসের শুভেচ্ছা
তবে এদিন ব্যর্থ হলেন দারুণ ছন্দে থাকা শান্ত। হ্যারি ট্যাক্টরের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে পরপর দুই ওয়াইডে যেন ধৈর্য হারালেন। পরের বলটি ভেতরে ফেলে হালকা টার্ন করালেন ট্যাক্টর। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারলেন না শান্ত। বাকি কাজ অনায়াসেই সারলেন লরকান টাকার। স্টাম্পিং হয়ে ফিরলেন ১ ছয়ে ১৩ বলে ১৪ রান করা শান্ত।
একপ্রান্তের সতীর্থদের হারিয়েও অন্য প্রান্তে ঝড় তোলা অব্যাহত রাখছিলেন রনি। সেই সঙ্গে একাদশে সুযোগ পাওয়া শামীম পাটোয়ারীও বাকিদের দেখানো পথেই হাঁটলেন। তবে গ্রাহাম হিউমের ফুললেংথের বলটা যতটা ভেবেছিলেন, ততটা ওঠেনি। পুরোপুরি মিস করে বোল্ড রনি। ৩৮ বলে তার ৬৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস থামে সেখানেই। লিটনের সঙ্গে ৯১, শান্তর সঙ্গে ২৭ রানের পর শামীম হোসেনের সঙ্গে ৩৬ রানের জুটির পর থামলেন রনি।
এরআগে দুই ম্যাচে দলে থেকেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি শামীম পাটোয়ারি। এ ম্যাচে ব্যাটিং পজিশনে উন্নতিতে বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে রান এগিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। তবে মার্ক অ্যাডায়ারের চমৎকার এক স্লোয়ারে কাটা পড়তে হয় তাকে। ক্যাচ আউটের শিকার হয়ে বিদায় নেন তিনি। ২০ বলে এক ছক্কা ও দুই চারে কার্যকরী ৩০ রানের ইনিংস খেলেন শামীম।
আরও পড়ুন : জনযুদ্ধ দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি
শামিমের বিদায়ের পর দ্রুত রান তুলতে গিয়ে সাজঘরে ফিরলেন হৃদয়ও। ক্রেইগ ইয়াংয়ের আগের বলে লং দিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন। পরের বলে তুলে মারতে গিয়ে তালুবন্দি হন তিনি। ৮ বলে এক ছক্কায় ১৩ রান করেন হৃদয়। তবে হৃদয়ের আউটের আগে দুইশ ছাড়ায় বাংলাদেশের ইনিংস।
এরপর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন সাকিব (২০) ও মেহেদী মিরাজ (৪)।
সান নিউজ/জেএইচ