ক্রীড়া ডেস্ক : চলতি কোপা আমেরিকায় মেসি আর ডি পল একে অপরকে পাস দিয়েছেন ৫৩টা। এতো বেশি পাস আদান-প্রদান হয়নি আর্জেন্টাইন আর কারো মাঝেই। তবে কোথায় একটা কমতি ছিলো যেন। দুজনের কেউই কারও গোলে যোগান দেননি এতদিন। সে অপূর্ণতাটা ঘুচেছে আজ। তাদের উপর ভর করে আর্জেন্টিনা ইকুয়েডরকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে। পৌঁছে গেছে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে।
ম্যাচের শুরুটা ভালো হয়নি মেসিদের। প্রথমার্ধে একগাদা গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে আর্জেন্টিনা। সবচেয়ে সহজটা নষ্ট করেছিলেন মেসি। ২২ মিনিটে ইকুয়েডরের একটা ব্যাকপাস পেয়ে গিয়েছিলেন ফাঁকাতেই। সামনে ছিলেন শুধু গোলরক্ষক। তাকে পরাস্তও করেছিলেন। কিন্তু আর্জেন্টাইন অধিনায়কের শট গিয়ে প্রতিহত হয় গোলপোস্টে।
এর আগে লাওতারো মার্টিনেজ পেয়েছেন দুটো সুযোগ। একটায় শট করেছিলেন গোলরক্ষক বরাবর, অন্যটা ঠিকঠাক আয়ত্বেই আনতে পারেননি তিনি। বিরতির আগে আরও একটা সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু মেসির করা ফ্রি কিক থেকে প্রথমে দারুণ এক হেড দিয়েছিলেন নিকোলাস গঞ্জালেস, প্রথম দফায় তা রুখে দেন ইকুয়েডর গোলরক্ষক। ফিরতি সুযোগে তার শটও রুখে দেন ইকুয়েডর গোলরক্ষক। ৪০ মিনিটে মেসির পাস থেকেই গোলটা করেন ডি পল। এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এই এক গোলের সন্তুষ্টি নিয়ে বিরতিতে যেতে হয় আলবিসেলেস্তেদের। প্রথমার্ধটা ভালো না গেলেও শেষটা কিন্তু দারুণ করেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
বিরতির পর শুরুতে বেশ চাপেই ছিল কোচ লিওনেল স্ক্যালোনির দল। মুহুর্মুহু আক্রমণে ইকুয়েডর সমতা ফেরানোর চোখরাঙানি দিচ্ছিল মেসিদের। পরিস্থিতি ভোজবাজির মতো বদলে গেল ৭১ মিনিটে, কোচের এক সিদ্ধান্তে। নিকো গঞ্জালেসের জায়গায় এলেন নিকলাস টালিয়াফিকো, আর পারেদেসের বদলে এলেন গিদো রদ্রিগেজ, ডি মারিয়া এলেন জিওভানি লো চেলসোর জায়গায়।
এক গোলের লিড ধরে রাখতে কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশলে চলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা, সুযোগ এলে উঠছিল দ্রুত প্রতি আক্রমণে। তিনটে সতেজ পা তাতে আর্জেন্টিনার আক্রমণে প্রাণ সঞ্চার করেছে। সঙ্গে মজবুত হয়েছে দলের প্রেসিংও। ৮০ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের সাক্ষাৎও এল সেই প্রেসিং থেকেই।
রক্ষণ থেকে গুছিয়ে আক্রমণের লক্ষ্যে গোলরক্ষকের কাছে বল ফেরত পাঠিয়েছিল ইকুয়েডর। কিন্তু মেসি আর ডি মারিয়ার দারুণ প্রেসিংয়ের কাছে বিপদজনক জায়গায় বল হারায় দলটি। মেসির পা থেকে এরপর বলটা যায় লাওতারো মার্টিনেজের কাছে। জোরালো শটে গোল করে আর্জেন্টিনাকে স্বস্তি এনে দেন ইন্টার মিলানের এ স্ট্রাইকার।
ম্যাচ জুড়ে দারুণ দুটো গোলের যোগান দেন মেসি। কিন্তু দলের শেষ গোলটা না পেলে কোথায় যেন অপূর্ণতা থেকে যেত মেসির। সেই প্রাপ্য গোলটাও এল ৯০ মিনিটে। প্রতি আক্রমণে বল নিয়ে উঠে ফাউলের শিকার হয়েছিলেন ডি মারিয়া। বক্সের কাছাকাছি হওয়ায় রেফারি প্রথমে পেনাল্টিই দিয়ে বসেছিলেন। পরে ভিএআর দেখে এসে পরিবর্তন করেন সে সিদ্ধান্ত। তবে তাতে মেসির গোল আটকে থাকেনি।
বক্সের একটু সামনে থেকে তার আগুনে ফ্রি কিকের কোনো জবাবই ছিল না ইকুয়েডর গোলরক্ষকের কাছে। তার এ গোলেই ৩-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আলবিসেলেস্তেরা। জোড়া অ্যাসিস্ট, আর এক গোল, ম্যাচসেরা না হওয়ার কোনো কারণই ছিল না মেসির।
এই ম্যাচের পারফর্ম্যান্সের ফলে কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলদাতা তো বটেই, সর্বোচ্চ যোগানদাতার তালিকাতেও শীর্ষে উঠে এসেছেন মেসি। এ ম্যাচ শেষে গোল আর অ্যাসিস্ট, দুই খাতাতেই ৪টি করে গোল জমা হয়েছে ছয়বারের ব্যালন ডি'অর জয়ীর।
সেমিফাইনালে এবার মেসিদের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া, যারা দিনের শুরুর ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে উরুগুয়েকে বিদায় করে এসেছে শেষ চারে। আগামী বুধবার সকাল ৭টায় মুখোমুখি হবে তারা।
সাননিউজ/এমএইচ