বাংলাদেশের ফুটবলকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্য পল স্মলির
খেলা

ফুটবল উন্নয়নে পল স্মলির ভাবনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক:

টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে পল স্মলিকে কিছুদিন আগে পূর্ণাঙ্গভাবে আবারো নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ফুটবল উন্নয়নে তার কি ভাবনা তা তিনি এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন ফেডারেশনকে। সেই সাক্ষাতকারেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ দেয়া হলো পাঠকদের জন্য।

প্রশ্ন: আবারো বাংলাদেশ ফুটবলের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর হওয়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন। কেন আপনি ব্রুনেই ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসলেন?

উত্তর: ব্রুনেইয়ে আমার দায়িত্ব ছিল মূলত জাতীয় দলের প্রধান এবং ডেভেলপমেন্ট চিফ হিসেবে। সেখানে বেশ কিছু দারুণ অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি রয়েছে যা আমি উপভোগ করেছি। তবে করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় সেখানকার ফুটবল কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। ফলে আমি পরিবারের কাছে ফিরে যাই। আর বাংলাদেশ সবসময় আমার হৃদয়ে ছিল। এখন সেদেশের ফুটবলে আবার অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছি। আমি বেশ আনন্দিত যে ফেডারেশন সভাপতি, টেকনিক্যাল কমিটি ও কার্যনির্বাহী সদস্যদের দেয়া একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করব।

প্রশ্ন: কোনো সন্দেহ নেই আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে আপনার সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশে আপনি তিন বছর কাজ করেছেন। আপনি এ তিন বছরে কী সফলতা দেখছেন বা এ সময়ে নিজের কাজের মূল্যায়ন কিভাবে করবেন?

উত্তর: আমার বায়োডাটা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা বেশ সুনাম কুড়িয়েছে ইউরোপ ও এশিয়ার ফুটবলের বাজারে। আর বাংলাদেশে এসে প্রথম ধাপে যা কিছু করেছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এখনো দক্ষিণ এশিয় অঞ্চল ও আরও বড় পরিসরের প্রেক্ষিতে অনেক কাজ করার বাকি। এসব বিষয়ে বাফুফে সভাপতি, টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা মূল্যায়ন করবেন। টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পক্ষে সব কিছু করা অসম্ভব। আমি অজুহাত খুঁজছি না, কিন্তু অনেক সময় অনেক ভূমিকায় কাজ করতে হয় টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে। তবে আমি বলব এ কাজটা আমি বেশ উপভোগ করি।

প্রশ্ন: আপনাকে ২০১৬ সালে চার বছরের একটা পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল অথচ এর ২৫% পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন হয়নি। এ ব্যর্থতায় দায়ী কে? আর আপনার পরিকল্পনা ছিল বর্ষা মৌসুমে ফুটবল লিগ যেন হয়- কেন?

উত্তর: ঘরোয়া ফুটবল ও আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্য একটা কাঠামোগত পরিকল্পনার সমন্বয় করতে গেলে বাংলাদেশের মতো দেশে সমালোচনা শুনতে হবে। ২০১৬ সালে চার বছরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তাতে আমি দেখেছি অনেকেই এটার পক্ষে ছিলেন না। কারণ আবহাওয়ার জন্য ফুটবল ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন আসতে পারে, তাই বাইরের দেশের সঙ্গে এর সমন্বয় করা কঠিন ছিল। তাছাড়া বিজ্ঞাপনের কথা বলে ক্লাবগুলো এজন্য অনেক সময় ব্যয় করেছে। দূর্ভাগ্য চার বছরের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। এখন এই পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন করে দেখতে হবে কিভাবে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়া যায়।

প্রশ্ন: আপনি আসার আগে যুব ফুটবল নিয়ে কাজ হয়েছে। আপনি এসেও এই কাজ করলেন। তাহলে আপনার সাফল্য কোথায়? কেন আপনি তৃণমূল ফুটবল নিয়ে কাজ করলেন না?

উত্তর: আমি আধুনিক ও যুগোপযোগী পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি, যা ছিল দৃশ্যমান। যে উপায়ে কাজ করলে, ফুটবলের উন্নয়ন হবে, সেসব ক্ষেত্রে কাজ করেছি। তবে এটাও দেখতে হবে পাশের দেশগুলোর চেয়ে ফুটবলে আমাদের বাজেট ছিল কম। এ কাজে ধারাবাহিকতাও দরকার ছিল, কিন্তু তাও হয়নি। তবু তৃণমূল ফুটবলে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। ভবিষ্যতে এ কাজে আরো মনোযোগ দিতে হবে।

প্রশ্ন: কয়েকদিন আগে বাফুফে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির সদস্যদের নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। আপন কি এই কমিটি পছন্দ করেন?

উত্তর: আমি ফেডারেশনের মনোনয়ন ও নিয়োগের ব্যাপারে অবগত নই। তবে খেলায় ইতিবাচক প্রভাবের জন্য টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে কাজের অগ্রাধিকারকে বিবেচনায় এনে একটা কৌশলগত নির্দেশনা যুক্ত করা যেতে পারে।

প্রশ্ন: আপনি পারভেজ বাবু ও পাওলোকে ফরটিজ একাডেমি থেকে দূরে রেখেছিলেন। তাদের নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। আপনিও তাদের পছন্দ করেন না। কিন্তু তারাই এখন টেকনিক্যাল কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। আপনি কি মনে করেন তারা এ কাজের জন্য উপযুক্ত?

উত্তর: ফুটবল কমিটিতে এ কাজের জন্য অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন। অনেক দক্ষ খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি ও কর্মকর্তা আছেন যারা ফুটবলের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। কিন্তু যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে, মনোনয়ন বা নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। তবে আপনি যাদের সম্পর্কে বললেন, তারা প্রত্যেকেই কাজের ব্যাপারে মনোযোগী, পরিশ্রমী, উদ্যোমী ও ফুটবলের উন্নয়ন চায়। আমার দিক থেকে যেটা বলব, আমি আনন্দিত যে, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।

প্রশ্ন: এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিনশিপের পর থেকে ফরটিজ একাডেমি নিষ্ক্রিয়। বিদেশি কোচদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। কোচদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে মনে করেন এই একাডেমির কোন ভবিষ্যৎ নেই। আপনার মূল্যায়ন কী?

উত্তর: প্রতিভাবান তরুণদের জন্য যুব উন্নয়নের অংশ হিসেবে ফরটিজ গ্রুপের সঙ্গে ফরটিজ একাডেমির সম্পর্ক বাফুফের জন্য বড় একটা সুযোগ গড়ে দিল। তবে যুব ফুটবলে রাতারাতি উন্নতি করা সম্ভব নয়। এজন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হবে, টাকা-পয়সাও খরচ করতে হবে। তরুণদের জন্য অনেক সময় নিয়ে খাটতে হয়। আমরা যে কাজ শুরু করেছিলাম, তা ছিল সত্যি প্রশংসনীয়। আর যেসব বিদেশি কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তা তাদের যোগ্যতা আর দক্ষতার ভিত্তিতেই ছিল।

প্রশ্ন: সারাদেশের সব একাডেমিকে একসঙ্গে যুক্ত করছে বাফুফে। আপনি কি মনে করেন, আপনার টেকনিক্যাল কমিটি সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারবে?

উত্তর: ফেডারেশন একটি একাডেমি অ্যাক্রেডিটেশন স্কিম চালু করবে। বাংলাদেশে অনেক বেসরকারি একাডেমি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ফুটবলের বাজারের আওতায় নেই। এসব একাডেমির সঙ্গে ফেডারেশনের একটি অর্থবহ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। তৃণমূল, একাডেমি ও এলিট ফুটবলের মাঝে একটা সম্পর্কের বিস্তার ঘটাবে এই অ্যাক্রেডিটেশন স্কিম। এরমধ্যে ফেডারেশন একাডেমিগুলোকে স্বীকৃতি দেবে ও পুরস্কৃত করবে। এতে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবী ও কোচদের মর্যাদা বেড়ে যাবে। আর যেসব একাডেমি বাফুফের দেয়া শর্ত পূরণ করবে তাদের মধ্যে এক, দুই ও তিন তারকার স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। এই স্কিম ফুটবলে প্রতিভা খোঁজার জন্য কাজ করবে। বাফুফে ও ক্লাবগুলোকে আরও সহায়তার জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার সুযোগ সুবিধা বাড়াতে উৎসাহ প্রদান করবে এই প্রকল্প।

প্রশ্ন: আগেরবার নারী ফুটবলে বেশি কাজ করেছেন। এবারো কি একই রকম ভূমিকা রাখতে চান?

উত্তর: ফুটবলে টেকনিক্যালি উন্নয়নের জন্য সবসময়ই বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ দিকে মনোযোগ দেয়ার ইচ্ছা আমার ছিল। আর মেয়েদের ফুটবল এ মূহুর্তে বেশ গুরুত্ব¡পূর্ণ একটা অংশ। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার দিক বিবেচনায় মেয়েদের ফুটবলে অনেক সুযোগ রয়েছে। এ জন্য মেয়েদের ফুটবলে অনেক সময় দিতে হয়েছে এবং বেশ সাফল্য পেয়েছিলাম। তবে আমি বলব আমার সবসময়ই কাজের প্রতি একাগ্রতা রয়েছে। তাই ফুটবলের উন্নয়নের জন্য টেকনিক্যাল দিক দিয়ে আমি সর্বোচ্চটা প্রদান করব।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

উত্তর: আমরা ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যা করেছি তার মূল্যায়ন করবো প্রথমে। যা শিখলাম, তা মাথায় রাখতে হবে। এরপর এএফসি ও ফিফার সঙ্গে মিলিয়ে চার বছররে ফুটবল উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এসবই রুটিনমাফিক কাজ। তবে এসব কাজই শেষ কথা নয়। আরও অনেক কাজ করতে হবে আমাদের।

সান নিউজ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সালমান শাহ’র জন্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের...

দেশে তাপপ্রবাহের আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের তিন বিভাগের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর...

বিদ্যুৎপৃষ্টে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির মৃত্যু

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সেচ দিয়ে বন্যার পান...

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধানীর...

অনেক সচিব নাশকতার চেষ্টা করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেখ হাসিনা সরকারের দোসর অনেক সচিব এখনো বি...

পাহাড়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক : পার্বত্য খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সম...

ফলোঅনে ডুবল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক : চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারতের ৩৭৬ রান...

বনানীর হোটেলে মিলল বিদেশি মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর সুইট ড্রিম প্রাইভেট লিমিটেড নামের...

ফাঁসির আসামি ধামরাইয়ে গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক ফাঁসির আসামি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা