ক্রীড়া ডেস্ক : রক্ষণ জমাট রেখে অনেক দিন পর নজরকাড়া ফুটবল খেলল বার্সেলোনা। আক্রমণাত্মক কৌশলে চ্যালেঞ্জ জানালো রিয়াল সোসিয়েদাদ; তবে মরিয়া প্রতিপক্ষকে আটকাতে পারল না তারা। প্রথমে পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে দারুণ এক জয় তুলে নিল কাতালান ক্লাবটি।
কাম্প নউয়ে বুধবার রাতে লা লিগার ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। উইলিয়ান জোসের গোলে তারা পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন জর্দি আলবা। স্বাগতিকদের জয়সূচক গোলটি করেন ফ্রেংকি ডি ইয়ং।
কুমান দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম পিছিয়ে পড়ার পরও জিতল বার্সোলোনা। আর প্রথম দুই রাউন্ডের পর প্রথমবারের মতো আসরে টানা দুই ম্যাচ জিতল উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে পথ চলা দলটি।
অন্যদিকে, টানা ছয় জয়ে লিগ টেবিলের চূড়ায় উঠে বসলেও সাম্প্রতিক সময়ে জয় ধরা দিচ্ছিল না সোসিয়েদাদের ঝুলিতে। সব প্রতিযোগিতা মিলে আগের ছয় ম্যাচে ড্র করেছিল তারা। এবার আর সেটাও পারল না।
পুরো ম্যাচে বল দখলে একটু এগিয়ে বার্সেলোনা, আক্রমণেও তাই। লক্ষ্য শট নেওয়ায় অবশ্য সোসিয়েদাদ এগিয়ে; তারা ৫টি, বার্সেলোনা ৪টি। তবে, নিশ্চিত সুযোগের হিসেব করলে বার্সেলোনা অনেক এগিয়ে।
অভিজ্ঞ জেরার্দ পিকের অনুপস্থিতিতে বার্সেলোনা দুই তরুণ ডিফেন্ডার রোনালদ আরাহো ও অস্কার মিনগেসার পারফরম্যান্সও নজর কেড়েছে।
নিজেদের খুঁজে ফেরা বার্সেলোনা শুরু থেকেই চাপ বাড়ায়। তৃতীয় মিনিটে দলকে এগিয়ে নিতে পারতেন মেসি, তবে ডি-বক্সের মধ্যে থেকে তার শট প্রতিহত হয়। পাঁচ মিনিট পর অরক্ষিত তরুণ সেনসেশন পেদ্রির হেড পোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে হতাশ হতে হয় বার্সেলোনাকে।
পরের ২০ মিনিটে গোলের উদ্দেশে তারা আরও চারটি শট নেয়, যদিও তার কোনোটিই সোসিয়েদাদ গোলরক্ষককে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি।
বল দখল ও আক্রমণে পিছিয়ে থাকা সোসিয়েদাদ ২৭তম মিনিটে প্রথম কর্নার পায়। তা থেকেই এগিয়ে যায় তারা। ছয় গজ বক্সের ডান দিক থেকে পোর্তুর বাঁ দিকে গোলমুখে বাড়ানো বল অনায়াসে জালে পাঠান জোসে।
পাল্টা জবাব দিতে মোটেও দেরি করেনি স্বাগতিকরা। ৩১তম মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে সমতা টানেন আলবা। গোছানো আক্রমণে ডি-বক্সের মধ্যে ফাঁকায় বল পেয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ান স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।
৩৬তম মিনিটে ডি-বক্সের মুখ থেকে আদনান ইয়ানুজাইয়ের শট ঝাঁপিয়ে ফেরাতে সমস্যা হয়নি মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের।
ওখান থেকে পাল্টা আক্রমণে দুই মিনিটের মধ্যে নিশ্চিত দুটি সুযোগ হারায় বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষের ভুলে বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে কাটিয়ে গ্রিজমানের নেওয়া শট ক্রসবারে লাগে। এরপর বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ পজিশন থেকে উড়িয়ে মারেন মার্টিন ব্রাথওয়েট।
জমজমাট লড়াইয়ের ৪৩তম মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। বাঁ দিক থেকে আলবার ক্রস ছয় গজ বক্সের মুখে ফাঁকায় পেয়ে অনায়াসে ডান পায়ের টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন ডি ইয়ং। শুরুতে অবশ্য অফসাইডের পতাকা উঠেছিল; তবে ভিএআরের সাহায্যে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি।
দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে মুহূর্তের ব্যবধানে দুটি সুযোগ নষ্ট হয় বার্সেলোনার। ডান দিকের দুরূহ কোণ থেকে মেসির শট গোলরক্ষক ঠেকানোর পর ওই আক্রমণেই বাঁ দিক থেকে আলবার ক্রস গোলমুখে পেয়েও জালে বল পাঠাতে ব্যর্থ গ্রিজমান। ৩০ সেকেন্ড পর বাঁ দিক দিয়ে ওঠা আক্রমণে আবারও সুবর্ণ সুযোগ পান ফরাসি এই ফরোয়ার্ড; কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও তার বরাবর শট নেন তিনি।
৭৩তম মিনিটে সোসিয়েদাদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য আক্রমণ তাদের ব্যর্থতাতেই শেষ হয়ে যায়। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো থ্রু বল ধরে আলেকসান্দের ইসাক একা ডি-বক্সে ঢুকে পড়লেন। কিন্তু সময় নষ্ট করলেন অনেক, সেই সুযোগে ছুটে এসে কর্নারের বিনিময়ে বল ক্লিয়ার করেন মিডফিল্ডার পেদ্রি।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে লিগে অপরাজিত সোসিয়েদাদ পরের কয়েক মিনিটেও চাপ ধরে রাখে। তিন মিনিটের মধ্যে আরও দুটি উল্লেখযোগ্য আক্রমণ করে তারা, কিন্তু নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার ঘাটতিতে টের স্টেগেনকে পরীক্ষায়ও ফেলতে পারেনি দলটি।
৮৪তম মিনিটে সেকেন্ডের ব্যবধানে তাদের দুটি প্রচেষ্টা রুখে দেন টের স্টেগেন। প্রথমে জুবিমেন্দির শট ঠেকানোর পর আলগা বল পেয়ে ইসাকের শটও পা দিয়ে ঠেকিয়ে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করেন জার্মান গোলরক্ষক।
এই হারে শীর্ষস্থানও খুইয়েছে সোসিয়েদাদ। তাদের সমান ২৬ পয়েন্ট নিয়েই গোল ব্যবধানে এগিয়ে চূড়ায় সবার উপরে উঠে গেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। তিনটি ম্যাচ কমও খেলেছে দিয়েগো সিমেওনের দল।
১৩ ম্যাচ খেলা রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্টও ২৬। ২২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে ভিয়ারিয়াল। ১২ ম্যাচে ছয় জয় ও দুই ড্রয়ে ২০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে উঠেছে বার্সেলোনা।
সান নিউজ/এম