নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লার বায়তুল সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের দগ্ধ ৩৭ জনের ২৪ জনই এ পর্যন্ত মারা গেছেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখনও ১৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ছয়জনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হতাহত সবাই তল্লা এলাকার বাসিন্দা।
চিকিৎসাধীন ওই ১৩ জনের কেউ শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ৩৭ জনের মধ্যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও ১৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন। তারাও শঙ্কামুক্ত নন। দগ্ধ ১৩ জনের মধ্যে ছয়জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসাধীন ১৩ জন হলেন- ইমরান (৩০), মামুন (২৩), আমজাদ (৩৭), আ. সাত্তার (৪০), হান্নান (৫০), আ. আজিজ (৪০), রিফাত (১৮), নজরুল ইসলাম (৫০), মো. কেনান (২৪), আবুল বাসার মোল্লা (৫১), মনির ফরাজী (৩০), শেখ ফরিদ (২১) ও মো. ফরিদ (৫৫)। তাদের মধ্যে ফরিদ, মনির ফরাজী, কেনান, আজিজ, আমজাদ ও আবুল বাশারকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন, মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক (৬০), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও তার ছেলে জুনায়েদ (১৭), দুই ভাই জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১), মুন্সিগঞ্জের কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), চাঁদপুরের মোস্তফা কামাল (৩৪), পটুয়াখালীর গার্মেন্টস কর্মী রাশেদ (৩০), নারায়ণগঞ্জের হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর জামাল আবেদিন (৪০), গার্মেন্টসকর্মী ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জের কলেজ শিক্ষার্থী মো. রিফাত (১৮), চাঁদপুরের মাইনুউদ্দিন (১২), ফতুল্লার জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের গার্মেন্টসকর্মী নয়ন (২৭), নিজাম (৩৪), নারায়ণগঞ্জের রাসেল (৩৪), খুলনার কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শিশু জুবায়ের (৭), বাহার উদ্দিন (৫৫), নাদিম (৪৫), শামীম (৪৫), জুলহাস ও মোহাম্মদ আলী মাস্টার (৫৫)।
শনিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে এ পর্যন্ত নিহত ২২ জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরী উপস্থিত থেকে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেন। শনিবার বিকাল থেকে একে একে নিহতদের মরদেহ ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পশ্চিমতল্লা বোমওয়ালার বাড়ির খেলার মাঠে নিহতদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সৃষ্টি হয় বেদনাবিধূর শোকাহত পরিবেশ।
মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে গ্যাসলাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণে কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। রোববার জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিস্ফোরণে যারা মারা গেছেন, তাদের দাফন-কাফনের জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসীমউদ্দীন। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান ডিসি।
তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, এই ঘটনার পেছনে কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত শুক্রবার (০৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায়ে সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে মসজিদের চারপাশে। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট। প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণে আগুন লাগার ধারণা করা হলেও গ্যাসের লিকেজ থেকে এই দুর্ঘটনা হতে পারে বলে জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। তারা জানিয়েছে, আগুন নেভানোর সময় জমে থাকা পানিতে বুদবুদ দেখা যায়।
এতে দগ্ধ অন্তত ৪০ জনের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৩৭ জনকে পাঠানো হয় শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে।
সান নিউজ/ এআর