নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিমতল্লার বায়তুল সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধ আব্দুল সাত্তার (৪০) মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৯ জনে।
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাত্তারের মৃত্যু হয়। তার শ্বাসনালীসহ ৭০ শতাংশ পোড়া ছিল।
গত শুক্রবারের (০৪ সেপ্টেম্বর) ওই ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছিল ৩৭ জনকে। তাদের মধ্যে সোমবার (০৭ সেপ্টেম্বর) মামুনকে (৩০) ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২৯ জন মারা যাওয়ার পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বাকি সাতজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিকদের পার্থ শংকর পাল বলেন, এখনও সাতজন রোগী আইসিইউতে ভর্তি আছেন। সবার অবস্থাই ক্রিটিক্যাল। তাদের শরীরের ২২ শতাংশ থেকে ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত দগ্ধ রয়েছে। শ্বাসনালীও পোড়া রয়েছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে তাদের চিকিৎসা চলছে।
চিকিৎসাধীন সাতজন হচ্ছেন, ফরিদ (শ্বাসনালীসহ ৫০ শতাংশ পোড়া), শেখ ফরিদ (শ্বাসনালীসহ ৯৩ শতাংশ পোড়া), মো. কেনান (শ্বাসনালীসহ ৩০ শতাংশ পোড়া), নজরুল ইসলাম (শ্বাসনালীসহ ৯৪ শতাংশ পোড়া), সিফাত (শ্বাসনালীসহ ২২ শতাংশ পোড়া), আবদুল আজিজ (শ্বাসনালীসহ ৪৭ শতাংশ পোড়া) এবং আমজাদ (শ্বাসনালীসহ ২৫ শতাংশ পোড়া)।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে দগ্ধদের চিকিৎসার সার্বিক খোঁজ-খবর নিতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডা. জুলফিকার লেলিন। হাসপাতালে এসে রোগীদের অবস্থা দেখেন এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এরপর চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে রোগীদের অবস্থা জানার চেষ্টা করেন।
সাংবাদিকদের ডা. জুলফিকার লেলিন বলেন, ‘দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্যই এ বার্ন ইনস্টিটিউটি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মসজিদে মর্মান্তিক ঘটনায় দগ্ধদের অধিকাংশ ৯০ শতাংশ পোড়া ছিলেন। তাদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন, সব সাপোর্টই এ হাসপাতালের রয়েছে। প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী তাদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন। ওষুধ থেকে শুরু করে সবকিছুই সরকারিভাবে ব্যবস্থা করে দেওয়ার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন এবং সেই অনুসারে কাজ করা হচ্ছে।’
‘আমি আজ এখানে চিকিৎসায় ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো ঘাটতি রয়েছে কি না, এটি দেখতে এসেছি। তবে এমন কোনো ঘাটতি দেখতে পাইনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসকরা সবকিছুরই ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। ’
ডা. লেলিন বলেন, ‘তবে রোগীর স্বজনদের আবেগের জায়গায় হয়তো কিছুটা সমস্যা রয়েছে যে, তারা রোগীদের দেখতে পারছেন না, আইসিইউর ভেতরে ঢুকতে পারছেন না। ইনফেকশনের ভয়ে রোগীদের কাছে বারবার স্বজনদের যেতে না দেওয়ায় বিভিন্ন অভিযোগ থাকতে পারে। তবে দিনে দু-একবার যাওয়ার সুযোগ দেন চিকিৎসকরা। এখানে কোনো চিকিৎসার ঘাটতি রয়েছে এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। এখান থেকে রোগীকে বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করবেন, এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। বরং বাইরে থেকে রোগী এখানে আসবেন। ’
উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সব তথ্য নিচ্ছেন। আরও যা যা প্রয়োজন সে বিষয়ে ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
গত শুক্রবার রাতে বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায়ে সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে মসজিদের চারপাশে। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট। প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণে আগুন লাগার ধারণা করা হলেও গ্যাসের লিকেজ থেকে এই দুর্ঘটনা হতে পারে বলে জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। তারা জানিয়েছে, আগুন নেভানোর সময় জমে থাকা পানিতে বুদবুদ দেখা যায়।
এতে দগ্ধ অন্তত ৪০ জনের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৩৭ জনকে ভর্তি করা হয় শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে।
মারা যাওয়া অন্য ২৮ জন হলেন, মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক (৬০), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও তার ছেলে জুনায়েদ (১৭), আবুল বাশার মোল্লা (৫১), মনির ফরাজী (৩০), ইমরান (৩০), দুই ভাই জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১), মুন্সিগঞ্জের কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), ফতুল্লার আব্দুল হান্নান (৫০), চাঁদপুরের মোস্তফা কামাল (৩৪), পটুয়াখালীর গার্মেন্টসকর্মী রাশেদ (৩০), নারায়ণগঞ্জের হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর জামাল আবেদিন (৪০), গার্মেন্টসকর্মী ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জের কলেজ শিক্ষার্থী মো. রিফাত (১৮), চাঁদপুরের মাইনুউদ্দিন (১২), ফতুল্লার জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের গার্মেন্টসকর্মী নয়ন (২৭), নিজাম (৩৪), নারায়ণগঞ্জের রাসেল (৩৪), খুলনার কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শিশু জুবায়ের (৭), বাহার উদ্দিন (৫৫), নাদিম (৪৫), শামীম (৪৫), জুলহাস ও মোহাম্মদ আলী মাস্টার (৫৫)।
সান নিউজ/আরএইচ/বিএস/ এআর