নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের নতুন বেতন গ্রেড নির্ধারণের পর একের পর এক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি আদেশ স্পষ্ট না হওয়ায় এসব সমস্যায় শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে।
দীর্ঘদিন ধরে ১১তম গ্রেডের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করার পর ১৩তম গ্রেড পান শিক্ষকরা। গত বছর ৭ নভেম্বর উচ্চতর এই গ্রেড নির্ধারণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় অর্থ বিভাগ। ওই চিঠিতে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড-১৪ (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) এবং বেতন গ্রেড-১৫ (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে গ্রেড-১৩ তে উন্নীত করা হয়। আর প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড-১২ (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে গ্রেড-১১ তে উন্নীত করা হয়।
কিন্তু নতুন এই গ্রেড অনুযায়ী নিম্নধাপে বেতন নির্ধারণে অনেক শিক্ষকের বিদ্যমান বেতনের চেয়ে বেতন কম পাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে নতুন করে অসন্তোষ দেখা দেয়। এরপর ১৩তম গ্রেডের নিম্নধাপে যাদের বেতন কমে যাচ্ছে তাদের ওই গ্রেডের একধাপ ওপরে বেতন নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়ে অর্থ বিভাগকে চিঠি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১২ আগস্ট অর্থ বিভাগ সমস্যা নিরসন করে যাদের বেতন কমে যাচ্ছে তাদের একধাপ ওপরে বেতন নির্ধারণ করে চিঠি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।
কিন্তু এতেও নতুন করে সমস্যায় পড়েন শিক্ষকরা। ২০১৯ সালের নতুন নিয়োগ বিধিমালায় সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতায় বলা আছে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। এ কারণে কোনও কোনও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার সুপারিশ না করে শিক্ষকদের জানিয়ে দিচ্ছেন, যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক নেই, তারা উচ্চতর গ্রেড পাবেন না।
আবার কোনও কোনও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনে করেন, কর্মরত সব শিক্ষকই উচ্চতর গ্রেড পাবেন। তাদের যুক্তি—অর্থ বিভাগ চিঠিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেনি। অন্যদিকে শিক্ষকদের দাবি—এই বিধিমালার আগে যাদের নিয়োগ তারা এই বিধিমালার কারণে উচ্চতর গ্রেড বঞ্চিত হবেন না। নতুন বিধিমালা তৈরি হলেও এখন পর্যন্ত ওই বিধিমালার আলোকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। গ্রেড নির্ধারণ হচ্ছে আগের বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের। এছাড়া ২০১৩ সালের বিধিমালার অধীন নিষ্পন্ন সব কাজ ২০১৯ সালের এই বিধিমালার অধীন নিষ্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ আছে।
২০১৯ সালের নতুন বিধিমালার ‘রহিত ও হেফাজত’ সংক্রান্ত বিষয়ে ১০ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়, “এই বিধিমালা কার্যকর হইবার সঙ্গে সঙ্গে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৩’ এতদ্বারা রহিত হইবে”। আর ২ উপধারায় বলা হয়, ‘উপরোক্ত রহিতকরণ সত্ত্বেও উক্ত বিধিমালার অধীন যে সকল কার্যক্রম নিষ্পন্ন হইয়াছে তাহা এই বিধিমালার অধীন সম্পন্ন হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং এই বিধিমালা জারি তারিখে অনিষ্পন্ন কার্যাদি, যতদূর সম্ভব, এই বিধিমালার অধীন নিষ্পন্ন করিতে হইবে।’
ফলে ২০১৯ সালের নিয়োগ বিধির আগে যে যোগ্যতার শিক্ষকই নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন নতুন বিধিমালার অধীনে তা বৈধ।
উচ্চতর গ্রেডের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি ২০১৯ সালের বিধিমালার অধীন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ নিয়োগবিধি-২০১৯ অনুযায়ী, নিয়োগের ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক (এসএসসি) ও পুরুষদের জন্য স্নাতক। ১৯৯১ সালের নিয়োগ বিধিমালায় সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত ছিল নারীদের এসএসসি এবং পুরুষদের এইচএসসি। আর ১৯৮৫ সালের নিয়োগ বিধিমালায় নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সবার নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করা ছিল শুধু এসএসসি পাস।
শিক্ষকরা অভিযোগ করে জানান, ১৯৮৫ সালের নিয়োগ বিধিমালায় যেসব শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন তাদের অনেকের চাকরির বয়স বেশি নেই। দীর্ঘদিন চাকরি জীবনে নানা অভিজ্ঞতা কোনও যোগ্যতার মাপকাঠিতে নেওয়া হচ্ছে না। শেষ জীবনে অযোগ্যতার গ্লানি নিয়ে চাকরি শেষ করতে হবে তাদের। এই পরিস্থিতি শিক্ষকদের জন্য লজ্জার।