নুসরাত জাহান ঐশী: আজ সারা দেশে একযোগে ২৯৯ টি সংসদীয় আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। শীতের সকালে রাজধানীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বাধা-বিপত্তির পরও ভোটের পরিবেশ তৈরি করেছি
রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮ টার দিকে ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং বিরতিহীনভাবে চলবে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত।
সরেজমিনে, সকালে ঢাকা-৮ আসনের আওতাধীন রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ঘুরে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, আজ ভোর ৬ টায় ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কেন্দ্রে পৌঁছেছে। এ কেন্দ্রে ২ জন প্রার্থীর ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে একজন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ প্রার্থী, অপরজন ফুলের মালা প্রতীকের বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন দলের প্রার্থী।
আরও পড়ুন: বিচ্ছিন্ন ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামাল দিচ্ছে
কেন্দ্রের ৫টি ভোট কক্ষের মধ্যে ২টি মহিলা কক্ষ ও ৩টি পুরুষ ভোটকক্ষ। প্রতিটি কক্ষে ২ প্রার্থীর একজন করে এজেন্ট রয়েছে। এ কেন্দ্রের ভোটাররা রোকেয়া হল, নবাব ফয়জুন্নেছা ছাত্রী নিবাস, কবি জসীম উদ্দিন হল, আন্তর্জাতিক ছাত্রবাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. মনিরুজ্জামান জানান, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। এখন শীত ও বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকায় এ এলাকায় ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা করছি।
এছাড়া নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসআই) খন্দকার সেলিম শাহরিয়ার জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। এ পর্যন্ত কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। তেমন কোনো আশঙ্কাও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় এ এলাকা এমনিতেই নিরাপদ।
তিনি আরও বলেন, গতকাল রাত থেকে তারা এ কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সাথে আরও রয়েছেন ১২ জন আনসার সদস্য।
আরও পড়ুন: আগের চেয়ে এবার নির্বাচন ভালো হচ্ছে
কেন্দ্রের বাইরে ভোটার জিয়া হলের সাবেক ছাত্র সেলিম জানান, শান্ত, নিরাপদ ও ভয়ভীতিহীন একটি নির্বাচন হচ্ছে। সকাল ৯/১০ টার দিকে ভোট দিয়েছি।
সকাল সাড়ে ১০ টায় জগন্নাথ হল এলাকায় দল বেধেঁ ভোট দিতে যেতে দেখা যায় আনিসা, মনিসা ও সূচিতা সরকারদের।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনেক্স সায়েন্স বিল্ডিং ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়ে আসা প্রিয়াঙ্কা তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ভোটকেন্দ্র আগের মতো জমজমাট নেই। গতবার লাইন দিতে হয়েছিল।
জানা যায়, এনেক্স সায়েন্স বিল্ডিং কেন্দ্রের ভোটাররা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, নবাব সলিমুল্লাহ হল এবং শামসুন্নাহার হলের ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাহমুদ দুলাল মিয়া জানান, এটি ১০৬ নং কেন্দ্র এবং ২১ নং ওয়ার্ড। এ কেন্দ্রের ভোটার ২০০২ জন। নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশের ৪ জন এবং ১২ জন আনসার সদস্য।
এ সময় ‘হিউম্যান রাইটস’-এর একটি পর্যবেক্ষণ দল কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গনণা
বেলা ১১ টায় পলাশীর মোড় এলাকায় কথা হয় হাজারীবাগের ভোটার রিকসা চালক ইসমাইলের সাথে। তিনি জানান, নায়ক ফেরদৌসকে ভোট দিয়েছি। আমরা পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ করি।
এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটকেন্দ্রে ভীড় বাড়তে দেখা যায়। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকা-৭ আসনের আওতাধীন আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে চোখে পড়ার মতো ভোটার আনাগোনা দেখা যায়।
এ কেন্দ্র তুলনামূলক বড় হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তায় আইনশৃঙখলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি কিছুটা বেশি দেখা যায়।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার খান মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, এ কেন্দ্রের মোট ভোটার ২৯০০ জন। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭০টি। ধীরে ধীরে ভোটারদের ভীড় বাড়ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে নির্বিঘ্নে ভোট উৎসব চলছে
বেলা ১২ টার দিকে আজিমপুর এলাকায় ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মহিলা ভোটকক্ষের প্রিজাইডিং অফিসার মনিরুল ইসলাম জানান, এ কেন্দ্রের ভোটাররা লালবাগ (অংশিক) ও আজিমপুর (অংশিক) এলাকার বাসিন্দা। পুরান ঢাকার বাসিন্দারা একটু আয়েশী হয়ে থাকে। শীতের সময় বলে ভোটাররা দেড়ি করে আসছেন। বেলা ১২টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রের ২২০০ টির মধ্যে ১০০টি ভোট পড়েছে।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২৮ টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে প্রার্থী রয়েছেন- আওয়ামী লীগ (নৌকা) ২৬৬, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ২৬৫, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) ১৩৫, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (আম) ১২২, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ৯৬, জাসদ (মশাল) ৬৬, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) ৭৯, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৬৩, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ (টেলিভিশন) ৪৫, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙ্গর) ৫৬, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৩৮, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪২, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি)৩৭, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩০, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ২৬, গণফ্রন্ট (মাছ) ২১, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাই সাইকেল) ১৩, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৬, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১১, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১০, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ৫, গণতন্ত্রী পার্টি কবুতর) ১০, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (চাকা) ৪, বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ৫, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাত পাঞ্জা) ৪ এবং স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন।
এ নির্বাচনের মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২। মোট ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি। ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
সান নিউজ/এনজে