সান নিউজ ডেস্ক: ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেছিলেন দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। আর ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি পেলেও।
আরও পড়ুন: পেলে চিরদিনের জন্য
ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর খুবই শোকাহত হয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। পেলের কেন যেন তখনই জানা হয়ে গিয়েছিলো, খুব দ্রুতই পরপারে দেখা হবে তার আর ম্যারাডোনার। যেন অপেক্ষার প্রহর তখন থেকেই গুনতে শুরু করেছিলেন তিনি।
ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোকগ্রস্থ পেলে সেদিন লিখেছিলেন, ‘আশা করি, এক দিন স্বর্গে গিয়ে আমরা ফুটবল খেলব।’
পেলে বনাম ম্যারাডোনার মধ্যে কে সেরা- এই তর্ক চিরকালের। একজন ফুটবল সম্রাট, অন্যজন রাজপুত্র। সম্রাট-রাজপুত্রের সম্পর্ক ছিল অম্ল-মধুর। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাও ছিল প্রচুর। আবার সংঘাতও নেহায়েত কম ছিল না।
আরও পড়ুন: পেলের প্রতি তারকা ফুটবলারদের শ্রদ্ধা
ফুটবল জগতের এই দুই বটবৃক্ষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের কেন্দ্রে থাকতেন ম্যারাডোনা। লাগামছাড়া ব্যক্তিগত জীবনের জন্য বারবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন।
অন্যদিকে পেলে মাদক-বিরোধী অভিযানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। বিশেষ করে খেলাধুলোর জগত থেকে মাদক ও মাদকসেবীদের দূরে রাখার চেষ্টা করে গেছেন তিনি।
২০০০ সালে প্রকাশিত হয় ম্যারাডোনার আত্মজীবনী। তাতে সরাসরি আঙুল তোলা হয়েছিল পেলের দিকে! দিয়েগোর অভিযোগ ছিল, সতীর্থ গ্যারিঞ্চা যখন অ্যালকোহল আসক্তির কবলে পড়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিলেন, তখন উদাসীন ছিলেন পেলে।
আরও পড়ুন: পেলেকে হারানোর বেদনা প্রকাশে যথেষ্ট নয়
দুই মহাতারকার মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছিল, যখন ওই বছরই ‘শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়’ বেছে নিতে অনলাইন ভোট নেয় ফিফা। বিপুল ব্যবধানে পেলেকে হারিয়ে সেই খেতাব জিতে নেন ম্যারাডোনা; কিন্তু পেলের অনুরাগীরা দাবি করেন, যেহেতু ভোট দিয়েছে আমজনতা, তাই বহু আগে অবসর নেওয়া পেলেকে গুরুত্ব না দিয়ে সদ্য অবসর নেওয়া ম্যারাডোনার পক্ষেই তাদের ভোট যাবে- এটাই স্বাভাবিক।
এরপর ফিফা আবারও একটি ভোট নেয়। এবার সাংবাদিক, কোচ ও ফুটবলের সঙ্গে যুক্তদেরই কেবল ভোট দিতে বলা হল। সেই ভোটে জিতে গেলেন পেলে। ফিফাও ঘোষণা করলো, সর্বকালের সেরা পেলে। কিন্তু ইতিহাসের অমোঘ ইশারায় মূলত অমীমাংসিতই রয়ে গেল দু’জনের মধ্যে তুলনা।
এরপর ম্যারাডোনাকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি পেলে। ২০০৬ সালে ম্যারাডোনা তার চেয়ে বড় ফুটবলার কিনা জিজ্ঞাসা করায়, পেলে পাল্টা প্রশ্নকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ‘বাঁ-পা বাদ দিলে ম্যারাডোনা তার কেরিয়ারে কয়টি গোল ডান-পা বা হেডের সাহায্যে করেছেন?
আরও পড়ুন: সৌদির ক্লাবে যোগ দিলেন সিআর সেভেন
তিনি এমনও একবার বলেছিলেন, ‘আমার সঙ্গে ম্যারাডোনার তুলনা করতে গেলে, ওকে আরও ১ হাজার গোল করতে হবে।’ উত্তরে ম্যারডোনা বলেছিলেন, ‘সেটা আমি করতে পারব না। তবে তাতে কিছু যায় আসেও না।’
তবে এক সময় দু’জনের মধ্যে তিক্ততা কমে আসে। একজন আরেকজনকে শ্রদ্ধা করতে শুরু করেন। ভালোও বাসেন। যে কারণে ম্যারাডোনা নিজেই স্বীকার করেছিলেন, পেলেই সর্বকালের সেরা।
২০২০ সালে ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে পরম বন্ধু বলে সম্বোধন করে শোকবার্তা জানান পেলে। তিনি সেদিন লিখেছিলেন, ‘একজন প্রিয় বন্ধুকে হারালাম। আশা করি, একদিন স্বর্গে গিয়ে আমরা ফুটবল খেলব।’
আরও পড়ুন: কিংবদন্তি পেলে আর নেই
মেসিদের বিশ্বকাপ জয়ের পরও ম্যারাডোনাকে স্মরণ করে পেলে বলেছিলেন, মেসির বিশ্বকাপ জয়ে নিশ্চয়ই স্বর্গ থেকে হাসছেন ম্যারাডোনা!
প্রসঙ্গত, পেলে একজন ব্রাজিলীয় পেশাদার ফুটবলার, যিনি আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন। ব্রাজিলের হয়ে তিনি ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও তিনবার বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার।
এক বছরের বেশি সময় ধরে কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছিলেন তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। ফুটবলের অবিসংবাদিত সম্রাট পেলের নামের পাশে রয়েছে অসংখ্য রেকর্ড।
সান নিউজ/এনকে