ক্রীড়া ডেস্ক : ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ। শুক্রবার (২৬ মার্চ) বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় খেলাটি শুরু হয়। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেলের প্রথম সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩১৯ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৫৪ রানে সবকটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তামিমদের হারতে হয়েছে ১৬৪ রানে। টানা ৩ ম্যাচে হেরে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ধবলধোলাই হলো বাংলাদেশ।
স্কোর: নিউ জিল্যান্ড ৫০ ওভারে ৩১৮/৬; বাংলাদেশ ৪২.৪ ওভারে ১৫৪/১০।
স্রোতের বিপরীতে মাহমুদউল্লাহর লড়াই
এক প্রান্তে উইকেটের মিছিল দেখছিলেন মাহমুদউল্লাহ। অন্য প্রান্ত নিজে আগলে রাখলেও অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। মুশফিক-মেহেদিরা সবাই ফেরেন একেএকে। এর মধ্যে মাহমুদউল্লাহ তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৩ তম হাফসেঞ্চুরি। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৭৩ বলে ৭৬ রান করে।
হ্যানরির চতুর্থ শিকার তাসকিন
তামিম-সৌম্য-লিটনের উইকেট শুরুতেই তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামান ম্যাট হ্যানরি। এবার তাসকিন আহমেদকে সাজঘরে পাঠিয়ে ৫৫ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ৮ম বারের মতো চার উইকেট নেওয়ার মাইলফলক অর্জন করেন।
উইকেটের মিছিলে মাহেদী
মুশফিকদের পথ ধরে উইকেটের মিছিলে শামিল হলেন অলরাউন্ডার মাহেদী হাসান। এবারও ঘাতক সেই নিশাম। পুল করতে গিয়ে ব্যর্থ হন মাহেদী, ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে থাকা টম ল্যাথামের হাতে। মাহেদীর ব্যাট থেকে আসে ৩ রান।
একই ওভারে ফিরলেন মুশফিক-মিরাজ
মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক পঞ্চম উইকেটের জুটিতে খেলছিলেন দারুণ। বলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তুলছিলেন রান। ৩২ বলে এই জুটি থেকে আসে ২৯ রান। ঠিক এই সময়ে হঠাৎ করে যেনো ছন্দপতন ঘটে। নিশামের এক ওভারেই ১ বলের ব্যবধানে হারাতে হয় মুশফিক-মিরাজের উইকেট। ক্রিজে থিতু হওয়া মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ বলে ২১। অন্যদিকে মেহেদি ফেরেন ০ রানে।
এবার সাজঘরে মিথুন
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর মিথুন-মুশফিক ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছিলেন। রান কম হলেও চেষ্টা করছিলেন উইকেট ধরে রাখার। খেলছিলেন দেখেশুনে সাবলীলভাবে। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারলেন না। ৩৯ বলে ৬ রান করে কাইল জেমিসনের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন স্যান্টনারের হাতে। মিথুন-মুশফিকের চতুর্থ উইকেটের জুটি থেকে আসে ৬৯ বলে ২২ রান।
বোল্টের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরলেন লিটন
একেএকে ফিরলেন তামিম, সৌম্য ও লিটন। এবারও শিকারি হ্যানরি। তিনটি উইকেটই নেন তিনি। এবার লিটন ফিরলেন থার্ডম্যান অঞ্চলে বোল্টের এক দুর্দান্ত ক্যাচে। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২১ রান।
এবার সাজঘরে সৌম্য
বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতেই জোড়া আঘাত হানলেন ম্যাট হ্যানরি। তামিমের পর ফেরালেন সৌম্য সরকারকেও। ব্যাক্তিগত ১ রানে হ্যানরির বলে সৌম্য ফাইন লেগে ধরা পড়েন বোল্টের হাতে। শুরুতেই দুজনের আউটে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
শুরুতেই সাজঘরে ফিরলেন তামিম
ম্যাট হ্যানরির করা ইনিংসের প্রথম ওভার মেডেন দেন তামিম। বোল্টের বলে রানের খাতা খুললেও হ্যানরির দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে ল্যাথামের গ্লাভসে ধরা পড়ে ফেরেন সাজঘরে। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ। তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১ রান।
বেসিন রিজার্ভে সর্বোচ্চ
ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে এতদিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান ছিল ৩১৫। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই রান করেছিল নি জিল্যান্ড। আজ তা টপকে ৩১৮ করলো কিউইরা।
উইকেটে সফল রুবেল, খরুচে মোস্তাফিজ
সিরিজের প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই সফল রুবেল হোসেন। গাপটিল-টেলরের পর শেষে নিশামের উইকেট তুলে নেন তিনি। ১০ ওভারে ৭০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। অন্যদিকে মোস্তাফিজ ছিলেন ভীষণ খরুচে। ছন্নছাড়া বোলিং করে দিয়েছেন ৮৭ রান, নেন মাত্র ১টি উইকেট।
ব্যর্থ মুশফিক, এবার মিচেলের প্রথম সেঞ্চুরি
শেষ ওভারে সেঞ্চুরি থেকে ১৭ রান দূরে ছিলেন ড্যারিল মিচেল। মোস্তাফিজের করা ওভারে টানা তিন বলে তিন চার মেরে শতকের সম্ভাবনা আরও জাগিয়ে তোলেন। মাঝে স্যান্টনার তিন রান নিয়ে মিচলেকে শেষ বলে স্ট্রাইকে দেন। এতেই বাজিমাত করেন মাত্র তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তখন সেঞ্চুরি থেকে ২ রান দূরে দাঁড়িয়ে। মোস্তাফিজের ফুলটস বল ডিপ মিড উইকেটে খেলেন; যেটায় ১ রানের বেশি আসার কথা নয়। কিন্তু মিচেল নিয়ে নেন ঠিকই ২ রান। ফিল্ডার বল কুড়িয়ে দ্রুত পাঠালেও মুশফিক রানআউটের সুবর্ণসুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি। মাত্র ৯২ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করে ততক্ষণে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন মিচেল।
অবশেষে উইকেটের দেখা পেলেন মোস্তাফিজ
মোস্তাফিজকে শুর থেকেই দেখা যাচ্ছিল ছন্দহীন। হাত থেকে ক্যাচ পড়ে যাওয়া বল হাতে রান দিচ্ছিলেন প্রচুর। সবকিছু মিলিয়ে মোস্তাফিজকে দেখা যাচ্ছিল অচেনা। ইনিংসের শেষ দিকে এসে দেখা পান প্রথম উইকেটের। ডেভন কনওয়েকে ১২৬ রানের মাথায় ফেরান সাজঘরে। মাত্র ১১০ বলে ১৭টি চারের মারে ১২৬ রান করে আউট হন কনওয়ে।
তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমেই কনওয়ের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি
তাসকিন আহমেদের শর্ট লেংথের বল পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে চার মেরে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন ডেভন কনওয়ে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমেই মাত্র ৯৫ বলে ১৩টি চারের মারে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ড্যারিল মিচেলের অভিষেক হাফসেঞ্চুরি
চলতি সিরিজে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে অলরাউন্ডার ড্যারিল মিচেলের। একদিনের ক্রিকেটে তৃতীয় ম্যাচে ৬৩ বলে দেখা পেলেন অর্ধশতকের। মুশফিকের মাথার ওপর দিয়ে তাসকিনের বলে চার মেরে তিনি প্রথম হাফসেঞ্চুরি করেন।
কনওয়েকে থামাতে পারছে না বাংলাদেশ
হ্যানরি নিকোলস যাওয়ার পর ক্রিজে আসেন ডেভন কনওয়ে। সতীর্থরা যখন ধীরে-সুস্থে খেলছিলেন তখন কনওয়ে খেলছিলেন হাত খুলে। প্রথমে ল্যাথামকে সঙ্গে নিয়ে ৬৩ রানে জুটি গড়ে দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ওঠেন। ল্যাথাম ফিরে গেলেও থামেননি তিনি। এবার ড্যারিল মিচেলকে সঙ্গে নিয়ে অর্ধশতাধিক রানের জুটি গড়ে এগোচ্ছেন বড় সংগ্রহের দিকে।
কনওয়ের হাফসেঞ্চুরি
ক্রিজে এসেই দারুণ খেলতে থাকা ডেভন কনওয়ে তুলে নিলেন তিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। বাংলাদেশের বিপক্ষেই এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় কনওয়ের। অভিষেক ম্যাচে ২৭ রানের পর দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ৭২ রান। দলের সিরিজ জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ৫২ বলে ৭টি চারের মারে অর্ধশতকের দেখা পান কনওয়ে। মোস্তাফিজুর রহমানকে হাঁকান টানা তিন বলে তিন চার।
সৌম্যর বাজিমাত
৫৭ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ। তবে খুব দ্রুত ধাক্কা সামলে নিয়ে দারুণ খেলছিলেন ল্যাথাম-কনওয়ে। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে তুলে ফেলেন ৬৩ রান। এ সময় প্রথমবারের মতো বল হাতে আসেন সৌম্য সরকার। প্রথম বলেই ফেরান ল্যাথামকে। ড্রাইভ করতে গিয়ে কিউই অধিনায়ক পয়েন্টে ধরা পড়েন মিরাজের হাতে। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৩ বলে ১৮ রান।
নিউ জিল্যান্ডের ১০০
ফাইন লেগে মাহেদী হাসানের বলে চার মেরে ২০ ওভার না শেষ হতেই নিউ জিল্যান্ডের স্কোর তিন অঙ্কের ঘরে নিয়ে যান ডেভন কনওয়ে। ক্রিজে থাকা অধিনায়ক টম ল্যাথাম রয়েসয়ে খেললেও কনওয়ে খেলছেন দারুণ।
গাপটিলের পর টেলরকে সাজঘরে পাঠালেন রুবেল
রুবেলের ওভারের চতুর্থ বলে মিডউইকেটে রস টেলরের ক্যাচ মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ফসকে পড়ে যায়। এর পরের বলেই চার মেরে আভাস দিয়েছিলেন বড় কিছুর। কিন্তু টেলরকে বেশিদূর এগোতে দেননি রুবেল, দারুণ লেংথ বলে বাধ্য করেন উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিতে। ১৪ বলে ৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন রুবেল।
তাসকিনের পরেই রুবেলের আঘাত
দলীয় অষ্টম ওভারে প্রথম সাফল্য এনে দিয়েছিলেন তাসকিন। এর পরের ওভারেই আঘাত হানেন রুবেল হোসেন। এবার তিনি ফেরান মার্টিন গাপটিলকে। ক্রিজে থিতু হওয়া গাপটিল মিড অনে পুল করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ধরা পড়েন লিটন দাসের হাতে। গাপটিলের ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে ২৬ রান। পরপর দুই ওপেনারকে ফেরান তাসকিন-রুবেল।
প্রথম সাফল্য এনে দিলেন তাসকিন
দলীয় অষ্টম ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের বলে গালিতে লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন হ্যানরি নিকোলস। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ১৮ রান।
আবারও মুশফিকের ক্যাচ মিস
দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে ক্যাচ মিসের খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। হারতে হয়েছে সিরিজ। সেই ক্ষত এখনো মুছে যায়নি। আবারও উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ ফেললেন মুশফিক। আগের ম্যাচে শেষ দিকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ফেলেছিলেন, এবার শুরুতেই ক্যাচ ফেললেন ওপেনার হ্যানরি নিকোলসের। যদিও ওই ওভারেই তাসকিন হ্যানরিকে সাজঘরে পাঠান।
একাদশে রুবেল
এক পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পেয়েছে রুবেল হোসেন।
বাংলাদেশ একাদশ
তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিথুন, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহেদী হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ।
ফিরলেন রস টেলর
ইনজুরির কারণে প্রথম দুই ওয়ানডে খেলতে পারেননি রস টেলর। তৃতীয় ওয়ানডেতে তিনি একাদশে ফিরেছেন। বাদ পড়েছেন উইল ইয়ং।
নিউজিল্যান্ড একাদশ
টম ল্যাথাম (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), মার্টিন গাপটিল, ডেভন কনওয়ে, হেনরি নিকলস, রস টেলর, জিমি নিশাম, ড্যারিল মিচেল, মিচেল স্যান্টনার, ম্যাট হেনরি, কাইল জেমিসন ও ট্রেন্ট বোল্ট।
টস: টস হেরে ফিল্ডিং করবে বাংলাদেশ
সুপার লিগের জন্য লড়বে বাংলাদেশ
প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ আগেই খুইয়েছে তামিম ইকবালের দল। সিরিজ বিবেচনায় নিলে এই ম্যাচের কোনো গুরুত্ব নেই। তবে ওয়ানডে সুপার লিগের হিসেব টানলে প্রতিটা ম্যাচই সমান গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ ম্যাচে তিন জয়ে ওয়ানডে সুপার লিগে বাংলাদেশের অবস্থান দুই নম্বরে আছে। এই ম্যাচে জয়ের দেখা পেলে জায়গাটি আরও পাকাপোক্ত হবে, যেতে পারে প্রথম স্থানেও। আর না হয় নিউ জিল্যান্ড দখলে নেবে বাংলাদেশের স্থান। দুই ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের পয়েন্ট ২০, আজ জিতলেই হবে ৩০। নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে সমান ৩০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে যাবে কিউইরা। বাংলাদেশের নেট রান রেট ০.৫৯৩ ও নিউ জিল্যান্ডের ১.৮২২। তাই এই ম্যাচটি তামিমদের জন্য হেলাফেলার নয়।
সান নিউজ/এসএম