নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) আমন্ত্রণে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদলের সদস্য টেরি এল ইসলে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধান সমর্থন করে না তাই এই মুহূর্তে এটি করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি এ সরকারের অধীনেই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।
আরও পড়ুন : অক্টোবরের আগে তফসিল নয়
রোববার (৩০ জুলাই) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
টেরি ইসলে বলেন, আপনাদের সংবিধান তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন করে না। এটি করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। যদি এটি ভালো আইডিয়া হয়ে থাকে, যদি তারা (ইসি) এটা করতেও চায়, এখন করতে পারবে না। কারণ এটি করার কোনো আইনি কাঠামো নেই। এই মুহূর্তে এটা করা সম্ভব নয়।
তিনি মার্কিন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন না উল্লেখ করে ইসলে বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের সদস্য হিসেবে আমরা মনে করি, এ সরকারের অধীনে কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।
আয়ারল্যান্ডের সিনিয়র সাংবাদিক নিক পল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করছি সংবিধান অনুযায়ী তারা (ইসি) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে।
আরও পড়ুন :আমরা পদযাত্রায় বাধা দেই নাই
ইএমএফের চেয়ারম্যান আবেদ আলী এসময় বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচন সম্পর্কে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা জানতে চেয়েছেন। আগামী নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আসতে চাইছেন। এ বিষয়ে ইসির বিধিমালা জানতে চেয়েছেন তারা। ইসি তাদের আশ্বস্ত করেছে, পর্যবেক্ষকরা ভোটের আগে ও পরে আসতে পারবেন। কমিশন থেকে কোনো বাধা নেই।
তিনি বলেন, প্রতিনিধিরা ঢাকা-১৭ আসনে হিরো আলমের ওপরে হামলার ঘটনায় ইসি কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। যারা হামলা করেছে তাদের গ্রেফতারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে কমিশন জানিয়েছে।
আবেদ আলী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু অসাংবিধানিক, সে বিষয়ে (প্রতিনিধি) ওনাদের কোনো আগ্রহ নেই। তারা বলেছেন সংবিধানে যেটা আছে সেটার আলোকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। তারা বলছেন, কমিশনের যে আইন আছে, সেটার যেন সঠিক প্রয়োগ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যেন ইসিকে সাপোর্ট দেয়– এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করলে কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এটা তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন :ডেঙ্গু মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি রয়েছে
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবেন কি না, আসতে হলে তাদের কী করণীয় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত আলোচনা হয়েছে যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কীভাবে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন আয়োজন করবে, কীভাবে কাজ করবে, অতি সম্প্রতি একটি সিটি কর্পোরেশন ও একটি সংসদের উপ-নির্বাচনে ছোটখাটো যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, বিশেষ করে প্রার্থীদের আক্রমণ করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে– এ বিষয়গুলো তারা জানতে চেয়েছিলেন।
ইসি সচিব আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যদি আসতে চান তাহলে স্বাগত জানানো হবে। তবে অবশ্যই তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে হবে।
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। বিদেশি অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী ইউসুকি সুগু ও চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী এনডি লিন।
আরও পড়ুন :বিএনপি বৈঠকে না বসায় আমরা হতাশ
এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইএমএফের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহফুজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মজুমদার।
প্রসঙ্গত, ইএমএফের আমন্ত্রণে ছয় সদস্যের একটি বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল নির্বাচন পূর্বপরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) থেকে ঢাকা সফর করছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা টেরি এল ইসলে এই প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য।
সান নিউজ/জেএইচ