নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি দেশের মানুষের কাছে ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে সমধিক পরিচিত।
আরও পড়ুন: উপকূল অতিক্রম করছে ‘মিধিলি’
তিনি ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে সমাধীস্থ করা হয়।
তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক, মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক জীবনে তিনি আজীবন নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নিয়েছেন এবং শোষিত নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সব সময় থেকেছেন আপসহীন।
আরও পড়ুন: বিশ্বকে এক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মওলানা ভাসানীর জন্ম ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে। তার বাবার নাম হাজী শরাফত আলী ও মায়ের নাম মজিরন বিবি। ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে আসাম যাওয়ার পর ১৯০৩ সালে তিনি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।
ইসলামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭ সালে দেওবন্দ যান। ২ বছর সেখানে অধ্যায়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে এলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন।
মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাভোগ করেন। ১৯২৬ সালে আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান।
আরও পড়ুন: সুভাষ দত্ত’র প্রয়াণ
১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ থেকে ৪৬ সালে আসাম জুড়ে ‘বাঙ্গাল খেদাও’ নামে দাঙ্গা চলাকালে বাঙালিদের রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন তিনি।
১৯৪৯ সালে পূর্ববঙ্গের বিরোধী রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ সালে পূর্ববঙ্গে খাদ্যাভাব দেখা দিলে ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ এর ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলার বার লাইব্রেরি হলে তার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গ্রেফতার হয়ে ১৬ মাস কারা নির্যাতন ভোগ করেন।
আরও পড়ুন: হরপ্রসাদ শাস্ত্রী’র প্রয়াণ
তিনি ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন। এভাবে পদে পদে জাতির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেখতে পাওয়া যায়।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি জানান, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তার অত্যন্ত সাদাসিধা জীবনযাপন দেশ ও জনগণের প্রতি তার গভীর ভালোবাসারই প্রতিফলন।
আরও পড়ুন: ইন্দিরা গান্ধী’র প্রয়াণ
মওলানা ভাসানীর আদর্শ নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি।
বাণীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ভাসানীর আদর্শিক ঐক্য ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শোষণ, বঞ্চনাহীন ও প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
সান নিউজ/এসকে/এনজে