নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা ভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা চীনের উহান বাংলাদেশীদেরকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে রাতে।
আজ শুক্রবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা, জাহিদ মালেক স্বপন। এসময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীনের উহান প্রদেশ থাকা ৩৬১ জন বাংলাদেশী ফিরে আসার জন্য আবেদন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের অতি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছি আমরা। এখানে যারা ফেরত আসছেন আমাদের জানামতে তারা কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। তারপরও তারা পর্যবেক্ষণে থাকবেন।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট (ডিজি-৭০০১) উহানে থেকে বাংলাদেশীদের ফেরত আনতে যাবে।
আনুমানিক রাত দুইটার দিকে তাদের নিয়ে ফ্লাইটটি বাংলাদেশে অবতরণ করবে। এই বিমানে ৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধাও থাকবে বিমানটিতে। ৩৬১ জনকে প্রোটেক্টেড অবস্থায় বাংলাদেশে আনার পর তাদের সবাইকে আশকোনা হজ্জ্ব ক্যাম্পে আলাদাভাবে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন রাখা অবস্থায় যদি কেউ অসুস্থ হন তাহলে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।এ সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে পরিবারসহ কেউই দেখা করতে পারবে না। নিরাপত্তার জন্য পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী সর্বদা মোতায়েন থাকবে।
স্বাস্থমন্ত্রী এসময় আরও বলেন, বিদেশ ফেরত দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজনরা ব্যাকুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি অনুরোধ করবো কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাইবেন না, তারা কেউ কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও আত্মীয়স্বজনদের উদ্দেশ্যে একই মন্তব্য করে বলেন, চীন ফেরত এ বাংলাদেশিদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করার জন্য যেন উঠে পড়ে না লাগে। সেদিকে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। এর আগে চীন সরকার আমাদের বলেছিল ১৪ দিনের আগে তাদের ফেরত দেওয়া যাবে না। অবশেষে গতকাল সন্ধ্যায় তারা জানিয়েছে, ফেরত দেওয়া সম্ভব। ৩৬১ জনের মধ্যে রয়েছে ১৯টি পরিবার, ১৮ জন শিশু এবং দুটি শিশু রয়েছে যাদের বয়স দুই বছরের নিচে। আমরা খুব অল্প সময়ে সব কিছু প্রস্তুত করেছি। গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের আনার সিদ্ধান্ত হয় এবং আমরা যে প্রক্রিয়ায় সফল হচ্ছি।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, উহানে আমাদের কোনো সরাসরি ফ্লাইট নেই। এ মুহূর্তে চীনের সঙ্গে ফ্লাইটের যোগাযোগ বন্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। তবে আমরা সেখানে মানুষজনকে ভ্রমণে যেতে অনুৎসাহিত করছি। কিংবা যারা আসছেন তারা আসার পরে বিমানবন্দরে নিয়মিত চেকআপ করছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনার জন্য অবস্থান করে। এরমধ্যে উহানে ২২টি ইনস্টিটিউটে আমাদের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। সেখানকার সবাই আবার আসতে চায়নি। এদের মধ্যে যারা শুধু আসতে চলেছে তাদেরই আমরা আনার ব্যবস্থা করেছি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আশাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য, চীনে প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক মানুষজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া ১৭টি দেশে এ রোগ ছড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখনো এ রোগের কোনো প্রভাব বা লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
সান নিউজ/সালি