নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মাসেতুর মতো বাংলাদেশের বৃহৎ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। বাংলাদেশের দুর্নীতির সমালোচনায় মুখর থাকে বিদেশি গণমাধ্যমগুলো। দুর্নীতির কারণে এদেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে সারাবছর বিভিন্নভাবে জ্ঞান দিতে থাকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কিংবা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংগঠনগুলো। কিন্তু এদেশে কর্মরত বিদেশিরাও যে কতোটা দুর্নীতিগ্রস্ত, এবার সেই চিত্র উঠে এলো টিআইবির প্রতিবেদনে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিচ্ছেন বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা। ‘বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। আজ বুধবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন মনজুর-ই খোদা। আর গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈধ ও অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লাখ বিদেশিকর্মী কাজ করেন। যার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী বৈধ কর্মী রয়েছেন ৯০ হাজার। এদের ন্যূনতম গড় মাসিক বেতন দেড় হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসেবে বিদেশি কর্মীদের বার্ষিক আয় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৩০ শতাংশ স্থানীয় ব্যয় বাদে প্রায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে চলে যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে বৈধভাবে বিদেশে যায় ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাকি ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হয়ে যায়। টাকার অঙ্কে প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর বার্ষিক রাজস্ব ক্ষতি হয় ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন বা ১২ হাজার কোটি টাকা।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে যারা কাজ করতে আসেন তাদের ৫০ শতাংশই ভ্রমণ ভিসায় আসেন। এখানে কাজ যোগাড় করে আবার দেশে ফিরে যান। পরে আবার ভ্রমণ ভিসা নিয়ে আসেন। এরাই মূলত অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে বিভিন্ন সময় জানা গেছে। এমনকি সরকারি প্রকল্পে যেসব বিদেশি কাজ করছেন তারাও ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা বেশি। এরপর রয়েছে শ্রীলঙ্কা ও চীনসহ ৪৪টি দেশের শ্রমিক। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করছেন।
২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই গবেষণা করা হয়েছে।