ক্রীড়া ডেস্ক: প্রথমার্ধে যেন একাই খেলেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল লেভান্তে। ১২ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে এগিয়েও গেল। কিন্তু বদলি নেমে দুইবার সমতা ফিরিয়ে রিয়ালকে ম্যাচে রাখলেন ভিনিসিউস জুনিয়র। শেষটায় ১০ জন নিয়ে খেলেও কার্লো আনচেলত্তির দলকে রুখে দিল লেভান্তে।
লা লিগায় রোববার রাতে রোমাঞ্চকর ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছে। শুরুতেই রিয়ালকে এগিয়ে নিয়েছিলেন গ্যারেথ বেল। লেভান্তের তিন গোলদাতা রজের মার্তি, হোসে কাম্পানা ও রবের পিয়ের।
৮৭তম মিনিটে গোলরক্ষক আইতর ফের্নান্দেস সরাসরি লাল কার্ড দেখলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় স্বাগতিক লেভান্তে। ততক্ষণে সব বদলি ব্যবহার করে ফেলায় ডিফেন্ডার রুবেন ভেসো দাঁড়ান গোলপোস্টের নিচে। কিন্তু বাকি সময়ে একটি শটও লক্ষ্য রাখতে পারেননি রিয়ালের কেউ।
পুরো ম্যাচে প্রায় ৬১ শতাংশ সময় বল দখলে রাখা রিয়াল গোলের জন্য শট নেয় মোট ২০টি, এর ৫টি ছিল লক্ষ্যে। আর লেভান্তের ৮ শটের ৪টি লক্ষ্যে ছিল। পঞ্চম মিনিটে প্রথম আক্রমণেই এগিয়ে যায় রিয়াল। অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে নিজেদের অর্ধ থেকে আসা বল নিয়ন্ত্রণে নেন করিম বেনজেমা। এগিয়ে আসা দুই ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে ডি-বক্সে খুঁজে নেন অরক্ষিত বেলকে। চলতি বলেই দারুণ ফিনিশিংয়ে বাকিটা সারেন ওয়েলস ফরোয়ার্ড।
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বরের পর এই প্রথম লা লিগায় গোল পেলেন তিনি।
একের পর এক আক্রমণে লেভান্তের রক্ষণকে দারুণ চাপে রাখে রিয়াল। প্রথমার্ধে আরও ১০টি শট নেয় গোলের জন্য। কিন্তু এর একটিও ছিল না লক্ষ্যে। ৩০তম মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে বুলেট গতির শট নেন ডাভিড আলাবা। খুব একটা দূর দিয়ে যায়নি তার শট।
প্রতি আক্রমণ থেকে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি লেভান্তে। প্রথমার্ধে থিবো কোর্তোয়াকে তেমন কোনো পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। প্রথমার্ধে স্রেফ দুটি শট নিতে পেরেছিল লেভান্তে। কোনোটিই ছিল না লক্ষ্য। তারাই দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটে সমতায় ফেরে।
পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে রজের মার্তি অনেকটা কোর্তোয়া বরাবর শট নিয়ে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে বসেছিলেন। তার ভাগ্য ভালো, ফেরাতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক।
তার গায়ে লেগে বলের গতি কিছুটা কমলেও ধীরে ধীরে অতিক্রম করে গোললাইন। বিরতির পর তখন খেলা হয়েছে কেবল ২৮ সেকেন্ড।
দ্বিতীয়ার্ধে যেন সম্পূর্ণ বদলে যায় লেভান্তে। আক্রমণাত্মক ফুটবলে চেপে ধরে রিয়ালকে। ৫৬তম মিনিটে চমৎকার এক গোলে এগিয়েও যায় স্বাগতিকরা। হোর্হে দে ফ্রুতোসের চমৎকার ক্রসে হোসে কাম্পানার দুর্দান্ত ভলি জড়ায় জালে। কিছুই করার ছিল না কোর্তোয়ার।
পিছিয়ে পড়ার পর তিনটি পরিবর্তন আনেন রিয়াল কোচ আনচেলত্তি। বেল, এদেন আজার ও ইসকোর জায়গায় মাঠে নামেন মার্কো আসেনসিও, ভিনিসিউস ও রদ্রিগো।
রিয়ালের আক্রমণের গতি বাড়ে লুকাস ভাসকেসের জায়গায় রাইট ব্যাক দানি কারভাহাল নামার পর। চোট থেকে সেরে ওঠার পর এই প্রথম মাঠে নামলেন তিনি।
৭৩তম মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে সমতা ফেরান ভিনিসিউস। নিজেদের ডি-বক্সের
কাছে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কারভাহাল খুঁজে নেন কাসেমিরোকে। ডিফেন্ডারের পেছন থেকে ছুটে গিয়ে তার বাড়ানো বল ধরে এগিয়ে যান ভিনিসিউস। সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে আড়াআড়ি শটে বল জালে পাঠান তিনি।
টানা দুই ম্যাচে গোল পেলেন ভিনিসিউস। আলাভেসের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জেতা ম্যাচেও একটি গোল করেছিলেন তিনি।
সমতা ফেরানোর স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৭৯তম মিনিটে আবার এগিয়ে যায় লেভান্তে। এনিস বারধির ফ্রি কিক আলাবার মাথায় লেগে চলে যায় গোলমুখে। রবের পিয়ের আলতো টোকায় সারেন বাকিটা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর এই প্রথম গোল পেলেন তিনি।
৮২তম মিনিটে স্কোরলাইন হয়ে যেতে পারত ৪-২। থিবো কোর্তোয়াকে পেরিয়ে গেলেও ফাঁকা জালে বল পাঠাতে পারেননি আলেহান্দ্রো কানতেরো। পোস্ট লেগে ফেরে বল।
পরের মিনিটে রিয়ালের দুটি চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ব্যবধান ধরে রাখে লেভান্তে। কিন্তু ৮৫তম মিনিটে দারুণ ফিনিশিংয়ে আবার সমতা আনেন ভিনিসিউস। দুরূহ কোণ থেকে এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের শট পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে ঠিকানা খুঁজে নেয়।
দুই মিনিট পর নিশ্চিত গোল ঠেকাতে প্রায় ৪০ গজ দূরে এগিয়ে এসে হ্যান্ডবল করে রদ্রিগোকে থামিয়ে লাল কার্ড দেখেন লেভান্তে গোলরক্ষক ফের্নান্দেস। আর গোলরক্ষক নামানোর সুযোগ না থাকায় পোস্টের নিচে দাঁড়ান পর্তুগিজ সেন্টার ব্যাক ভেসো।
তাকে তেমন কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি বেনজেমা-ভিনিসিউস-রদ্রিগো-আসেনিসিওরা। লেভান্তের বিপক্ষে ইদানিং বেশ ভুগছে রিয়াল। সবশেষ চার ম্যাচে দলটির বিপক্ষে তাদের জয় কেবল একটি। দুটিতে হার, এবার হলো ড্র।
২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত দুই নম্বরে উঠে এসেছে রিয়াল। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল পার্থক্যে পিছিয়ে তিনে বার্সেলোনা। টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে শিরোপাধারী আতলেতিকো
সান নিউজ/এমএম