ক্রীড়া ডেস্ক: বল আকাশে উড়ছে। তাসকিন আহমেদ দুই হাত তুলে মোনাজাত ধরছেন। ডাকছেন সৃষ্টিকর্তাকে। ২০১৬ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে এমন চিত্র দেখা গিয়েছিল মিরপুর শের-ই-বাংলায়। এর আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দুই ক্যাচ মিস হয়েছিল তার বোলিংয়ে।
তাইতো ক্যাচ উঠলে তাসকিনের শেষ ভরসা সৃষ্টিকর্তা। মিরপুর শের-ই-বাংলায় সেই চিত্র যাদের মনে আছে তাদের কাছে পাল্লেকেলে নতুন কিছু না। কিন্তু এবার তাসকিন আর মোনাজাত ধরেন না! হেসে উড়িয়ে দেন। কতটা অসহায় তিনি! যে হাসি পুরোটাই বেদনার।
ম্যাচে এক বোলারের কয়টা ক্যাচ ফেলতে পারেন ফিল্ডাররা। তাসকিনের বলে দ্বিতীয় টেস্টে শ্রীলঙ্কার তিন ব্যাটসম্যানের তিন ক্যাচ মিস সতীর্থদের। স্লিপে দুইটি ছেড়েছেন শান্ত। গালিতে মিরাজ। এছাড়া রাহীর বলে পয়েন্টে তাইজুলও বল মুঠো বন্দী করতে পারেননি।
মিরাজের ক্যাচটা তুলনামূলক কঠিন হলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে হরহামেশা দেখা যায়। সেখানে বাংলাদেশ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন সামান্যই। সেসব সুযোগ হাতছাড়ায় শ্রীলঙ্কার রান বড় হওয়ার পথে। ৬ উইকেটে ৪৬৯ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে স্বাগতিকরা। প্রথম দিন মাত্র ১ উইকেট পাওয়া বাংলাদেশ শুক্রবার তুলেছে ২৯১ রান।
তাসকিনের পকেটে গেছে ৩ উইকেট। মিরাজ ও তাইজুল পেয়েছেন ১টি করে উইকেট। আগের দিন একমাত্র উইকেটটি নিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম। আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টিতে দিনের খেলার ২৪.১ ওভার খেলা হয়নি। বাকিটা সময় ব্যাট-বলে দারুণ লড়াই করেছে দুই দল।
দিনের শুরু থেকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং বাংলাদেশের। তিন পেসার শরিফুল, তাসকিন ও রাহীকে খেলতে বেগ পেতে হচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের। প্রথম সেশনে রান রেট মাত্র ১.৬৫। ২৬ ওভারে মাত্র ৪৩ রান তুলতে ৩ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। পাল্লেকেলের ন্যাড়া উইকেটে সাফল্যর জন্য ধারাবাহিক বোলিং করা ছিল আবশ্যক। তাসকিন সেই কাজটা ভালোমতো করেছেন। গতি, আগ্রাসন ছিল আপ টু মার্ক। সঙ্গে উইকেট থেকে মুভমেন্ট আদায় করে নিতে পেরেছেন।
তাতে ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে কিছুটা হলেও চাপে ছিলেন। প্রথম দিন আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে সাফল্য মেলেনি। তবে ফিল্ডাররা ক্যাচ ফেলায় উইকেট বঞ্চিত হন তিনি। দিনের দ্বিতীয় ঘণ্টায় তাসকিনের লেগ স্ট্যাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সেঞ্চুরিয়ান লাহিরু থিরিমান্নে। দুই ওভার পর নতুন ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে দারুণ এক ডেলিভারিতে লিটনের হাতে ক্যাচ জমান।
অবশ্য থিরিমান্নেকে ফেরানোর ওভারেই ম্যাথুসের উইকেট পেয়ে যেতে পারতেন তাসকিন। তার বল ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে যায়। ফিল্ডার ও বোলাররা কেউ আবেদন না করায় জীবন পান সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক। উইকেট থেকে হাল্কা টার্ন ও বাউন্স পাচ্ছিলেন তাইজুল। তার এক শার্প টার্নে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা সাজঘরে ফেরেন ২ রানে।
প্রথম সেশনে ৩ উইকেট নিয়ে সকালটা নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় সেশনে প্রতিরোধ গড়ে লঙ্কানরা। আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান দারুণ ওশাদা সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান। তাকে সঙ্গ দেন পাথুন নিশানকা। দুইজনের জমাট জুটিতে আসে ৫৪ রান। চা-বিরতির আগে এ জুটি ভাঙেন তাসকিন।
ব্যক্তিগত ষষ্ঠ স্পেল করতে এসে প্রথম ওভারে ফেরান নিশানাকে (৩০)। তার নিচু হওয়া ভেতরে ঢোকানো বেল বো্ড হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সঙ্গী হারানোর পর কোনো রান না করে সাজঘরের পথে ধরেন ওশাদা।ডানহাতি ব্যাটসম্যান সুইপ করতে গিয়ে লেগ স্লিপে ক্যাচ দেন।
বিচক্ষণ লিটন উইকেট থেকে সরে দিয়ে ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ৮১ রানে সাজঘরে ফেরেন ওশাদা। সপ্তম উইকেটে জমাট জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন নিরোশান ডিকাভেলা ও রামেশ মেন্ডিস। তাদের অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটিতে দিনের খেলা শেষ হয়। ডিকাভেলা বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করে ৬৪ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৬৪ রান করেছেন।
রামেশ মেন্ডিসের ব্যাট থেকে এসেছে ২২ রান। দুইজনের ব্যাট কোথায় গিয়ে থামে সেটাই দেখার। বৈচিত্র্যময় তাসকিনে দিনটা পুরোটাই হতে পারত বাংলাদেশের। কিন্তু ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় দিন স্বস্তির দিনে একটু আক্ষেপ রয়েই গেছে।
সাননিউজ/এএসএম