বর্তমান অবস্থায় হুমকির পথে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সম্প্রতি টাইগারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের মত চিন্তিত দেশের আবেগ প্রবণ ক্রিকেট ভক্তরা।
দলের এমন ব্যর্থতার জন্য ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কেউ দায়ী করছেন নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড়কে, কেউ বলছেন দলে ঐক্যের অভাব, কেউ বলছেন অভিজ্ঞতার অভাব, কেউবা বলছেন দেশপ্রেমের ঘাটতি।
তবে ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট বোদ্ধারাও ক্রিকেটের উন্নয়নে তো কম চেষ্টা করছেন না। ক্রিকেট খেলোয়াড়দের খেলায় মনোযোগ বাড়ানো থেকে শুরু করে আয়োজন করছে জাতীয় ক্রিকেট লীগ, প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ, তরুণ ক্রিকেটার তৈরির জন্যও হচ্ছে বয়সভিত্তিক খেলা।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কেন পাচ্ছে না ভালো মানের ক্রিকেটার? ঘুরে ফিরেই জাতীয় দলে পরিচিত ক্রিকেটারের আনাগোনা। যার ফলাফল টাইগারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে নিজস্ব ক্রিকেট খেলা আয়োজনের ব্যবস্থা গড়ে উঠে। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট লীগ। গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে পূর্ণাঙ্গ শক্তিধর ও টেস্টখেলুড়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে সাত উইকেটের বড় হার দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাত্রা শুরু হলেও ৩৪ বছরে অর্জনও কম নয়।
র্যাংকিং এর বিচারে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সেখানেও আমাদের অবস্থান সাত নম্বরে। গত বছরের অর্জন বিবেচনায় অন্য ফরমেটের তুলানায় ভাল করছে বাংলাদেশের টি-২০ ক্রিকেট।
কিন্তু দলীয় র্যাংকিং বা ব্যাক্তিগত অর্জন দুই দিক থেকেই তলানিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট। টেস্টে ইনিংস পরাজয় বাংলাদেশের জন্য বিরল কোনো ঘটনা নয়। অনেকটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সবশেষ ভারতের বিপক্ষে গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট ক্রিকেটের ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস ও ৪৬ রানে হারের লজ্জা পায়। এর আগে ইন্দোরেও তিন দিনে ইনিংস হেরেছে টাইগাররা। ১৯ বছরে ১১৭ টেস্টে বাংলাদেশ এ নিয়ে মোট ৮৮টি ম্যাচ হারল। যার মধ্যে ৪২টি ইনিংস পরাজয়। এর মধ্যে মাত্র ১৩টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ৬টি আবার দুর্বল জিম্বাবুয়ে এবং ৪টি হালের খর্বশক্তি উইন্ডিজের বিপক্ষে।
গেল বছরে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ মিলিয়ে টাইগাররা ম্যাচ খেলে ৩৪টি। এর মধ্যে ২টি ওয়ানডে ও ১টি টি-২০ ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। এবং নিউজিল্যান্ডে ১ টেস্ট বাতিল হয়ে যায়। বাকি ৩০ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জয় পায় মাত্র ১১টি ম্যাচে, হেরেছে ১৯টিতে। অর্থাৎ দুই তৃতীয়াংশ ম্যাচেই হার।
গেল ১০ বছরেও পঞ্চপাণ্ডবের বিকল্প মেলেনি। স্কুল ক্রিকেটের ভিত্তি দাঁড়ায়নি। মজবুত হয়নি পাইপলাইন। উপজেলা ও জেলা পর্যায় থেকে প্রতিভা অন্বেষণ নেই, তাই উঠে আসছে না নতুন কোন চমক। বাংলাদেশ এ দল, হাই পারফর্মেন্স ইউনিট, অনূর্ধ্ব-২৩ বা বয়সভিত্তিক দলগুলোর কার্যক্রম দেখা যায়। এর মধ্যে নেই এর ধারাবাহিকতা। এমন অবস্থা চলতে থাকেলে নতুন বছরেও খুব বেশি আশার আলো দেখবে না বাংলাদেশের ক্রিকেট-এমনটাই মনে করেন ভক্ত থেকে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্রান্ড বলতে বোঝায় ‘পঞ্চপাণ্ডব’ মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম ও মাহমুদউল্লাহদের। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রূপকার এই পঞ্চপাণ্ডবই। তাদের ছাড়া এখন পর্যন্ত তেমন কেউ উঠে আসেনি দলের হাল ধরার জন্য। নতুনদের মধ্যে আফিফ হোসেন, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও নাঈম শেখরা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদের পর নতুন মুখ খোঁজা বা নতুন কাউকে তৈরী করতে পারেনি বিসিবি।
সে ধারাবাহিকতায় এবারের বিপিএল এ বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার আলো ছড়িয়েছেন। নতুনদের তুলে আনার ব্যাপারে তাই নিজকে সফল দাবি করছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন, তিন-চারজন ক্রিকেটার নজরে এসেছে। ওদেরকে নিয়ে জাতীয় দলের কোচ আসার পর দলের ক্যাম্পে রেখে তৈরি করা যায় কি না সে ব্যাপারে ভাবছি।’
সান নিউজ/সালি