নিজস্ব প্রতিবেদক:
কথাশিল্পী, ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক রাহাত খানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তিন দফা নামাজে জানাজা ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শনিবার (২৯ আগস্ট) বাদ জোহর রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক রাহাত খান শুক্রবার (২৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় তার ইস্কাটন গার্ডেনের বাসায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
রাতে রাহাত খানকে বারডেমের হিমাগারে রাখা হয়। সেখান থেকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে মরদেহ জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে এনে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে তাকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।
জানাজায় রাহাত খানকে নিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘রাহাত খান এক অপূর্ব ও বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম যে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন হয়, তার কার্যনির্বাহী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসেছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে। এসেছিলেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। আমাদের গর্ব এটাই যে, রাহাত ভাই সেই বয়সে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাহিত্যে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে যে একটি গতিময় বাংলা ভাষা আছে, তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে পরবর্তীতে বাংলাদেশে যাদের হাত ধরে তা প্রবাহিত হয়েছে রাহাত খান তাদের একজন। আর তরুণদের কাছে এটুকু অনুরোধ, আমাদের অবহেলার স্থানগুলো আমরা যেন আবেগের বশে নির্ণয় না করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, অনেক এলেবেলে কথাবার্তা হচ্ছে। আমি সবার কাছে হাতজোড় করে বলি, রাহাত খানের সাহিত্য বিচার তাকে পাঠের পর আপনারা করবেন।’
রাহাত খানের সহধর্মিনী অপর্ণা খান বলেন, ‘সবার কাছে রাহাত খানের জন্য দোয়া চাই। আমাদের পরিবারের জন্যও দোয়া প্রার্থনা করি। আর এ দুঃসময়ে যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ‘এ বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শুধু জাতীয় প্রেসক্লাবেরই ১৬ জন সদস্যকে হারিয়েছি। সর্বশেষ রাহাত ভাই, যিনি আমাদের অত্যন্ত প্রিয় সাংবাদিক ও অভিভাবক। শুধু সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও রাহাত খান কিংবদন্তিতুল্য। তার এ চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে একটা বিরাট শূন্যতা বাংলাদেশের কথা সাহিত্যে ও সাংবাদিকতায় সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তার উত্তরসূরিরা নিশ্চয় তাকে দীর্ঘদিন মনে রাখবো।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘রাহাত খান শুধু কর্মজীবনে নয়, ব্যক্তি জীবনেও নিরহঙ্কারী ও অমায়িক মানুষ ছিলেন। তিনি সুন্দর ও নান্দনিক জীবন-যাপন করতেন। রাহাত খানের কাজ, তার কথা, সান্নিধ্যের অভাব আমরা দীর্ঘদিন অনুভব করবো। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এদেশের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। তিনি তার সৃষ্টির মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবেন।’
জানাজায় আরও অংশ নেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, বিএফইউজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া কাজল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়াসহ রাহাত খানের পরিবারের সদস্য ও অসংখ্য মানুষ।
জানাজা শেষে মরহুমের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি , জাতীয় প্রেসক্লাব, প্রতিদিনের সংবাদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। এরপর মরদেহ তার সর্বশেষ কর্মস্থল 'প্রতিদিনের সংবাদ' কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান সহকর্মীরা।
মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করার আগে আরো একদফা নামাজে জানাজা করা হয়।
সান নিউজ/ এআর