নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান ও মুক্তিযুদ্ধের অপারেশন কিলো ফ্লাইটের অন্যতম সদস্য বীর উত্তম এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার সর্বজনীন পেনশন উদ্বোধন
সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮ টা ৪০ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুলতান মাহমুদ। মৃতকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সুলতান মাহমুদ ২ নম্বর সেক্টর ও পরবর্তীতে সেক্টর ১-এর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আরও পড়ুন: ভোট কেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ আজ
এ সময় প্রধানমন্ত্রী এই অসীম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে হাতেগোনা কিছু সরঞ্জাম আর রসদ নিয়ে পরিচালিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ‘কিলো ফ্লাইট’ অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরছেন নওয়াজ
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৮১-১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সুলতান মাহমুদ উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি।
১৯৪৪ সালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজকুনজরা গ্রামে সুলতান মাহমুদের জন্ম । স্কুল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ১৯৬২ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে কমিশন পান তিনি।
আরও পড়ুন: সাংবাদিকদের ওপর হামলা, শাস্তির দাবি
তিনি ১৯৭১ সালে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে করাচির মৌরীপুর বিমান ঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ঐ বচর মে মাসে পালিয়ে শ্রীলঙ্কা হয়ে ঢাকায় পৌঁছান সুলতান মাহমুদ।
পরে অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ভারতে পৌঁছান তিনি। মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর এবং পরে ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে সুলতান মাহমুদ দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন: সব বিভাগে ঝড়-বৃষ্টির আভাস
২৮ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের নাগাল্যান্ডের একটি পরিত্যক্ত বিমান ঘাঁটিতে একটি এলয়েড থ্রি হেলিকপ্টার, একটি অটার ও একটি ডিসি থ্রি ডকোডা উড়োজাহাজ নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল।
এতে লোকবল বলতে ছিলেন ১০ জন পাইলট এবং ৬৭ জন টেকনিশিয়ান। এ বাহিনীর সাংকেতিক নাম দেওয়া হয় অপারেশন ‘কিলো ফ্লাইট’।
আরও পড়ুন: সাঈদীকে সেবা দেওয়া ডাক্তারকে হুমকি
অপারেশন ‘কিলো ফ্লাইট’ এর বিমানগুলো ছিল সেকেলে। সেগুলো দিয়েই এই ছোট বাহিনী ১০ দিনে ৪০ টির মতো কমব্যাট মিশন সম্পন্ন করেছিল।
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে ভারতের তেলিয়ামুরা থেকে এলুয়েট হেলিকপ্টার উড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ফুয়েল ডিপোতে গোলা সফলভাবে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। গৌরবময় এ মিশনে সুলতান মাহমুদের সাথে ছিলেন ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম।
আরও পড়ুন: ওমরায় গেলেন ডিবিপ্রধান হারুন
সুলতান মাহমুদের চৌকস অধিনায়কত্বে ‘কিলো ফ্লাইট’-এর মিশনে মুক্তিযুদ্ধের গতি ও বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছিল। দেশাত্মবোধ আর বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই স্কোয়াড্রন লিডারকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
সান নিউজ/এনজে