ক্রীড়া প্রতিবেদক : লক্ষ্যটা সহজই ছিলো, কিন্তু ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে লক্ষ্যটা হয়ে পড়লো কঠিন। শেষদিকে লড়াইয়ের অন্তিম প্রচেষ্টা দেখা গেল মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে। কিন্তু সেই লড়াই বিফলেই গেল।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে ১৭ রানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়লো উইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের ছুড়ে দেওয়া ২৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৩ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় ছাড়াই বাংলাদেশ সফরের আসা অনভিজ্ঞ ক্যারিবীয় দলের জন্য এ এক ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। দলটির বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের প্রথম টেস্ট অভিজ্ঞতাই হয়েছে এই সফরে। আর বাংলাদেশের জন্য দুই বা তার বেশি ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১৫তম হোয়াইটওয়াশ, যা যেকোনো দলের চেয়ে বেশি। এর আগে সর্বশেষ ২০১২-১৩ মৌসুমেও এই উইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ।
উইন্ডিজকে অল্প রানে গুটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জন্য লড়াইয়ের ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন বোলাররা। কিন্তু লক্ষ্যটা হাতের মুঠো থেকে যেন বের করে দিলেন তামিম-মুশফিকরা। কেউ চাপে এবং কেউ ওয়ানডে স্টাইলে খেলে উইকেট বিলিয়ে এলেন। শেষদিকে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু চেষ্টা সফল হলো না। শেষ পর্যন্ত হোয়াইওয়াশের লজ্জায় ডুবলো বাংলাদেশ।
তবে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের জন্য রাকিম কর্নওয়ালকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। একাই ৯ উইকেট তুলে নিয়ে মূল সর্বনাশটা করেছেন এই বিশালবপু স্পিনার।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ২৩১ রানের লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার ৫৯ রানের জুটি গড়েন। ১৪ ইনিংস পর ওপেনিং জুটিতে ৫০ ছাড়ালো বাংলাদেশ। কিন্তু ক্যারিবীয় পার্ট-টাইম বোলার কার্লোস ব্র্যাথওয়েট সৌম্য সরকারকে (১৩) ফেরালে ভাঙে এই জুটি। কয়েক ওভার পর ২৮তম টেস্ট ফিফটি তুলে নেন তামিম। মারেন ৯টি বাউন্ডারি।
ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে মাত্র ৪৪ বলে ফিফটি তুলে তামিমও ইনিংস দীর্ঘ করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসের মতোই অতি আগ্রাসী ব্যাটিং করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন এই অভিজ্ঞ বাঁহাতি ওপেনার। এবারও হন্তারক সেই ব্র্যাথওয়েট। ক্যারিবীয় অধিনায়কের অফসাইডের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট কভারে ক্যাচ তুলে দেন তামিম।
তামিমের বিদায়ের পর আরও একবার টেস্ট ক্রিকেটে ব্যর্থতার নজির স্থাপন করে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পুরো সিরিজেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এবার তার বিদায় হলো ১১ রান করে। শিকারী ক্যারিবীয় স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল।
দলের প্রয়োজনে হাল ধরতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও (১৪)। দলকে একশ পার করার পর ক্যারিবীয় স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যানের বল মুশফিকের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক জশুয়া দা সিলভার হাতে জমা হয়। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিও নিয়েছিলেন মুশফিক, কিন্তু সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
প্রথম ইনিংসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দ্বিতীয় ইনিংসেও আগেভাগে ফিরেছেন মোহাম্মদ মিঠুনও (১০)। এবার কর্নওয়ালের লাফিয়ে উঠা বলে লেগ স্লিপে থাকা বোনারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন মুমিনুল। কিন্তু তিনিও ক্যাচ তুলে দিয়েই ফিরেছেন। ওয়ারিক্যানের বলে ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে থাকা কর্নওয়ালের ক্যাচ তুলে দেন টাইগার অধিনায়ক (২৬)।
মুমিনুলের সঙ্গে লিটনের ৩২ রানের জুটি আশা জাগিয়েছিল ভালোভাবেই। কিন্তু অধিনায়কের পথে হাঁটেন এই ডানহাতিও। কর্নওয়ালের অফ সাইডের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ জমা দেন লিটন (২২)। লোয়ার অর্ডারে নামা তাইজুলও (৮) কর্নওয়ালের শিকার। সিরিজের সফলতম বোলার কর্নওয়ালের এটি এই ম্যাচে নবম উইকেট।
দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরও নাঈম হাসান ও আবু জায়েদকে নিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন মিরাজ। ওভারও বাড়িয়ে দেওয়া ৫ ওভার। পরে বাড়ানো হয় আরও ৫ ওভার। এই সময়ে মিরাজ খেলেন ৫৬ বলে ৩১ রানের ইনিংস। ৩টি চার ও ২টি ছক্কা দেখেই বোঝা যায় কতটা উদগ্রীব ছিলেন তিনি। কিন্তু ওয়ারিক্যানের দলে স্লিপে থাকা কর্নওয়ালের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় তার প্রতিরোধ।
এর আগে ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে চতুর্থ দিনে ব্যাটিং করতে নামা উইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ১১৭ রানে। নাইটওয়াচম্যান জোমেল ওয়ারিক্যানকে (২) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন আবু জায়েদ। এরপর এই ডানহাতি পেসার সিরিজের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান কাইল মেয়ার্সকেও (৬) এলবিডব্লুর শিকার বানান।
দিনের শুরুতে দুই উইকেট হারানোর পর কার্যত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। উইন্ডিজের রান যখন ৭৩, তখন আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। জারমেইন ব্ল্যাকউড (৯) বাঁহাতি স্পিনারের অফ সাইডের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাশের হাতে ক্যাচ তুলে দেন।
দুই উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান এনক্রুমা বোনার ও জশুয়া দা সিলভা মিলে ৩১ রানের জুটি গড়লেও তাদের দ্রুতই ফিরে যেতে হয়। এর মধ্যে জশুয়া দা সিলভাকে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করেন তাইজুল। ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা বোনারকে (৩৮) বোল্ড করে দেন নাঈম হাসান। উইকেট পতনের মিছিল এরপর আরও ত্বরান্বিত হয়। উইন্ডিজ মাত্র ১০ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারায়।
৪ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এই ইনিংসে বল হাতে সবচেয়ে সফল তাইজুল। ৩ উইকেট নিয়েছেন নাঈম, ২ উইকেট আবু জায়েদের এবং ১ উইকেট মিরাজের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস): ৪০৯ (বোনার ৯০, জশুয়া দা সিলভা ৯২, আলঝারি ৮২); আবু জায়েদ ৯৮/৪, তাইজুল ১০৮/৪)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দ্বিতীয় ইনিংস): ১১৭ (বোনার ৩৮; তাইজুল ৩৬/৪, নাঈম ৩৪/৩)।
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস): ২৯৬ লিটন দাস ৭১, মুশফিক ৫৪; কর্নওয়াল ৭৪/৫, গ্যাব্রিয়েল ৭০/৩)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস): ২১৩ (তামিম ৫০, মিরাজ ৩১; কর্নওয়াল ১০৫/৪, ওয়ারিক্যান ৪৭/৩)
ফলাফল: ১৭ রানে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সিরিজ: ২-০ ব্যবধানে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সান নিউজ/এম