নিজস্ব প্রতিবেদক : পেঁয়াজ রফতানিতে ভারতের শুল্কারোপের পর দেশের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুস গয়ালের সঙ্গে আলাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। ভারত বাংলাদেশকে বিশেষ বিবেচনায় দেখবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন : এই দেশে আর খুনের রাজত্ব চলবে না
সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বিষয়ে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুস গয়ালের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা বলেছি, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে কেন অব্যাহতি দেন না? এতে আপনাদের বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এই অনুরোধ করেছি। তারা বলেছে, আমরা এই বিষয়টি বিবেচনা করছি। দ্রুত এই বিষয়টি প্রস্তাব আকারে মন্ত্রীদের গ্রুপে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তারা বলেছে, বাংলাদেশকে বিশেষ বিবেচনায় দেখবে।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মশলা জাতীয় ফসল। পেঁয়াজের এত ব্যাপক ব্যবহার হয় যা অনেকটা সবজির মতো। পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই উপযোগী। তবে আমাদের আগে যেসব পেঁয়াজ ছিল সেগুলোর উৎপাদনশীলতা কম। এরইমধ্যে আমাদের কৃষি গবেষকরা উন্নতজাতের পেঁয়াজ উদ্ভাবন করেছেন। সেগুলোর ফলন অনেক বেশি। প্রতি হেক্টরে ২০ টন পেঁয়াজ হয়।
আরও পড়ুন : সঠিক নেতৃত্ব পেলে খুনিরা টিকতো না
তিনি বলেন, আমাদের পেঁয়াজের মূল মৌসুম হলো মার্চের শেষে ও এপ্রিলের প্রথম দিকে। সে সময় দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, এটা হলো আমাদের সমস্যা। পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল তাই বেশি ঘরে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা যদি পেঁয়াজ ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে পারতাম তাহলে পেঁয়াজ নিয়ে কোনো সমস্যা হতো না। বড় সমস্যা হচ্ছে পেঁয়াজ গুদামে রাখা যায় না। সেজন্য আমাদের প্রায় প্রতিবছর পেঁয়াজ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
মন্ত্রী বলেন, এটা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বিকল্প হচ্ছে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা। মিসর, তুরস্ক, চীন থেকে এটা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। এটা (পেঁয়াজ আমদানি) প্রত্যক্ষভাবে আমাদের দায়িত্ব নয়। মন্ত্রী হিসেবে আমি দায়িত্ব এড়াতে পারবো না। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করবে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, বাণিজ্যমন্ত্রী, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি। কীভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এরই মধ্যে আমরা ঘোষণা দিয়েছি- অন্যান্য দেশ থেকে আমরা যাতে পেঁয়াজ আনতে পারি।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ কোনো বছর কমে যায়। গত বছর দাম কম ছিল। ফলে চাষিরা এ বছর আবাদ করতে পারেনি। এজন্য এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে। আমরা প্রথম দিকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিইনি। এতে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছে।
আরও পড়ুন : প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে আমদানি না করলে দেশি পেঁয়াজ কমে যাচ্ছে এবং দাম আস্তে আস্তে বাড়ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপিও দিয়েছি। কিন্তু এসেছে মাত্র ৩ লাখ টন।
এখন পর্যন্ত আইপির (পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি) জন্য কেউ এসেছিলো কি- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। কারণ তাদের হাতে তো আইপি আছে। সেটাই আনে না। দাম বাড়বে, তবে আকাশচুম্বী হবে না বলে ধারণা করছি।
সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা কি দুর্বল- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মনিটরিং দুর্বল নয়। আসলে এটি মুক্তবাজার অর্থনীতি। সেখানে বাজার কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়? কাজেই ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আসলে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। সরবরাহ বেশি হলে দাম এমনিতেই কমবে। এটাই হলো মূল কথা।
সান নিউজ/জেএইচ