ক্রীড়া ডেস্ক : মেসির হাতেই উঠেছে কোপার শিরোপা। টানা ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে মেসির হাত ধরেই শিরোপা জিতে আর্জেন্টিনা। শিরোপা অর্জনে পেলে-ম্যারাদোনার পাশাপাশি নিজের নাম লিখে নিয়েছেন এই বিশ্বসেরা ফুটবলার।
উত্তেজনাকর কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচে ১-০ গোলে ব্রাজিলকে হারায় আর্জেন্টিনা। এর আগে বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ছটায় ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নামে দুদল।
স্বাগতিক হওয়াতে কিছুটা ফেভারিট হয়েই ম্যাচ শুরু করে ব্রাজিল। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগে ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর খেলা অনিশ্চিত থাকলেও শুরু থেকেই মাঠে নামে রোমেরো। আক্রমণ ভাগেও শুরু থেকেই মাঠে থাকে ডি মারিয়া।
ম্যাচের ২১ মিনিটে মধ্য মাঠ থেকে রদ্রিগো ডি পলের বাড়ানো শটে গোলবারের নিচে থাকা এন্ডারসনকে প্রতিহিত করে ব্রাজিলের জালে বল পাঠায় ডি-মারিয়া। এতে ১-০ গোলে লিড নেয় আর্জেন্টিনা। এরপর চলতে থাকে আক্রমন-পাল্টা আক্রমণ। ম্যাচে সমতা ফিরাতে মরিয়া হয়ে উঠে ব্রাজিল, আর ব্যবধান বাড়াতে মেসি-ডি মারিয়ারা।
২৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ব্রাজিলের গোল বারে আবারো কিক মারেন ডি-মারিয়া। তবে এবার থিয়াগো সিলভা প্রতিহত করায় দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় না আকাশী সাদারা।
৩২ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করায় ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল। তখন হলুদ কার্ড দেখতে হয় আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার পারাদেসকে। নেইমার ফ্রি-কিকটি নিলেও আর্জেন্টিনার রক্ষণদেয়ালে বলটি আটকে যায়। এ যাত্রাতেও ম্যাচে সমতা ফেরাতে পারে না সেলেসাওরা।
ম্যাচের ৩৬ মিনিটের মাথায় পায়ে আঘাত পেয়ে মাঠের বাইরে পড়ে থাকতে দেখা যায় একমাত্র গোলদাতা ডি-মারিয়াকে। এতে খেলতে না পারার শঙ্কা থাকলেও পরে শঙ্কামুক্ত হয়ে আবারও মাঠে নামেন ডি মারিয়া।
এরপর দু’দলের মাঝেই চলতে থাকে বল দখলের লড়াই। ৪২ মিনিটে আক্রমণে যায় ব্রাজিল। তবে মার্টিনেজের সেভে তখনও মাঠে এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনা। ৪৩ মিনিটে আবারও আক্রমণে যায় সেলেসাওরা। তবে এবারও রক্ষণভাগকে প্রতিহত করতে পারেনি ব্রাজিল। ম্যাচের প্রথম কর্ণার পেয়েও গোল ছাড়াই প্রথমার্ধ কাটাতে হয় ব্রাজিল সেনাদের।
বিরতির পর আবারও মাঠে গড়ায় শিরোপা লড়াইয়ের খেলা। এবারও চলতে থাকে বল দখলের লড়াই। ব্রাজিল মরিয়া হয়ে ম্যাচে ফিরতে লড়াই চালিয়ে যায়।
ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ফের আক্রমণে যায় ব্রাজিল । তবে সে যাত্রাও নেইমারকে প্রতিহত করেন অ্যাকুনা। ৫০ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে আবারও আক্রমণের চেষ্টা চালায় ব্রাজিল। প্রতিহত করে লে সেলসো। তবে নেইমারকে আঘাত করায় হলুদ কার্ড দেখতে হয় তাকে।
৫১ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার জালে বল পাঠায় ব্রাজিল । তবে সাইডবার থেকে রেফারির অফসাইড কলে সে যাত্রায় রক্ষা পায় মেসিরা। ৫৪ মিনিটের মাথায় আবারও আক্রমণে যায় ব্রাজিল। ডান প্রান্ত থেকে করা রিচার্ডসনের কিক ঠেকিয়ে দেন এমি মার্টিনেজ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণে থাকে ব্রাজিল। সমতায় ফেরার লড়াইয়ে বারবারই আক্রমণ করতে থাকে আর্জেন্টিনার গোলবারে। তবে লিড টিকিয়ে রাখতে কিছুটা রক্ষণাত্মকই খেলতে দেখা যায় আলিবিসেলেস্তেদের। এ সময় বলের দখলটাও বেশি থাকে সেলেসাওদের।
ম্যাচের ৬০ মিনিটের মাথায় পাল্টা আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা । রদ্রিগো ডি পল কে অবৈধ বাধা দেয়ায় ফ্রি-কিক পায় তারা। তবে ফ্রি কিক থেকেও কোনো ফল পায় না দলটি।
৬২ মিনিটে ম্যাচে প্রথমবারের মত পরিবর্তন আনে দু’দল। লে সেলসাও এর জায়গায় খেলতে নামে ট্যাগলিফিয়াকো। আর ব্রাজিল আক্রমণভাগে এভারটনের বদলী হিসাবে মাঠে নামে ভিনিসিয়াস।
৬৪ মিনিটে আবারো আক্রমণে যায় আকাশী-সাদারা। তবে রক্ষণভাগের প্রতিরোধে গোল শূন্যই থাকতে হয় মেসির। ৬৫ মিনিটে আবারও আক্রমণে যেতে চাইলে মেসিকে অবৈধভাবে বাধা দেয় ব্রাজিল ডিফেন্ডার লোদী।
৭০ মিনিটে ফের আক্রমণে যায় ব্রাজিল । ডি-বক্সে পাকুয়েতা আর ট্যাগলিফিয়াকোর লড়াইয়ে হার মানতে হয় ব্রাজিলকেই।
৭২ মিনিটে ট্যাগলিফিয়াকোকে বাধা দেয়ায় হলুদ কার্ড দেখে পাকুয়েতা। এরপর আর্জেন্টিনাকে আবারও আক্রমণে দেখা যায়। এভাবে চলতে থাকে দু’দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ।
৮০ মিনিটে আক্রমণে যাওয়ার সময় নেইমারকে বাধা দেয় ওতামেন্ডি। তখন দু’দলের মাঝে কিছুটা তর্ক বাঁধে। হলুদ কার্ড দেখতে হয় আর্জেন্টাইন ডিফান্ডারকে।
৮২ মিনিটে ব্রাজিল কর্নারের মাধ্যমে আক্রমণে গেলে সে যাত্রায় রক্ষা হয় আর্জেটিনার। তবে কর্নার কিকেও গোলের দেখা পায় না ব্রাজিল।
এরপর টানা আক্রমণে যেতে থাকে ব্রাজিল । ৮৬ মিনিটে নেইমারের ফ্রি-কিকে ক্যাসিমিরোর নেয়া শটে গোল পাওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয় আর্জেনটাইন গোল রক্ষক মার্টিনেজ।
এরপর ৮৭ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। গোল পাওয়ার সুযোগ থাকলেও এ পর্যায়ে গোল অর্জনে ব্যর্থ হয় মেসি। ৮৯ মিনিটে ফের আক্রমণে যায় ব্রাজিল। সে যাত্রায় আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার রক্ষা করলেও তাকে হলুদ কার্ড দেখতে হয়।
ম্যাচের ৯০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনা। শুরু হয় অতিরিক্ত সময়ের খেলা। ৯২ মিনিটে আর্জেন্টিনা আক্রমণে গেলে তা প্রতিহত করে ব্রাজিল কিপার এডারসন। এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে শেষ হয় ম্যাচ। আর মেসির হাত ধরেই রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস।
সান নিউজ/এনএম