ক্রীড়া প্রতিবেদক: ইহ জগত থেকে পর জগতে পাড়ি জমিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ ও বরেণ্য ক্রিকেট লেখক জালাল আহমেদ চৌধুরী। দীর্ঘদিন রোগের সঙ্গে লড়াই করে আজ বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
জালাল চৌধুরীর মৃত্যুতে ক্রিকেট অঙ্গণে শোকের বার্তা বইছে। সে মিছিলে শামিল হলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোরতাজা। তিনি নিজের ফেসবুকে লেখেছেন, যাদের হাত ধরে ক্রিকেট জীবন শুরু করা তাদের বিদায়গুলো এভাবে দেখা খুবই কঠিন।
তিনি লেখেন, স্যার আপনার আন্ডারে খেলা, আপনার আদেশ, ড্রেসিং রুমে আপনার স্থির থাকা, আপনার লেখা এসব কিছুই এখন স্মৃতি হয়ে গেল। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আপনার অবদান যারা দেখেছে তারা আজীবন মনে রাখবে। অসংখ্য খেলোয়ারের গুরু ছিলেন আপনি আর হয়েও থাকবেন।
ওপারে ভালো থাকবেন স্যার
আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন
আমিন।
উল্লেখ্য, জালাল চৌধুরী গত ১ সেপ্টেম্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রথমবার আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর আগে বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁর কাশি ছিলো। সেখানে চিকিৎসা শেষে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তিনি বাড়ি ফেরেন।
৭৪ বছর বয়সী জালাল চৌধুরীকে ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগে গত ১৫ই সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। গত শুক্রবার আবারও শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করতে হয়। ভেন্টিলেশনে দিতে হয় জালাল আহমেদ চৌধুরীকে। তাঁর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কমে গিয়েছিল। ফুসফুসের সংক্রমণও বেড়ে গিয়েছিলো। এর পর থেকে প্রতিদিন তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকেই গেছে। কিডনি ও হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা দ্রুত কমে যাচ্ছিলো। রক্তচাপের মাত্রাও ছিলো নিম্নমুখী। চিকিৎসকেরা তবু হাল ছাড়েননি, চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু আজ তিনি ছিন্ন করলেন সব বন্ধন।
দেশের অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার জালাল আহমেদ চৌধুরীর হাতে গড়া। দেশের ক্রিকেটের দিগন্তরেখা বদলে দিয়েছিল যে সাফল্য, সেই ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি বিজয়ী দলটিও তাঁর হাতেই গড়া। প্রাথমিক প্রস্তুতি তাঁর অধীনেই হয়েছিলো। পরে কোচ হিসেবে যোগ দেন গর্ডন গ্রিনিজ।
ষাট ও সত্তরের দশকে ঢাকা ক্রিকেট লিগে খেলেছেন জালাল আহমেদ চৌধুরী। এরপর শুরু করেন ক্রিকেট কোচিং ও সাংবাদিকতা। আশির দশকে ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমসে কাজ করেছেন তিনি। ছিলেন স্পোর্টস ইনচার্জ। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট কোচ হিসেবে নিয়েছেন উচ্চতর প্রশিক্ষণ। মোহামেডান, কলাবাগান প্রভৃতি দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। বেশ কয়েকবার কোচ ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলেরও। দেশের ক্রিকেটের প্রাথমিক দিনগুলোতে যে কয়জন ক্রিকেট কোচ নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, জালাল আহমেদ চৌধুরী তাঁদের অন্যতম। আম্পায়ারিংও করেছেন তিনি।
দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট লেখক ছিলেন জালাল চৌধুরী। প্রায় সব কটি জাতীয় দৈনিকে বিভিন্ন সময় তাঁর লেখা সমৃদ্ধ করেছে দেশের ক্রিকেট সাংবাদিকতাকে। প্রথম আলোতে লিখেছেন শুরু থেকেই। দেশের ক্রিকেটবিষয়ক যেকোনো ঐতিহাসিক তথ্যের সূত্র হয়ে ছিলেন তিনি। ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই লেখার অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো তাঁর। জীবনের শেষ বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন তিনি। অনেক বিষয়েই লিখতেন মন খুলে।
বিপত্নীক জালাল আহমেদ চৌধুরীর দুই সন্তানই প্রবাসী। আজিমপুরের একটি ফ্ল্যাটে একাই বসবাস করতেন এই বরেণ্য ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। তাঁর জানাজা আজ যোহরের নামাজের পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। আসরের নামাজের পর আরও একটি জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে আজিমপুর কবরস্থানে।
সান নিউজ/এফএআর