স্পোর্টস ডেস্ক : ২০১২ সালে প্রথম এবং একমাত্র বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছিল চেলসি। আর তারপর আট মৌসুম কেটে গেলেও খেলা হয়নি ইউরোপের সর্বোচ্চ মর্যাদার টুর্নামেন্টের ফাইনালে। অন্যদিকে এই সময়ে চারটি ফাইনাল খেলে চারবারই শিরোপা ঘরে তুলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে এবার অপেক্ষার পালা শেষ চেলসির, বুধবার (৫ মে) স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে রিয়ালকে পাত্তাই দিল না অল ব্লুজরা। ঘরের মাঠে ২-০ গোলের ব্যবধানে লস ব্ল্যাঙ্কোসদের হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে চেলসি। আর তাতেই চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই বছর পর আবারও অল ইংলিশ ফাইনাল দেখা যাবে।
রিয়ালের ঘরের মাঠ আলফ্রেড ডি স্টেফানোতে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ১-১ গোলে ড্র করেছিল চেলসি। তবে তাতেও ছিল আধিপত্য। গোটা ম্যাচ জুড়ে রিয়ালের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছিল থমাস তুখেলের দল। স্টেডিয়াম বদলালেও বদলায়নি ম্যাচের চিত্র। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজেও গোটা ম্যাচ জুড়ে রিয়ালের ওপর ছড়ি ঘোরালো অল ব্লুজরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ গোলের ব্যবধানে জিতে ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে ইস্তনাবুলের উড়োজাহাজ ধরল লন্ডনের ক্লাবটি।
চেলসির হয়ে ম্যাচের ২৮তম মিনিটে কাই হার্ভাটজের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন টিমো ভার্নার। আর ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ৮৫ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচের অ্যাসিস্ট থেকে দলের লিড দ্বিগুণ করেন মেসন মাউন্ট। রিয়ালের মাঠে প্রথম লেগে চেলসির হয়ে গোল করেছিলেন কাই হার্ভাটজ আর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন করিক বেনজেমা।
লন্ডনে ম্যাচের শুরুতেই বল দখলের মধ্য দিয়ে দারুণ এক আক্রমণ সাঁজায় রিয়াল। নিজেদের মধ্যে প্রায় ২০টি পাস খেলে টনি ক্রুস দুর্দান্ত এক শট নেন গোলবরাবর কিন্তু এডুয়ার্ড মেন্ডি তা বেশ সহজেই রুখে দেন। এর মিনিট দুই পরে অ্যান্তোনিও রুডিগারের দূরপাল্লার শট ঘুষিতে ফেরান থিবো কোর্তোয়া। এরপর একের পর এক আক্রমণে রিয়ালের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখে চেলসির ফরোয়ার্ডোরা।
টিমো ভার্নারের গোলে ১৮তম মিনিটে এগিয়েও গিয়েছিল স্বাগতিকরা কিন্তু চিলওয়েলের কাছ থেকে বল রিসিভ করার আগে অফসাইড পজিশনে ছিলে ভার্নার তাই তো বাতিল হয়ে যায় গোলটি। খেলার ২৬তম মিনিটে এসে ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শট নেন করিম বেনজেমা তবে তা আরও দুর্দান্তভাবে রুখে দেন চেলসি গোলরক্ষক মেন্ডি।
খেলার ২৮তম মিনিটে এনগোলো কান্তে একাই রিয়ালের মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে ডি বক্সের দিকে এগোচ্ছিলেন, এরপর সুযোগ বুঝে কাই হার্ভাটজকে বল বাড়িয়ে দেন এই ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার। ডি বক্সে বল পেয়ে কোর্তোয়ার মাথার ওপর দিয়ে চিপ করেন কাই তবে প্রথম লেগে চেলসির একমাত্র গোলদাতার দুর্ভাগ্যই বলতে হয় ক্রসবারে লেগে বল ফিরে আসে। তবে ফিরতি বল গোলমুখে পেয়ে লাফিয়ে উঠে হেড করে তা জালে জড়ান ভার্নার। আর তাতেই ম্যাচের আঘা ঘণ্টা ছোঁয়ার আগেই চেলসি ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
প্রথমার্ধে আরও কিছু আক্রমণ হলেও আর গোলের দেখা পায়নি দুই দলের কেউই।
বিরতি থেকে ফিরেই ম্যাচ শেষ করে দিতে পারত চেলসি। তবে সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় গোলবার! ৪৭তম মিনিটে আজপিলিকুয়েটার দুর্দান্ত ক্রসে লাফিয়ে উঠে মাথা ছোঁয়ান হার্ভাটজ। সবকিছু ঠিক থাকলেও বেরসিক ছিল ওই গোলবার, তাই তো আবারও প্রতিহত দলেন হার্ভাটজ। আর ম্যাচে টিকে রইল রিয়াল।
প্রথমার্ধে রিয়ালকে কিছুটা সমীহ করে খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে রিয়ালকে কোনো প্রকার পাত্তাই দিল না স্বাগতিক চেলসি।
এরপর গোটা ম্যাচজুড়ে কেবল নীলদের আধিপত্য। ৫১তম মিনিটে ফ্রিকিক থেকে থিয়াগো সিলভার হেড করা বল সামান্যর জন্য গোলপোস্টের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। মিনিট আটেক পরে আবারও রিয়ালের রক্ষণে আঘাত হানেন হার্ভাটজ, মেসন মাউন্টের থ্রু থেকে ডি বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান এই জার্মান। তার সামনে কেবল থিবো কোর্তোয়া কিন্তু না হার্ভাটজ পারলেন না বেলজিয়ান এই গোলরক্ষককে ভেদ করে বল জালে জড়াতে।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের পর আক্রমণে গোটা রিয়ালকে কোণঠাসা করে ফেলে চেলসির আক্রমণভাগ। তবে দ্বিতীয় গোলের দেখা মিলছিল না কোনোভাবেই। তবে অপেক্ষার পালা শেষ হয় ম্যাচের ৮৫তম মিনিটে এসে। নাচোর কাছ থেকে মাঝমাঠে বল ছিনিয়ে নেন কান্তে, এরপর পুলিসিচের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। ডান দিক থেকে কাট ব্যাক করে ডি বক্সের ভেতরে থাকা মেসন মাউন্টের দিকে বল বাড়িয়ে দেন পুলিসিচ। বল পেয়ে ডান দিকের কোনা দিয়ে কালে জড়ান ইংলিশ মিডফিল্ডার মাউন্ট। তাতেই রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয় চেলসি।
ম্যাচের ৮৫তম মিনিটে ২-০ গোলের এগিয়ে যায় চেলসি, আর এরপর ঘটেনি কোনো অঘটন। শেষ পর্যন্ত ওইন ২-০ গোলের ব্যবধানের জয় নিয়েই ইস্তনাবুলের টিকিট নিশ্চিত করে অল ব্লুজরা। আর দুই লেগ মিলিতে ৩-১ গোলের ব্যবধানে সেমিফাইনাল জিতে নেয় থমাস তুখেলের দল।
গোটা ম্যাচ জুড়ে চেলসি থেকে রিয়ালে পাড়ি জমানো এডেন হ্যাজার্ড ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। আর মধ্যমাঠের টনি ক্রুস, লুকা মদ্রিচ ছিলেন পুরোটাই অকার্যকর। রক্ষণে রামোস আসলেও দেখা মেলেনি চিরচেনা রিয়ালকে। আর সবমিলিয়ে জিনেদিন জিদান আরও একবার পরাস্ত থমাস তুখেলের কাছে।
আগামি ২৯ মে ইস্তানবুলে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মাঠে নামবে চেলসি। মঙ্গলবার (৪ মে) পিএসজিকে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে আরেক ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটি। গত তিন আসরে এটি হতে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে দ্বিতীয় অল ইংলিশ ফাইনাল।
সান নিউজ/এসএম