নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘পানি জীবন, পানিই খাদ্য। কেউ থাকবে না পিছিয়ে’। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে সারা বিশ্বের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব খাদ্য দিবস।
আরও পড়ুন: দেশে অন্ধত্বের হার ৩৫ শতাংশ কমিয়েছি
সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে এ দিবসের মূল অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং বিশেষ অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
এ দিন দুপুরে বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কারিগরি সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র জন্ম
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে খাদ্য উৎপাদনে দেশে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সাল থেকে গত ১৫ বছরে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার দেশের কৃষির উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে নানাবিধ যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে- কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণে কার্যকর সংযোগ স্থাপন, ন্যায্য মূল্যে কৃষি উপকরণ কৃষকের নিকট সহজলভ্য করা, কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো, ফসলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করা। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়।
আরও পড়ুন: আজও বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
পাশাপাশি আধুনিক, লাভজনক ও যান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু নতুন জাত উদ্ভাবন ও প্রবর্তনের ফলে খাদ্যশস্য, সবজি ও ফল উৎপাদনে বৈচিত্র্য এসেছে এবং ফসল উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
দেশে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন।
সেই সাথে অন্যান্য ফসল উৎপাদনেও ধারাবাহিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফার্মগেটে নতুন ফুটওভার ব্রিজ উদ্বোধন
গত ১৫ বছরে ভুট্টা উৎপাদন প্রায় ৯ গুণ, আলু ২ গুণ, ডাল ৪ গুণ, তেলবীজ ২.৫ গুণ ও সবজি ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেশের কৃষির সাফল্য বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।
দেশের ২২ টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে- ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশ।
২০০৮ থেকে ২০০৯ সালে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ১৩ লাখ টন, যা ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে ৪ কোটি টনেরও বেশিতে উন্নীত হয়েছে।
আরও পড়ুন: শরৎ-এর শেষ দিন আজ
২০০৮-০৯ অর্থ বছরে গমের উৎপাদন ছিল ৮ লাখ ৪৯ হাজার টন, যা ২০২২-২৩ সালে ১১ লাখ ৭০ হাজার টনে উন্নীত হয়।
ভুট্টা ছিল ৭ লাখ টন, যা এখন ৬৪ লাখ টন, আলু ৫ লাখ টন থেকে বেড়ে ১ কোটি ৪ লাখ টন এবং সবজি ৩০ লাখ টন থেকে বেড়ে ২ কোটি ২০ লাখ টন হয়েছে।
গত ১৫ বছরে বৈরী পরিবেশ সহনশীল জাতসহ মোট ৬৯৯ টি উন্নত বা উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবন ও ৭৮ টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে, এর মধ্যে ধানের জাত ৮০ টি।
কয়েক দফায় সারের মূল্য কমিয়ে ও সমন্বয় করে টিএসপি ৮০ টাকা থেকে ২৭ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ২১ টাকা এবং এমওপি ৭০ টাকা থেকে ২০ টাকা করেছে বর্তমান কৃষকবান্ধব সরকার।
এছাড়া ভর্তুকি মূল্যে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া ২৭ টাকা দরে সরবরাহ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিঙ্গাপুর গেলেন রাষ্ট্রপতি
২০০৯-২৩ সাল পর্যন্ত সার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাতে ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে মোট ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা।
২০০৮ থেকে ২০০৯ অর্থ বছরে এ খাতে ব্যয় ছিল মাত্র ৫ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় করা হয়েছে ২৫ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।
সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া কৃষকদের কৃষিযন্ত্রের ক্রয় মূল্যের ওপর হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০ ভাগ ও অন্যান্য এলাকায় ৫০ ভাগ উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে।
২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কম্বাইন হারভেস্টর, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, রিপার, সিডার ও পাওয়ার থ্রেসারসহ প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজারটি কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। ফলে কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতা মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে। সেই সাথে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।
সান নিউজ/এনজে