নিজস্ব প্রতিবেদক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা লাভের মাত্র ১১ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু উপহার দিয়েছিলেন বাঙালি জাতির অধিকারের দলিল, বহুল আকাঙ্ক্ষিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান।
আরও পড়ুন: আজ জাতীয় সংবিধান দিবস
শনিবার (৪ নভেম্বর) জাতীয় সংবিধান দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দেওয়া এক বাণীতে দেশের সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা জানান, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ১১ মাসের মধ্যে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গৃহীত হয়েছিল বাঙালি জাতির অধিকারের দলিল, বহুল আকাঙ্ক্ষিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩ আসনের পূর্ব-পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মোট ৩১০ আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীগণকে নির্বাচিত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
আরও পড়ুন: আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ উদ্বোধন আজ
শেখ হাসিনা জানান, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন ও ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রোভিশনাল কন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২ জারি করেন; যা ২য় সংবিধান নামে খ্যাত।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ, ১৯৭২ জারি করা হয়। গণপরিষদকে সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের ১ম অধিবেশনে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ১২ অক্টোবর গণপরিষদের ২য় অধিবেশনে খসড়া সংবিধান বিল আকারে গণপরিষদে উত্থাপন করা হয়। এছাড়া ৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন: অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে
জাতির পিতা মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, শূন্য হাতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিয়ে ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করেন, অবকাঠামো পুনস্থাপন ও উন্নয়ন করেন ও উৎপাদন খাত ও অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। বঙ্গবন্ধুর আমলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৯% অতিক্রম করেছিল। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য, পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধীরা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে।
তিনি সবশেষে জানান, আমরা জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের দর্শনে বিশ্বাসী। দেশের অগ্রগতিতে আশু, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি আমরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুদূরপ্রসারী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অতি অল্প সময়ে সংবিধান প্রণয়ন বাঙালির জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের চেতনা ধারণের জন্য জাতীয় সংবিধান দিবস পালন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে- এ আমার প্রত্যাশা।
সান নিউজ/এএ