ক্রীড়া ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা উঠছে। আজ স্বাগতিক ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির ম্যাচ দিয়ে বেজে উঠবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ডামাডোল, যার মধ্য দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের পাঁচ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটবে। প্রায় এক মাসের ক্রিকেট-‘যুদ্ধ’ শেষ হবে আগামী ১৪ নভেম্বর দুবাইয়ের ফাইনালে। ক্রিকেট বিশ্ব পাবে টি-টোয়েন্টির নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আগে হতো দুই বছর পরপর, যার সর্বশেষটি হয়েছে ২০১৬ সালে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকেও সমান গুরুত্ব দিতে দুই বিশ্বকাপের মাঝে চার বছর বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো আইসিসি। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তারা। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি পিছিয়ে চলে যায় ২০২২ সালে, অস্ট্রেলিয়ায় হওয়ার কথা ছিলো সেটি। আর এ বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি হওয়ার কথা ছিলো ভারতে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের তোড়ে ভারত থেকে সেটি শেষ পর্যন্ত চলে যায় ওমান ও আমিরাতে। তবে বিশ্বকাপের আয়োজক থাকছে ভারতই।
ওমানের রাজধানী ও দেশটির প্রধান শহর মাসকাট। প্রায় ১৪ লাখ মানুষের এই নগরী পাহাড় এবং মরুভূমির জন্য বিখ্যাত। গলফ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী হওয়ায় মাসকাট বিদেশি ব্যবসায়ীদের আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট মানচিত্রে অখ্যাত মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতেই আজ শুরু বাইশ গজের যুদ্ধের মহাযজ্ঞ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রস্তুত ওমান, প্রস্তুত মাসকাটের আল আমেরাত স্টেডিয়াম।
ক্রিকেটে ওমানে পথচলা খুব বেশিদিনের না। দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ খিমজি। ভারত থেকে ওমানে গিয়ে থিতু হওয়া তার বাবা কানাক্ষী খিমজিই মূলত সে দেশে ক্রিকেটের বিজ বুনেছিলেন। বাবার স্বপ্নপূরণে ওমানে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির উদ্যোগ নেন পঙ্কজ। ২০০৮ সালের জুলাইয়ে দেশটির রাজধানী শহর মাসকাটের দক্ষিণ-পূর্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় ৫ দশমিক দুই মিলিয়ন ইউএস ডলার নির্মাণব্যায়ে প্রায় চার বছর পর শেষ হয় স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ। ২০১২ সালের অক্টোবরে গ্রাউন্ডের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনে দুই মাস পর শুরু হয় ক্রিকেট ম্যাচ। এই স্টেডিয়ামের মিনিস্ট্রি টার্ফ-ওয়ানে টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের অনুমতিও দিয়ে রেখেছে আইসিসি।
এখন পর্যন্ত ২৪টি টি-টোয়েন্টি এবং ১২ ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে ওমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এবার তো বিশ্বকাপ আয়োজনের ছাড়পত্র পেয়েছে আল আমেরাত। বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই ভেন্যুতে। গ্যালারিতে দর্শক ধারণ ক্ষমতা চার হাজার। যার অধিকাংশ শুধু বিশ্বকাপের জন্য অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।
এমনকি এই বিশ্বকাপের জন্য নতুন করে বসানো হয়েছে ভিআইপি গ্যালারি, প্রেস বক্স, কমেন্ট্রি বক্স, ইলেক্ট্রনিক স্কোরবোর্ডের মতো অত্যাবশ্যকীয় সব কিছু। ওমানের জন্য ঐতিহাসিক একক্ষণ। আর এই ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত আছে বাংলাদেশের নামও। স্টেডিয়ামের ১৫ জন মাঠকর্মী বাংলাদেশের। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করেছেন এই স্টেডিয়াম।
যদিও আয়োজক হয়ার পর প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিলো ওমানের মাঠ আর তাদের প্রস্তুতি। তিন মাস আগেও ওমানের বিশ্বকাপ ভেন্যু আল আমেরাত স্টেডিয়ামকে মনে হতো গ্রামের পাশের কোনো মাঠ। যেখানে পার্কের মতো বসার জন্য বেঞ্চ বসানো হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে, এ কেমন বিশ্বকাপ ভেন্যু! যেখানে নির্দিষ্ট কোনও ক্রিকেট স্টেডিয়াম নেই। শুধু মাঠ রয়েছে। বিশ্বকাপ আয়োজন করার মতো কাঠামোও একেবারেই নেই।
সব শঙ্কা দূরে সরিয়ে বিশ্বকাপের আগে নিজেদের প্রস্তুত করে ফেলেছে ওমান ক্রিকেট বোর্ড। আধুনিক স্টেডিয়ামগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এখনো কিছুটা পিছিয়ে থাকবে বটে, তবে মাসকাটের আল আমেরাত স্টেডিয়াম মুগ্ধ করবে যে কাউকে।
মাসকাটের এই মাঠে যে ২৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে সেখানে দলীয় সর্বোচ্চ যেমন ২১০ রান দেখা গেছে, তেমনি ৬৪ রান গুটিয়ে যাওয়ার মতোও ঘটনা আছে। তবে এবারের বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামটিতে বড় রানের ম্যাচ দেখা যাবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। যেখানে টার্গেট টপকাতে নামলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সান নিউজ/এফএআর