স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজের ট্রফি আগেই নিশ্চিত করেছিল। তবু বাড়তি গুরুত্ব ছিল তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে। কারন এই ম্যাচ জিতলেই পাওয়া যেত বিশ্বকাপ সুপার লিগের আরও ১০ পয়েন্ট, একইসঙ্গে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়েও ছয়ে উঠে যেতো পাকিস্তানকে টপকে টাইগাররা।
কিন্তু সিরিজের শেষ ম্যাচে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারতে হলো বাংলাদেশকে। স্বাগতিকদের করা ১৯২ রানের সংগ্রহ ৫৯ বল হাতে রেখেই টপকে গেছে আফগানিস্তান। এদিকে আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৩ ক্যাচ মিসের সুযোগে অপরাজিত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন।
স্বাগতিক বাংলাদেশ তাদের ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে মাত্র ১৯২ রানে অলআউট হয়েছে।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৩ বার জীবন পেয়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন । মাত্র ৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে তিনবার পঞ্চাশ পেরিয়ে তিনটিকেই সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তার অপরাজিত ১০৬ রানের ইনিংসে শেষ ম্যাচ থেকে ১০টি পয়েন্ট পেয়ে গেছে আফগানিস্তান।
যার সুবাদে এখন ৯ ম্যাচে ৭০ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগের টেবিলে চার নম্বরে উঠে গেছে আফগানিস্তান। শেষ ম্যাচটি হারলেও ১৫ ম্যাচে ১০ জয়ে পাওয়া ১০০ পয়েন্টের কল্যাণে ১ নম্বরেই রয়েছে বাংলাদেশ। কাছাকাছি থাকা ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ১৫ ম্যাচে ৯৫ পয়েন্ট। তিনে থাকা ভারতের ঝুলিতে আছে ৭৯ পয়েন্ট।
বাংলাদেশের ১৯২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে শুভ সূচনা পায় সফরকারী আফগানরা। রিয়াজ হাসানকে সাথে নিয়ে ৭৯ রান যোগ করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে শরিফুলের বলে অবশ্য সুযোগ এসেছিল। গুরবাজের ব্যাটের বাইরের কানায় লাগা বল চলে যায় কিপার ও স্লিপারের মাঝ দিয়ে। তখন মাত্র ১৩ রানে খেলছিলেন গুরবাজ। নিজের ডানদিকে ঝাঁপ দিলেই ক্যাচটি নিতে পারতেন মুশফিক। কিন্তু স্লিপে থাকা ইয়াসির রাব্বির আশায় হাতই বাড়াননি তিনি। এই জুটি ভাঙতে অপেক্ষা করতে হয় ১৬তম ওভার পর্যন্ত। সেটিও আবার দুইবারের চেষ্টায়।
সাকিবের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে টার্নে পরাস্ত হন রিয়াজ। বল আটকে যায় মুশফিকের গ্লাভসে। তিনি প্রথম দফায় স্ট্যাম্পে লাগাতে পারেননি। তখন ভেতরে ঢোকেনি রিয়াজের পা। দ্বিতীয়বার সুযোগ পেয়ে আলতো করে বেল ফেলে দিয়ে ৪৯ বলে ৩৫ রান করা রিয়াজের বিদায় নিশ্চিত করেন মুশফিক।
এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ পুরোপুরি নিয়ে যান রহমত শাহ ও গুরবাজ। এ দুজনের জুটিতে আসে ঠিক ১০০ রান।
এতে বড় অবদান মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর। শুরু থেকেই দারুণ বোলিং করা শরিফুল পরপর তিন ওভারে তৈরি করেন তিনটি সুযোগ। কিন্তু কোনোটিই ধরতে পারেননি মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ।
প্রথমে ইনিংসের ২৩তম ওভারে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ ছাড়েন মুশফিক। তখন গুরবাজ অপরাজিত ৬০ রানে।
এক ওভার পরে শরিফুলের বাউন্সারে পুল করে ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ দেন ৬১ রানে খেলতে থাকা গুরবাজ। সেই সহজ ক্যাচ যেন আরও সহজে হাত থেকে ফেলে দেন মাহমুদউল্লাহ।
সেখানেই শেষ নয়। ইনিংসের ২৭তম ওভারে আবারও সুযোগ পান গুরবাজ। তবে এবার তুলনামূলক কঠিন ছিল ক্যাচটি। শরিফুলের বলে গুরবাজের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকের মাথার ওপর দিয়ে। লাফিয়ে উঠে সেটিতে আলতো ছোঁয়া দিলেও গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি মুশফিক। উল্টো মাথায় আঘাত পান তিনি। যে কারণে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা।
তিন রানের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সুযোগ পেয়ে ঠিক পরের বলেই ছক্কা হাঁকান গুরবাজ। মনে হচ্ছিল রহমত-গুরবাজের জুটিতে সহজেই জিতে যাবে আফগানিস্তান। কিন্তু শেষ দিকে জয়ের জন্য ১৪ রান বাকি থাকতে মাঠে উপস্থিত দর্শকদের খানিক উল্লাসের উপলক্ষ এনে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
মিরাজের করা ৩৬তম ওভারের শেষ বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন ৪৭ রানের ইনিংস খেলা রহমত। এক ওভার পর সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি (২)। এতে খানিকটা বিলম্ব হলেও জয় পেতে কোনো সমস্যাই হয়নি আফগানিস্তানের।
আরও পড়ুন:রুশ-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা শুরু
শেষ পর্যন্ত গুরবাজ অপরাজিত থাকেন ৭ চার ও ৪ ছয়ের মারে ১১০ বলে ১০৬ রান করে।
আরও পড়ুন:গ্রেফতার হতে পারেন সুবহা
প্রসঙ্গত, বিশ্বের ৫ম ব্যাটার হিসেবে নিজের প্রথম তিন ফিফটিকেই সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন তিনি। এর আগে ডেনিস অ্যামিস, কামরান আকমল, কুইন্টন ডি কক (৫) ও ইমাম উল হক (৪) করে দেখিয়েছেন এমন অসামান্য কীর্তি।
সান নিউজ/ এইচএন