নিজস্ব প্রতিবেদক: নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভিন্ন ভিন্ন অভিনন্দন বার্তায় তারা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনা এই জয়ে খেলোয়াড়, কোচ ও ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৯৩ রানেই থেমে যায় সফরকারীদের সংগ্রহ। সেক্ষেত্রে ৯৪ রানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯ ওভার ১ বলে ৯৪ রান সংগ্রহ করে ৬ উইকেটে জয় পায় টাইগারবাহিনী।
এর আগে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) মিরপুরের শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে সফরকারীরা। চতুর্থ ম্যাচে জিতলে সিরিজ জয়ের জন্য পঞ্চম ম্যাচটি হতো ফাইনাল। সে লক্ষ্য রেখেই সামনে এগোতে থাকলে আজকের ম্যাচের অন্যতম নায়ক নাসুম আহমেদের কাছে ধরাশয়ী হয় দলটি। নাসুম ৪ ওভারে ১০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
ব্যাটিং করতে নেমে প্রথমেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। শুরুতেই লিটন দাস ১১ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফিরেন। লিটন দাসের পথ অনুসরণ করেন সাকিব আল হাসান মাত্র ৮ বলে ৮ রানে এজাজ প্যাটেলের বলে আউট হন। শূন্য রানে ঘরে ফিরেন মুশফিকুর রহিম। তিনিও ৩ বল খেলে এজাজ প্যাটেলের শিকার হন। ৩৫ বলে ২৯ রান করে রান-আউট হয়েছেন মুহাম্মদ নাঈম।
এ সময় দলের হাল ধরেন রিয়াদ ও আফিফ। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। রিয়াদ ৪৮ বলে ৪৩ রান করে দলকে নেতৃত্ব দেন। সঙ্গে ছিলেন আফিফ হোসেন ১০ বলে ৬ রানে।
গত আড়াই মাসে ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। তাতে মাত্র ৩টিতে হেরেছে তারা। ৯টি ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় করেছে তিনটি।
কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে আcn বাংলাদেশ দল। ঘরের মাঠে ফিরেই ইতিহাস রচনা করে টাইগাররা। প্রথমারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় অজিদের। আরও একটি ইতিহাস রচনা হলো আজ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রথমবারের মতো কুড়ি ওভারের সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল। ৫ ম্যাচের মধ্যে খেলা হয়েছে ৪টি। তাতে বাংলাদেশ জিতেছে তিনটি ও নিউজিল্যান্ড একটি। ১০ সেপ্টেম্বর সবশেষ খেলাটি শেরে বাংলাতেই।
কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ শুরু হয় গত ১ সেপ্টেম্বর। প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখিয়ে জেতে স্বাগতিকরা। গত ৫ সেপ্টেম্বর সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ জিতলে ইতিহাস লেখা হতো সেদিনই, তবে অপেক্ষা বাড়লেও আক্ষেপে পুড়তে হয়নি স্বাগতিকদের। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে কিউইদের ৯৩ রানে বেধে দিয়ে ৯৪ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ৬ উইকেটের জয়। এতেই লেখা হয়েছে ইতিহাস!
এর আগে মাত্র ৯৩ রানে থেমে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চতুর্থ ম্যাচে মাত্র ৯৩ রানে ১৯ ওভার ৩ বলে অল আউট হয়ে যায় দলটি।
নিউজিল্যান্ডকে ৯৩ রানে বেঁধে ফেলার অন্যতম নায়ক নাসুম আহমেদ। তিনি ৪ ওভারে ১০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। প্রত্যাবর্তনের গল্প অনেকবার লিখেছেন নাসুম আহমেদ। চলতি বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে ২৬ বছর বয়সে বাংলাদেশ জার্সিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। এই বয়সে বাংলাদেশি ক্রিকেটারের মাথায় অভিষেক ক্যাপ, বিস্ময়করই বটে!
নাসুম হয়তো বিস্ময় জমিয়ে রেখেছেন আরও। তবে মাত্র ১৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে বল হাতে যে আলোর প্রদীপ শিখা জ্বালিয়েছেন তিনি, তাতে আলোকিত গোটা বাংলাদেশ ক্রিকেট। মাত্র ১৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারেও কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়েতে এক ম্যাচ পর বাদ পড়েন একাদশ থেকে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফিরেই দেখিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ (বুধবার) রীতিমতো আগুন জ্বালালেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সে আগুনে পুড়ল কিউইরা।
নাসুমের ক্যারিয়ার সেরা ১০ রানে ৪ উইকেটের বিধ্বংসী বোলিং তোপে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি সফরকারীরা। এতে অলআউট হওয়ার আগে তাদের ইনিংস থেমেছে মাত্র ৯৩ রানে। ৫ ম্যাচের সিরিজের আগের ৩ ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দলের এই ম্যাচ জিতে সিরিজ জিততে প্রয়োজন ছিলো ৯৪ রান। নাসুমের সঙ্গে এই ম্যাচে পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও নেন সমান ৪ উইকেট।
মিরপুরের শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে ব্ল্যাকক্যাপসরা। তাদের শুরুটা একেবারেই ভালো হতে দেননি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কৌশল বদলে শেখ মেহেদীর পরিবর্তে নাসুমকে দিয়ে ইনিংস শুরু করেন তিনি। ইনিংসের শুরুর বল থেকেই গ্রিপ পেয়েছেন তিনি। এতে বাড়তি বাউন্সের সঙ্গে টার্নও ছিল ভয়ঙ্কর। তার ফায়দা ঠিকই তুলে নিয়েছেন নাসুম।
প্রথম ওভারেই রাচিন রবীন্দ্রকে ফিরেয়ে শুরু। মেডেন ওভারে কিউই ওপেনারকে তুলে নেন তিনি। এতে রানের খাতা খোলার আগে সাজঘরে রাচিন। এক ওভার না যেতেই আবার আঘাত হানেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এবার ফেরালেন ফিন অ্যালেনকে। নাসুমের লেন্থ বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন সাইফউদ্দিনের হাতে। ৮ বলে ১২ রান করেন অ্যালেন।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ২২ রান তুলতে পারা সফরকারীরা পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ইনিংসের ১১তম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে সফল হন মেহেদীও। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া টম লাথামকে বোকা বানান দারুণ বলে। স্টাম্পিং হয়ে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন কিউই অধিনায়ক। উইল ইয়াং একপ্রান্ত আগলে রাখলে অপর প্রান্ত থেকে তার সতীর্থরা আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আবার বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন নাসুম। তৃতীয় ওভারে বল হাতে দেন ৪ রান। নিজের স্পেলের শেষ ওভার হাত ঘুরাতে এসে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। পরপর দুই বলে ফেরান হেনরি নিকোলস (১) ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে (০)। হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল এই স্পিনারের সামনে তবে নতুন ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেলের লাফিয়ে ওঠা বলটি ব্যাট না বাড়িয়েই ছেড়ে দেন। এতে চার ওভারে দুই মেডেনসহ মাত্র ১০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন নাসুম।
এরপর দৃশ্যপটে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের ১৬তম ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই ব্লান্ডেলকে সাজঘরে ফেরান তিনি। মিডঅনে থাকা নাঈম শেখের দারুণ ক্যাচে ১০ বলে মাত্র ৪ রান করে আউট হন এই ব্যাটসম্যান। একই ওভারের শেষ বলে কোল ম্যাকক্যাঞ্চি নিজের বলে নিজেই দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাজঘরের পথ ধরান মুস্তাফিজ।
পরে ৪ রানে থাকা এজাজ প্যাটেলকে আউট করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তখনও একপ্রান্ত থেকে লড়াই চালিয়ে যান ইয়াং। ইনিংসের শেষ ওভারে তাকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন মুস্তাফিজ। ৪৮ বলে ৪৬ রানের লড়াকু ইনিংস আসে ইয়াংয়ের ব্যাট থেকে। পরের বলেই মুস্তাফিজের শিকার হন ব্লেয়ার টিকনার। এতে অলআউট হওয়ার আগে নিউল্যান্ডের ইনিংস থেমেছে মাত্র ৯৩ রানে। ৩ ওভার ৩ বল হাত ঘুরিয়ে ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন মুস্তাফিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: নিউজিল্যান্ড: ১৯.৩ ওভারে ৯৩/১০ (উইলি ইয়াং ৪৬, টম ল্যাথাম ২১, ফিন অ্যালান ১২; নাসুম আহমেদ ৪/১০, মোস্তাফিজুর রহমান ৪/১২)।
বাংলাদেশ: ১৯.১ ওভারে ৯৬/৪ (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪৩*, মোহাম্মদ নাঈম ২৯; এজাজ প্যাটেল ২/৯)।
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
সান নিউজ/এফএআর