নিজস্ব প্রতিবেদক: একমাত্র বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ টানা তিন অলিম্পিকে খেলেছেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ কীর্তি রয়েছে তার। তিনি সাতারু ডলি আক্তার। টানা তিন অলিম্পিক খেলায় তার পরিচয় ছিলো সাঁতারু হিসাবে। তবে এখন তার নতুন পরিচয় ভলিবল খেলোয়াড়।
নতুন পরিচয়েও বেশ স্বাচ্ছন্দ্য রাজবাড়ীর এই মেয়ের, ‘সাঁতারু ডলিই আমার মূল পরিচয়। সাঁতার আমার ধ্যান জ্ঞান ছিল। আর ভলিবল নেশা। সাঁতারের পাশাপাশি আমি ভলিবল খেলতাম। ২০১৬ সালের দিকে সাঁতার ছাড়ার পর পুরোপুরি ভলিবলে সময় দিচ্ছি।’
ভলিবলে জাতীয় দলেও খেলেছেন ইতোমধ্যে। ২০১৯ কাঠমান্ডু সাফে বাংলাদেশ ভলিবল দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
সত্তর আশির দশকে আব্দুস সাদেক, কাওসার আলী, প্রতাপ শঙ্কর হাজরারা ফুটবল হকি দুটোতেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হাল আমলে পুরুষদের উভয় ডিসিপ্লিনে অংশগ্রহণ কম হলেও কয়েকজন নারী ক্রীড়াবিদ রয়েছেন যারা দুটো ডিসিপ্লিনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
বছর পাঁচেক আগে সাঁতারকে বিদায় জানালেও ডলির সাঁতারের কীর্তি শুধু সাঁতারেই বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে দিয়েছে বিশেষ স্থান। ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে সর্বকনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ডলি। তার মাত্র ১৫ বছর বয়সে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ এখনো বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ অলিম্পিয়ানের রেকর্ড।
সিডনির পর বেইজিং অলিম্পিকেও খেলেছেন বৃহত্তর ফরিদপুরের এই মেয়ে। টানা তিন অলিম্পিক খেলার কীর্তি নেই কোনো বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদের।
এই অর্জন এখনো তাকে রেখেছে সবার স্মরণে, ‘বাংলাদেশ থেকে তো অলিম্পিকে পদক পাওয়ার আশা তখন ছিল না। এরপরও ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকে আমি আমার হিটে প্রথম হয়েছিলাম। সেটা খুব স্মরণীয় আমার জন্য। অলিম্পিক আসলে মানুষ আমাকে স্মরণ করে তখন নিজের মধ্যে ভিন্ন ভালোলাগা কাজ করে’ -বলেন ডলি। তিনি তিনবার অলিম্পিক খেললেও দেশের পতাকা বহনের সুযোগ পাননি। ২০১২ লন্ডন গেমসে সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর অবশ্য পতাকা বহনের গৌরব অর্জন করেন।
অলিম্পিকে অংশ নেয়া ছাড়াও সাফে রয়েছে একাধিক পদক। জাতীয় পর্যায়ে রয়েছে অসংখ্য রেকর্ড। ক্রীড়াঙ্গনের অনেকের ধারণা কিছুটা অভিমানেই সাঁতার ছেড়েছেন ডলি। তবে তার কন্ঠে কোনো অভিমান আক্ষেপ শোনা গেল না, ‘সাফে স্বর্ণ পাইনি। এটা একটু অপূর্ণতা রয়েছে। সাঁতার আমাকে অনেক দিয়েছে। অলিম্পিকে তিন বার অংশগ্রহণ যেমন রেকর্ড, তেমনি ৮ম বাংলাদেশ গেমসে রেকর্ড সহ নয় স্বর্ণ জয়ের কৃতিত্ব এখনো আমার দখলে।’
বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হলেও ভলিবল ভালোই উপভোগ করছেন। আরো কয়েক বছর ভলিবল খেলতে চান, ‘এখনো ফিট ও ফর্মে রয়েছি। যত দিন পারি খেলে যাব।’
সাঁতার ছেড়ে ভলিবলে মনোযোগ দিলেও এখনো নিজের সংসার শুরু করেননি ডলি। ভলিবল ক্যারিয়ার শেষ করেই এ নিয়ে ভাবতে চান, ‘এখনো খেলার মধ্যেই আছি। খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করেই এটা নিয়ে ভাবব।’
সাননিউজ/এএসএম