নিজস্ব প্রতিবেদক:
বন্যার জন্য ছুটিতে থাকা পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চীনা প্রকৌশলী দল আজ চীন থেকে বাংলাদেশে ফিরছে। সেই সঙ্গে আসছে চীনা রাষ্ট্রীয় বিমা কোম্পানির ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
চলতি মাসেই পদ্মা সেতুর দু’টি স্প্যান বসছে যাচ্ছে। আর সেতুর সব স্প্যান বসতে যাচ্ছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। সে লক্ষেই যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে। স্প্যান আবারো বসানো শুরু হচ্ছে বলেই সাত সদস্যের চীনা বিশেষ দলটি আজ সোমবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এরপরই স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি শুরু হবে। এ টিমের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রীয় বিমা কোম্পানির তিন সদস্যের একটি টিমেরও আসার কথা রয়েছে। তারা গত ৩১ জুলাই থেকে পদ্মার ভাঙনে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করবেন বলে জানা গেছে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগ কনকস্ট্রকশন ইয়ার্ডে সেতুর বাকি ১০টি স্প্যানের মধ্যে চারটিই পুরোপুরি প্রস্তুত করে রাখা আছে। আরও চারটি স্প্যানের ফিটিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন রং করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আর বাকি দু’টি স্প্যানের এখন ওয়েল্ডিং চলছে। ‘২ই’ এবং ‘২এফ’ নম্বর এই স্প্যান দুটিও ফিটিং সম্পন্ন করে পিয়ারে (খুঁটি) বসানোর জন্য প্রস্তুত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সবশেষ স্প্যান ‘২এফ’-এর ওয়েল্ডিং শুরু হওয়ায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বেশ সন্তুষ্ট। সেতুর গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্প্যান সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়াই আমাদের কাছে এটি যুগান্তকারী অগ্রগতি। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটিতে ৪১টি স্প্যানের ৩১টি স্প্যান বসে গেছে। চীনে তৈরি হওয়া সেতুর সব স্প্যানই এখন প্রকল্প এলাকায় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সেতুর এক নম্বর মডিউলে ‘১এ’, ‘১বি’, ‘১সি’, ‘১ ডি’ স্প্যান এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। এই চারটি স্প্যানের মধ্যে ‘১ ডি’ বসবে ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতে। ‘১বি’ বসবে ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটিতে, ‘১বি’ বসবে ২ ও ৩ নম্বর খুঁটিতে এবং ‘১এ’ বসছে ১ ও ২ নম্বর খুঁটিতে। মধ্য সেপ্টেম্বর ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতে ৩২তম স্প্যানটি বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ১০ দিন পরই বসবে ৩৩ তম স্প্যান ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটিতে। এখন একই সাথে দু’টি ‘লিফটিং ফ্রেম’ ব্যবহার করা হবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে স্প্যানগুলো বসবে। সেভাবেই এখন প্রস্তুতি চলছে। আর বাকি ছয়টি স্প্যানই বসছে ২ নম্বর মডিউলে। ৭ নম্বর খুঁটি থেকে ১৩ নম্বর খুঁটিতে বসবে এই স্প্যানগুলো।
মো. আব্দুল কাদের জানান, স্প্যানগুলো বসানোর জন্য পদ্মায় পানির লেভেল প্রয়োজন ৪.৪৮ মিটার। তবে এখন পদ্মায় পানি রয়েছে ৫.৪১ মিটার উচ্চতায়। আশা করা হচ্ছে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই পরিমাণ পানি কমে আসবে।
এদিকে স্প্যান বহনকারী ৩৬শ’ মে. টন ওজন বহনে সক্ষম ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান হু’ নড়িয়ার মূল নদীতে এখন নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। স্প্যান বসানোর আগেই এটি সরাসরি মাওয়ার ইয়ার্ডে নিয়ে আসা হবে।
এদিকে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে নদী ভাঙনে ক্ষতিপূরণ নিরুপনে ইন্সুরেন্স কোম্পানি চীনা জেনারেল ইন্সুরেন্সের তিন প্রতিনিধি আজ ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসছেন। তারা সরেজমিন পরিদর্শন এবং বাংলাদেশের সাধারণ বিমার সাথে সমন্বয় করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবেন।
সবশেষ গত ১০ জুন ৩১তম স্প্যান বসানো হয়। জাজিরা প্রান্তের ২৫ ও ২৬ নম্বর খুঁটির ওপর স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু ৪ হাজার ৬৫০ মিটারে দৃশ্যমান হয়। এ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে মাওয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে জাজিরাকে। এখন বাকি আছে মাওয়া প্রান্তের মাত্র ১০টি স্প্যান। এই ১০ স্প্যানে দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমানে পদ্মা সেতুর পূর্ণতা পাবে। এখন তাও সময়ের ব্যাপার মাত্র।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি হবে দ্বিতল, যার ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ। সেতুর এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিটার। একেকটি খুঁটি ৫০ হাজার টন লোড নিতে সক্ষম।
সান নিউজ/আরএইচ/বিএস | Sun News