ক্রীড়া প্রতিবেদক:
পাকিস্তান সফরের আগে দলের খেলোয়ারদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সে সময় নিরাপত্তা শঙ্কায় দলের সঙ্গে যাননি মুশফিকুর রহীম। কিন্তু দলের খারাপ সময়ে তাকে ছাড়া সফর প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে দলের জন্য। তবে সরাসরি চাপ না থাকলেও পরোক্ষভাবে তাকে রাজি করাতে চেষ্টা করেছে বোর্ড।
এমন অবস্থায় এবার একেবারে প্রত্যক্ষভাবেই, মুশফিককে ডেকে নিয়ে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হলো। শুধু চাপ সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত নয়, মুখোমুখি বসে সরাসরি দল থেকে বাদ দেয়ার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে তাকে। প্রস্তাবে রাজি না হলে আজকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ দেয়া হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়।
জানা গেছে, কোনো হুমকি-ধামকিতে কাজ হলো না মুশফিকের। নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন। অর্থ্যাৎ, জানিয়ে দিলেন, কোনোভাবেই তিনি যাবেন না পাকিস্তান সফরে।
সোমবার দুপুরে ছিল বাংলাদেশ দলের ঐচ্ছিক অনুশীলন। অনুশীলন শুরুর আগেই মুশফিককে ডেকে নেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। জানা গেছে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড পরিচালকদেরও কেউ কেউ। সেই সভাতেই বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের বার্তা পৌঁছে দেয়া হয় মুশফিকুর রহীমের কাছে। বার্তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন প্রধান নির্বাচক। জানিয়ে দেন, এপ্রিলের শুরুতে পাকিস্তান সফরে যেতে হবে। না হলে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ থেকে বাদ দেয়া হবে তাকে। মুশফিকও প্রধান নির্বাচককে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পাকিস্তানে যাবেন না।
মুশফিক নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ার পর আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাকে একাদশে রাখা হবে কি না তা নিয়েও তৈরি হয়েছে জোর গুঞ্জন। প্রধান নির্বাচক যেহেতু বোর্ড প্রধানের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন যে, মুশফিক রাজি না হলে তাকে বাদ দেয়া হবে একাদশ থেকে। সুতরাং, এর বাইরে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো নাকি বারবার সব পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, আজকের ম্যাচটি সিরিজ নির্ধারণী। আজ জিতলে সিরিজ জয় নিশ্চিত হবে। সুতরাং, এমন ম্যাচে তার একাদশে মুশফিককে লাগবেই।
পাকিস্তানে নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে শুরু থেকেই মুশফিক জানিয়ে দেন, তিনি দেশটিতে সফরে যাবেন না। বিসিবি প্রধানও শুরু থেকে বলেছিলেন, তারা খেলোয়াড়দের ইচ্ছাকে সম্মান জানাবেন। কেউ যেতে না চাইলে তারা জোর করবেন না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের আগ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল।
কিন্তু হঠাৎ করেই বদলে গেলো বোর্ড সভাপতির মনোভাব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করার কারণে তিনি জানিয়ে দিলেন মুশফিককে পাকিস্তান সফরে তার চাই’ই চাই। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি নিজেই বলেছিলেন, ‘চুক্তির বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী মুশফিকের পাকিস্তান যাওয়া উচিত।’ শুধু তাই নয়, মুশফিকের পরিবার সত্যিই শঙ্কিত, এটি তিনি বিশ্বাস করেন না বলেও জানান।
এমনিতেই গুঞ্জন ছিল, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেলে, শেষ ম্যাচে বিশ্রামের নাম করে এমনিতেই বাদ দেয়া হবে মুশফিককে। কিন্তু তার আগেই বিসিবি সভাপতির ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা এত কড়াভাবে মুশফিকের ওপর চেপে বসবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল?