নিজস্ব প্রতিবেদক:
সব বিতর্ককে পেছনে ফেলে শেষ হলো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট, চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। প্রথমবারের মতো ব্যালট পেপার আর সিলবিহীন পুরো একটি সিটি নির্বাচন দেখল জাতি।
শুরু থেকে ইভিএম (ইলেক্টোনিক ভোটিং মেশিন) নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে বিএনপিসহ ৩৫ টি রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন অনেকে। স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনারই (সিইসি) আঙ্গুলের ছাপ বিড়ম্বনায় নিজের ভোট কাস্ট করতে পারছিলেন না। একই কারণে বিড়ম্বনায় পড়েন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। পরে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সহায়তায় তারা ভোট দিতে পারেন।
এভাবে দিনে অনেক ভোট কেন্দ্রেই ইভিএম নিয়ে ঘটে এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা। লালবাগ ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রের বাইরে ভোটার আছিয়া বেগম অভিযোগ করেন, তাকে ভোট দিতে দিচ্ছেন না নির্বাচনী কর্মকর্তারা। কেন তাকে ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না বিষয়টি জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার ফজলে হক বলেন, উনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে না। উনাকে একটু পরে আসতে বলেছি। কারণ সকালে ঠাণ্ডায় অনেক সময় এরকম হয়ে থাকে। উনি পরে ভোট দিতে পারবেন।
সকালে উত্তরার আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যান সিইসি কে এম নূরুল হুদা। দুবার যাচাই করেও আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোটার নম্বর ব্যবহার করা হয়। এসময় সিইসিকে নিজের স্মার্ট কার্ডও বের করতে দেখা যায়। িওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবু তালেব জনান, ইভিএমে ভোট দেওয়ার আগে আঙ্গুলের ছাপ মেলাতে হয়। সিইসি মহোদয় আঙ্গুলের ছাপ দু-তিন বার ট্রাই করেন। পরে ভোটার শণাক্তকরণ করে ইভিএম ভোট দেন।
সিইসির একান্ত সচিব এ কে এম মাজহারুল বলেন, প্রথমবার ছাপ না মেলায় জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভোটার পরিচয় তথ্য মনিটরিংয়ে আসে। এরপরই আঙ্গুলের ছাপ মিলেছে এবং ভোটার অথিন্টিকেশন করা হয়। এরপরই ইভিএমে ভোট দেন স্যার।
রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন কয়েকবার চেষ্টার পরেও আঙ্গুলের ছাপ মিলেনি। প্রতিবার আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার পর মেশিনের স্ক্রিনে লাল রঙে ভাসছিল ‘আবার চেষ্টা করুন’।
ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারছেন না অনেকে এমন অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, এর জন্য ৩-৪টি উপায় রয়েছে। আইডি কার্ড দেখতে পারে, পুরনো কার্ড দেখতে পারে। নম্বর মেলালে ছবি আসবে, ভোট দিতে পারবেন ভোটাররা।
গুলশানের মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিতে এসে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের মা নাসরিন আউয়ালকেও আধা ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফারজানা শারমিন বলেন, প্যানেলে কানেকশন লুজ ছিল, দু-তিন দফায় চেষ্টা করেছি। পরে আমরা প্যানেল চেঞ্জ করে দিয়েছি। নাসরিন আউয়াল পরে ভোট দিয়েছেন।
বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জয়নাল আবেদিন বলেন, সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণের পর একটি বুথে প্রবলেম দেখা দিয়েছিল। ব্যালট প্যানেলের সঙ্গে কন্ট্রোল প্যানেলের সংযোগ পাচ্ছিল না। দেইটা ভোট দেওয়ার পরে ব্যালট প্যানেল ডিসকানেক্ট দেখাচ্ছিল। তবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা সমস্যা সমাধান করে ফেলেছি।
এবারই ইভিএম এ পরিপূর্ণ একটা নির্বাচন সম্পন্ন হল। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার পর পাওয়া গেল ভোটারদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের কেউ বলেছেন, ইভিএমে ভোট দেওয়া সোহজ। আবার কেউ ইভিএম যন্ত্রের কারিগরি ত্রুটির অভিযোগ করেছেন।
কলাবাগান এলাকার ভোটার ফয়সল মানিক বলেন, যেহেতু এটা যান্ত্রিক একটা প্রক্রিয়া, তাই সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন সমস্যা যাতে না হয় এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে আরো সজাগ থাকতে হবে।
ভোট দিতে এসে ভোটার আলিম উদ্দিন বলেন, আমি এই ইভিএম নিয়ে কিছু জানতাম না। ভোটকেন্দ্রে আসার পরে আমাকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা আমাকে বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে ভোট দিতে হয়। পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকের পাশে সবুজ বোতাম টিপে ভোট দিলাম। কোনো জটিলতা হয়নি।
বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রের আরেক ভোটার হোসনে আরা বলেন, ইভিএমে ভোট হওয়ায় অন্যবারের চেয়ে এবার ভোট আসলে আরও সুন্দর হইসে। ভোটকেন্দ্রের যাওয়ার আগে দেইখ্যা গেছিলাম, কেমনে ভোট দিতে হয়। ইভিএমে ভোট দেওয়া তো সোজা। খালি খালি টেনশন করসি।
আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ভোটার মিনু রহমান বলেন, ইভিএম এ ভোট দেওয়া অনেক সহজ। হাজারীবাগ এলাকার সালেহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি বুঝতে একটু সময় লেগেছে। তবে ব্যালটে সিল মারার মজাটাই আলাদা।
রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দিদারুল আলম বলেন, এ সিস্টেমে প্রথমবার ভোট দিলাম। আসলে আমার ভোটাধিকার প্রয়োগের তাগিদে আমি সকাল সকাল এসে ভোট দিয়ে দিয়েছি। আমার কোনো সমস্যা হয়নি।
উল্লেখ্য, ঢাকার দুই সিটিতে (উত্তর ও দক্ষিণ) শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে এ ভোটগ্রহণ চলে।
দুই সিটি নির্বাচনে ব্যবহার হল ২৮ হাজার ৮৭৮টি ইভিএম মেশিন।
সান নিউজ/সালি