স্পোর্টস ডেস্ক : টাইগারদের দেওয়া ৩৩৯ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে আইরিশদের ব্যাটিং লাইনআপ। এবাদতদের-নাসুম-তাসকিনের বোলিং তোপে ১৫৫ অলআউট সফরকারীরা। ফলে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। যা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে রানের দিক থেকে সবচেয়ে বড় জয় টাইগারদের।
আরও পড়ুন : গ্রেফতার হতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট!
শনিবার (১৮ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে রেকর্ড ৩৩৮ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। রান তাড়া করতে নেমে ৩০ ওভার ৫ বল খেলে ১৫৫ রানে অলআউট হয় আইরিশরা।
৩৪০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই করে সফরকারীরা। প্রথম দশ ওভারে কোনো উইকেট হারায়নি আইরিশরা। তবে মন্থর ব্যাটিংয়ের কারণে চাপে পরে তারা। ফলে ১১তম ওভার থেকে তাদের ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামা শুরু হয়। ২০ ওভারের মধ্যেই সাজঘরে ফিরেছেন তাদের ৫ ব্যাটার।
উইকেট শিকারের শুরুটা করেন সাকিব আল হাসান। আইরিশদের উদ্বোধনী জুটি বিপজ্জনক হয়ে উঠার আগেই ধোয়েনিকে বিদায় করেন সাকিব। এরপর নিজের করা টানা দুই ওভারে আইরিশদের দুই ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান পেসার এবাদত হোসেন। তারপর উইকেট শিকারে এবাদতের সঙ্গে যোগ দেন তাসকিন আহমেদ।
দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারে অ্যান্ডি বালবির্নিকে বোল্ড করে ফেরান সাজঘরে। বালবির্নি ১২ বলে করেন ৫ রান। এখানেই শেষ নয়। পরের ওভারে তাসকিনের শিকার লরকান টাকার। অফে করা শর্ট বল টাকারের ব্যাটে লেগে যায় স্লিপে। হালকা লাফিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন ইয়াসির আলী। বিদায় নেয়ার আগে টাকার করেন ৮ বল থেকে ৬ রান।
এরপর ১৬ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে আইরিশরা যখন ধুঁকছে তখন দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলার চেষ্টা করেন জর্জ ডকরেল ও কুর্টিস ক্যাম্পার।
ষষ্ঠ উইকেটে এই দুজনে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তবে অসহায় ছিলেন বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে। তাদের জুটিতে একশো পার হয় সফরকারীরা। কিন্তু দলীয় রান তিন অঙ স্পর্শ করার পর আর বেশিদূর এগোয়নি এই জুটি। ১৬ রান করা ক্যাম্পারকে ফিরিয়ে ৩৩ রানের এই জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ।
২৪তম ওভারের চতুর্থ বলটি অফ এবং মিডল স্ট্যাম্পের ওপর রেখে ফুল লেন্থে করেছিলেন নাসুম। বলে সামান্য টার্ন থাকায় ডিফেন্স করতে গিয়ে লাইন মিস করেন ক্যাম্পার। তাতে বল সরাসরি পায়ে আঘাত হানলে নাসুমের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি এই আইরিশ অলরাউন্ডার। ফলে রিভিও নেন তিনি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার।
নিজের পরের ওভারে বোলিংয়ে ফিরে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন নাসুম। ওভারের পঞ্চম বলে ১ রান করা গেরেথ ডেলানিকে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলানোর পরের বলেই অ্যান্ড্রি ম্যাকব্রাইনকেও ফিরিয়েছেন এই স্পিনার। মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে রানের খাতা খুলতে পারেননি ম্যাকব্রাইন। ইনিংসে এটা নাসুমের তৃতীয় শিকার।
ব্যাটারদের এমন আসা-যাওয়ার মিছিলেও এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন ডকরেল। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। তার ৪৫ রান শুধুই হারের ব্যবধান কমিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৩০ ওভার ৫ বল খেলে ১৫৫ রান তুলে অলআউট হয়েছে আয়ারল্যান্ড।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ব্যক্তিগত ৩ রানের মাথায় বিদায় ওপেনার নেন তামিম ইকবাল। আইরিশ পেসার মার্ক অ্যাডায়ারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। এরপর শুরুর সেই চাপ কিছুটা সামলে নেন লিটন দাস এবং নাজমুল হোসেন শান্ত।
তবে দলীয় ৪৯ রানের সময় সাজঘরে ফেরেন লিটনও। ৩১ বলে ২৬ রান করে কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে ক্যাচ আউটের শিকার হন তিনি। এরপর ক্রিজে নামেন সাকিব আল হাসান। সাকিব-শান্ত দুজনে নেন দলকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব। তবে বেশিদূর এগোতে পারেনি এই জুটি। দলীয় ৮১ রানে বিদায় নেন শান্ত। ৩৪ বলে ব্যক্তিগত ২৫ রান করে ফেরেন তিনি।
এরপর ক্রিজে আসেন অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়। সাকিবকে নিয়ে গড়েন বড় জুটি। এদিনই সাকিব ওয়ানডেতে নিজের ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অন্যপ্রান্তে অভিষিক্ত হৃদয়ও দারুণ খেলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধ-শতক। যদিও দুজনের সামনেই সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও কেউই পারেননি তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে।
ব্যক্তিগত ৯৩ রানের মাথায় ক্যাচ আউট হয়ে বিদায় নেন সাকিব। এই অলরাউন্ডারের বিদায়ের পরই হাত খুলে খেলতে থাকেন হৃদয়। অন্যপ্রান্তে মুশফিুকর রহিম খেলেন ঝড়ো এক ইনিংস। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে একের পর এক বল বাউন্ডারি ছাড়া করেন অভিজ্ঞ এই টাইগার ক্রিকেটার। তবে অর্ধ-শতক তোলার আগেই বিদায় নেন তিনি। ২৫ বলে ৪১ রান করে সাঝঘরের পথ ধরেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
এরপর অভিষেকে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও তা আর পাওয়া হয়নি হৃদয়ের। সাকিবের মতো নার্ভাস নাইন্টিতে কাটা পড়েন তরুণ এ ব্যাটারও। মিডউইকেটের ওপর দিয়ে লফটেট শট খেলতে গিয়ে ৯২ রানে বোল্ড অউটের শিকার হন তিনি। দলের রান তখন ২৯৭।
শেষ দিকে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন ইয়াসির আলি রাব্বি। অন্যপ্রান্তে তাকে সঙ্গ দেন তাসিকন আহমেদ। কিন্তু বিশাল একটি ছক্কা হাঁকিয়ে তাসকিনও ফিরে যান ১১ রানে। এরপর রান আউটে কাটা পড়ে রাব্বি ফেরেন ১৭ রান করে। নাসুম আহমেদ ১১ রানে ও মোস্তাফিজুর রহমান ২ রানে থাকেন অপরাজিত।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৩৮ রান। ওয়ানডে ইতিহাসে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। এর আগে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৩৩৩।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট সংগ্রহ করেন গ্রাহাম হিউম। একটি করে উইকেট নেন মার্ক অ্যাডায়ার, এ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও কার্টিস ক্যাম্ফার।
আরও পড়ুন : ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৩৩৮/৮ (৫০ ওভার)
ব্যাটিং : তামিম ৩, লিটন ২৬, শান্ত ২৫, সাকিব ৯৩, হৃদয় ৯২, মুশফিক ৪৪, ইয়াসির ১৭, তাসকিন ১১, নাসুম ১১*, মুস্তাফিজ ১*।
বোলিং : অ্যাডায়ার ১০-০-৭৭-১, হিউম ১০-০-৬০-৪, ম্যাকব্রাইন ১০-০-৪৭-১, ক্যাম্পার ৮-০-৫৬-১, টেক্টর ৬-০-৪৫-০, ডেলানি ৬-০-৫০-০।
আয়ারল্যান্ড : ১৫৫/১০ (৩০.৫ ওভার)
ব্যাটিং : ডোহেনি ৩৪, স্টার্লিং ২২, বালবার্নি ৫, টেক্টর ৩, ক্যাম্পার ১৬, ডকরেল ৪৫, ডেলানি ১, ম্যাকব্রাইন ০, অ্যাডায়ার ১৩, হিউম ২*।
বোলিং : মুস্তাফিজ ৬-০-৩১-০, তাসকিন ৬-২-১৫-২, নাসুম ৮-০-৪৩-৩, সাকিব ৪-০-২৩-১, ইবাদত ৬.৫-০-৪২-৪।
বাংলাদেশ ১৮৩ রানে জয়ী। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ : তৌহিদ হৃদয়।
সান নিউজ/জেএইচ