নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিমতল্লার বায়তুল সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৩৭ জন দগ্ধের মধ্যে এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন একমাত্র পোশাকশ্রমিক মো. মামুন (৩০)। ঘটনার সময় মসজিদের গেটের বাইরে থাকায় তিনি সামান্য অগ্নিদগ্ধ হন, তাই বেঁচে ফিরতে পারলেন।
ওই দুর্ঘটনায় ২৭ জন মারা গেছেন এ পর্যন্ত। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকা ১০ জনের মধ্যে মামুন বাদে অন্য ৯ জনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোমবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এখনও তিনি ট্রমার মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার মৃত লতিফ মিয়ার ছেলে মামুন তল্লা এলাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রী রুবী বেগমসহ পরিবার নিয়ে থাকেন।
স্ত্রী রুবী বেগম বলেন, ‘মামুনকে বিকেলে ড্রেসিং করে ছেড়ে দেওয়ার পর আমরা বাড়ি ফিরে এসেছি।’
মামুনের ভায়রা মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার সময় মামুন মসজিদের গেটের বাইরে ছিলেন। বিস্ফোরণের পর আগুন গায়ে এসে লাগলে তিনি দগ্ধ হন। এখন অনেকটাই ভালো আছেন।’
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, ‘হাসপাতালে আসা ৩৭ জনের মধ্যে একমাত্র মামুন ছিলেন আশঙ্কামুক্ত। এখনো চিকিৎসাধীন অন্য নয়জনের মধ্যে পোস্ট অপারেটিভে রয়েছে তিনজন ও আইসিইউতে আছেন ছয়জন। তারা সবাই ৫০ শতাংশের ওপরে দগ্ধ হয়েছেন। আর মামুনের শরীরের ১০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তার দুই পা, হাত ও চুল মুখমণ্ডল সামান্য দগ্ধ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মামুনের অবস্থা ভালো রয়েছে। এখনও কিছু ক্ষত আছে। ড্রেসিং করে দেওয়া আছে, কিছুদিন সময় লাগবে।’
গত শুক্রবার (০৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায়ে সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে মসজিদের চারপাশে। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট। প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণে আগুন লাগার ধারণা করা হলেও গ্যাসের লিকেজ থেকে এই দুর্ঘটনা হতে পারে বলে জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। তারা জানিয়েছে, আগুন নেভানোর সময় জমে থাকা পানিতে বুদবুদ দেখা যায়।
এতে দগ্ধ অন্তত ৪০ জনের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৩৭ জনকে পাঠানো হয় শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে।
তাদের মধ্যে মারা যাওয়া ২৭ জন হলেন, মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক (৬০), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও তার ছেলে জুনায়েদ (১৭), আবুল বাশার মোল্লা (৫১), মনির ফরাজী (৩০), ইমরান (৩০), দুই ভাই জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১), মুন্সিগঞ্জের কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), চাঁদপুরের মোস্তফা কামাল (৩৪), পটুয়াখালীর গার্মেন্টসকর্মী রাশেদ (৩০), নারায়ণগঞ্জের হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর জামাল আবেদিন (৪০), গার্মেন্টসকর্মী ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জের কলেজ শিক্ষার্থী মো. রিফাত (১৮), চাঁদপুরের মাইনুউদ্দিন (১২), ফতুল্লার জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের গার্মেন্টসকর্মী নয়ন (২৭), নিজাম (৩৪), নারায়ণগঞ্জের রাসেল (৩৪), খুলনার কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শিশু জুবায়ের (৭), বাহার উদ্দিন (৫৫), নাদিম (৪৫), শামীম (৪৫), জুলহাস ও মোহাম্মদ আলী মাস্টার (৫৫)।
চিকিৎসাধীন নয়জন হলেন, আমজাদ (৩৭), আ. সাত্তার (৪০), হান্নান (৫০), আ. আজিজ (৪০), রিফাত (১৮), নজরুল ইসলাম (৫০), মো. কেনান (২৪), শেখ ফরিদ (২১) ও মো. ফরিদ (৫৫)।