সান নিউজ ডেস্ক: সাতক্ষীরার সাফজয়ী আলোচিত ফুটবলার মাসুরা পারভীনের বাড়িতে গিয়েছেন জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির। তার সামনেই মুছে ফেলা হলো মাসুরার বাড়ির আঙিনায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেওয়া লাল রঙের ক্রস চিহ্ন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বিএনপি
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এর নির্দেশনায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বেলা দশটার দিকে সওজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া ওই লাল ক্রস চিহ্ন মুছে ফেলা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক সাবিনার ও মাসুরার পরিবারকে মিষ্টি মুখ করান।
এ সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমাযুন কবির বলেন, যতদিন না পর্যন্ত মাসুরার পরিবার নিজেদের বাড়ি বাংলাদেশ সড়ক বিভাগের নির্ধারিত জায়গা থেকে সরিয়ে নতুন বাড়ি করবেন ততদিন পর্যন্ত তাদের (সওজ) কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাবিনা-মাসুরারা বাড়ি ফিরলে তাদের বর্ণাঢ্য সম্বর্ধনা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বাইডেনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ
জানা গেছে, সাফজয়ী নারী ফুটবলার মাসুরার বাড়ি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলায়। সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলা বেতনা নদীর তীরে বিনেরপোতা এলাকায় মাসুরার ওই বাড়ি থাকা না থাকা নিয়েই দেখা দিয়েছিলো সংশয়। সাফজয়ী এই বাঘিনীর বাড়ির জমিটি নাকি সওজের কাজের নির্ধারিত জায়গায়।
সওজের কাজের জন্য মাসুরাদের বাড়িটি ভাঙ্গার প্রয়োজন ছিলো কর্তৃপক্ষের। এর জন্য তার বাড়ির দেয়ালে লাল ক্রস চিহ্নও দিয়ে রাখা হয়েছিলো। তবে দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এনে দেওয়ার অন্যতম কারিগর মাসুরার পরিবারের মাথা গোজার ঠাই অক্ষত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির।
আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে ৩৯ মাস ছাড়
সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলা বেতনা নদীর তীরে বিনেরপোতা এলাকায় মাসুরাদের বাড়ি। সেখানে তার মা-বাবা ও দুই বোন বসবাস করেন। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে তাদের বাড়ি গিয়ে মাসুরার বাবা রজব আলী ও মা ফাতেমা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় দেখা যায় তাদের ঘরের পেছনের দেয়ালে তিনটি ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে।
ওই ক্রস চিহ্ন সম্পর্কে মাসুরার বাবা রজব আলী বলেন, ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে আমার মেয়ের একমাত্র গোলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। আমাদের থাকার জায়গা না থাকার বিষয়টি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর নজরে আসে। তখন তিনি আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু আমাকে যে জমি দেওয়া হয় সেখানে ১৫ ফুট পানি জমে ছিল। বিভিন্ন দপ্তরে বহুদিন ছোটাছুটির পরও সহায়তা পাইনি।
আরও পড়ুন: ডিম আমদানি করবো না
তিনি আরও বলেন, বাধ্য হয়ে বঙ্গমাতা গোল্ড কাপ থেকে মাসুরার প্রাপ্ত তিন লাখ টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করি। সেই সময় মাসুরা ২৮ দিন বাড়িতে ছিল। তার ইচ্ছা ছিল দুই দিন বাড়িতে থেকে ঢাকায় যাবে। ২৬ দিনের মাথায় মেয়ের খেলার পুরস্কারের টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি করি। এরপর মাত্র দুই দিন নতুন ঘরে থেকে ঢাকায় খেলতে চলে যায় মাসুরা।
তিনি আরও বলেন, এর আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা দোচালা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। চাল ও দেয়াল খসে পড়ছিলো। মাসুরা বাধ্য হয়ে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে এই ঘর করেছে। আগে ভ্যানে করে এলাকায় ফল-মূল বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুস্থতার কারণে এখন আর সেটাও করতে পারি না।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে বাঁধা!
রজব আলী বলেন, এত টাকা খরচ করে বাড়ি বানিয়ে এখন আমরা প্রায় নিঃস্ব। এদিকে আমার শরীরটাও ভালো না। কাজ করতে পারি না। মেয়ের খেলার টাকায় সংসার চলে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। সেই হিসেবে আমাদের বাড়িতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে গেছে। সরকারিভাবে পাওয়া আট শতক জমিতে ঘর করেছি। এটা ভেঙে দিলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবো?
সান নিউজ/কেএমএল