নিজস্ব প্রতিবেদক:
সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ২৭ শতাংশ। ভোট পড়ার হার উত্তরে ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ আর দক্ষিণে ২৯ শতাংশ।
নবনির্বাচিত দুই মেয়রের মধ্যে আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন মোট ভোটারের মাত্র ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অন্যদিকে শেখ ফজলে নূর তাপস পেয়েছেন ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের মতো কোন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনেও ভোটের হার এতো কম হওয়ায় বিস্মিত সব মহল। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে নির্বাচন বিশ্লেষক, সুশীল সমাজসহ গণমাধ্যমে চলছে নানা ধরণের বিশ্লেষণ। তবে সর্বশেষ এই ভোটের হার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কমিশনের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, নির্বাচনে অনিয়ম আর প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে।
সর্বোপরি বিগত কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমেই কমছে। আর এই বিষয়টি স্বীকার করে নিলেন সরকারী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বায়দুল কাদের নিজেও।
‘ভোটের রাজনীতির প্রতি মানুষের অনীহা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়’। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে এমন মন্তব্যই তিনি করলেন সাংবাদিকদের কাছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে এক সংবাদ সন্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের এত জনসমর্থন, সেখানে আরও বেশি ভোট আশা করেছিলাম। আওয়ামী লীগের যে পার্সেন্টেজ সেই তুলনায় তো উপস্থিতি আশানুরূপ নয়।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে মূল্যায়ন করার জন্য আমরা ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করব। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এলে এই মিটিং হবে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে পরিবীক্ষণ, আমাদের অরজারভেশন, পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। এ রকমই চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। নেত্রীর সঙ্গে পরশুদিন ফোনে যখন কথা হয়, তিনি আমাকে বলেছিলেন ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করা জরুরি।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে ভোটাররা সেভাবে আসছে না। আপনি কি মনে করেন না ভোটের প্রতি মানুষের অনীহা বাড়ছে, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, একটা বিষয় হচ্ছে; এই যে ভোট হচ্ছে আগেভাগেই শঙ্কা তৈরি করা। এই সিস্টেম খারাপ, এই সিস্টেমে ভোট দেয়া যাবে না। এই রকম অবস্থায় কিছু মানুষের আগ্রহ তো কমতেই পারে। কারণ ভোট সম্পর্কে অপপ্রচারটা অনেক বেশি হয়েছে। সরকারি দলের ভয়ঙ্কর প্রস্তুতি, বিরোধীদলও সতর্ক পাহারায় থাকবে, তারা ঢাকার বাইরে থেকে লোক জড়ো করেছে, এ ধরনের ইনফরমেশন তো ছিলই। আমার মনে হয় সবকিছু মিলিয়ে একটা ভালো ইলেকশন হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মনে হয় ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো জনমত সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাজনীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বেশি হওয়া উচিত। ভোটের রাজনীতির প্রতি মানুষের অনীহা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি মনে করি এখানে আমাদের গভীরভাবে ভাবনার বিষয় আছে। আমাদের ভোটের যে পার্সেন্টেজ সেই পার্সেন্টেজ অনুযায়ী, যে ভোট পড়ার কথা ছিল, সেটা তো হয়নি। এখানে আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতার একটি বিষয় আছে। আমাদের কমিটিগুলো হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ঢাকা সিটিতে ওয়ার্ড পর্যন্ত কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো দরকার।
উল্লেখ্য গত ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর নির্বাচনে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১২ হাজার ৫০৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়ে ৭ লাখ ৬২ হাজার ১৮৮টি। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে মোট ৭ লাখ ১৩ হাজার ৫০টি । এই নির্বাচনে প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাননি।
২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল না। কিন্তু সে নির্বাচনেও ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। আর এর আগে ২০১৫ সালে উত্তরের মেয়র নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ২০১৫ সালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোট পড়ার হার ছিল ৪৮ শতাংশ।