নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশের প্রচেষ্টা না থাকলে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও খারাপ হতে পারতো বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড.খ. মহিদ উদ্দিন।
আরও পড়ুন : বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে
সোমবার (৩ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, মনে রাখতে হবে- যদি আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কিংবা পুলিশের প্রচেষ্টা না থাকতো আমি মনে করি এর চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থা ঢাকায় থাকতে পারতো। কল্পনা করতে পারেন ইংল্যান্ডে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না, কি পরিস্থিতি হয়েছিল সেটা আপনারা জানেন। আমাদের দেশে যে এমন পরিস্থিতি হয় না এর কারণ হচ্ছে দেশে পুলিশের উপস্থিতি ও আইন রয়েছে। তবে যা কিছু ঘটনা ঘটছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে আমরা গভীরভাবে সতর্ক রয়েছি। ডিএমপি কমিশনার এই ব্যাপারে গভীরভাবে সতর্ক থেকে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
ড.খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, আরেকটি বিষয় জানিয়ে রাখি- ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের যে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে তা আরো গতিবান করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশনা রয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার। গত ৪৮ ঘণ্টায় আমরা ১৪৫ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছি। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার হয়েছে ১১৪ জন এবং এর আগের ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার হয়েছে ৩১ জন।
আরও পড়ুন : ছাদে হেলিকপ্টারের অনুমতি
ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বাড্ডাসহ বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাড্ডায় একটি বাসায় ডাকাতির ঘটনায় আমরা ইতোমধ্যে অপরাধীদের চিহ্নিত করেছি। আর বাড্ডায় ট্রাকে গরু বিক্রির টাকা ডাকাতির ঘটনা চলন্ত অবস্থায় সড়কে ঘটেছে। এটা তো আসলে একটু জটিল। প্রথমত যদি ধরেন আপনি একটা ট্রাকের মধ্যে একসঙ্গে ৩০ জন ওঠে যাত্রা করলেন। মাঝখানে গিয়ে দেখলেন আপনার সঙ্গে আটজন লোক অন্য আচরণ করছে। তারাও যাত্রী হিসেবে উঠেছিল। এসব ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের একটু সচেতনতা দরকার। যেটির ব্যাপারে আমরা সবসময়ই ক্যাম্পেইন (প্রচারণা) করে থাকি যে- অপরিচিত কারোর সঙ্গে গাড়িতে উঠবেন না।
তিনি আরো বলেন, গরু বিক্রির টাকা ডাকাতির ঘটনায় আমরা যতটুকু জেনেছি- তাদের কাছে বড় ধরনের কোনো অস্ত্র ছিল না। এসব ঘটনার প্রত্যেকটিতেই আমরা অপরাধীদেরকে চিহ্নিত করার পর্যায়ে আছি। চিহ্নিত করা যাবে না সেটা আমরাও আশা করি না। চিহ্নিত করা গেলেই আসলে কাজ করা সম্ভব।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা যদি চিন্তা করি সমাজ হবে অপরাধমুক্ত তাহলে সেটি আসলে কাল্পনিক চিন্তা। এটি আসলে পুরোপুরি অসম্ভব। আমাদের চেষ্টা করতে হবে। দেখতে হবে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি আছে কি না। আমাদের অনেক কর্মকর্তারা রয়েছে যারা রাতদিন কাজ করছেন।
তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্য পুলিশের কিছু আগাম কার্যক্রম হিসেবে পুলিশি টহল, চেকপোস্ট, গোয়েন্দা কার্যক্রম থাকে।
এবারের ঈদের আগে এসব কাজে কোনো ব্যত্যয় ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ঈদের আগে ১ হাজার ৭৬৪ জন ছিনতাইকারীকে ধরা হয়েছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, মনে রাখতে হবে- ছিনতাইকারীদের আমরা যখন আইনের মাধ্যমে আদালতে পাঠায় তারা একটা সময় জামিন পেয়ে যায়। জামিন পেয়ে আবার সমাজের সঙ্গে মিশে যায়।
আরও পড়ুন : কোরআন পোড়ানোয় ইইউ’র নিন্দা
তিনি আরও বলেন, এই সীমাবদ্ধতা নির্মূল করার ক্ষমতা আমাদের নেই। এগুলোও কিন্তু একটা বাস্তবতা। মনে রাখবেন- ২ কোটি নাগরিক ঢাকায় বসবাস করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ৫০ লাখের বেশি মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। আমাদের দেশ কিন্তু সিঙ্গাপুরের মতো নয় যে- মহাসড়ক থেকে মহাসড়ক হয়ে বেরিয়ে যাবেন। এখানে কোথাও নদী, খাল, কালভার্ট আছে, কোথাও মহাসড়ক। অথচ পৃথিবীতে অনেক দেশে ২ কোটি লোকও নেই। এছাড়া যেসব অপরাধ আমরা আগে থেকে নিবারণ করে ফেলি এ বিষয়ে কিন্তু কোন পরিসংখ্যান নেই। এই পরিসংখ্যান আমিও জানি না, কেউ জানতেও পারে না।
ঢাকার বেশ কিছু স্থানে ছিনতাইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে তালিকাও রয়েছে। ঈদের আগে আমরা ১ হাজার ৭৬৪ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছি। গত দুই দিনে ১৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে- অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এদের অধিকাংশই কিন্তু ছিন্নমূল ও রাস্তায় বসবাস করে। তাদের যেই বয়স তারা সেখান থেকে মাদক জোগাড় করে তা গ্রহণ করে। তারা পরিবারের কাছে ফিরে যায় না। এমন লোকজনই আছে। সার্বিকভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তারপরও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, ঈদের সময় দুটি ঘটনা ঘটেছে। আর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা রোজার সময় ও গত বছরেও ছিল না। আমরা আগেও বলেছি, পুরোপুরিভাবে এগুলো নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব না। ইউরোপের মতো জায়গায় প্রচুর বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের মতো জায়গায় এমন হচ্ছে, তাদেরতো অন্য বস্ত্রের কোনো অসুবিধা নেই, থাকার অসুবিধা নেই।
আরও পড়ুন : সুযোগ সন্ধানীরা দাম বাড়িয়েছে
ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে পুলিশ কনস্টেবল নিহত ও সাংবাদিক আহতের ঘটনাসহ ছিনতাইরোধে পুলিশের কোন গাফিলতি রয়েছে কিনা এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কারো যদি গাফিলতি থাকে আমরা চেষ্টা করি তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে। এটি না করার কোনো কারণ নেই, কারণ আজকে আমি নিজেও প্রশ্নবিদ্ধ। তাই যখনই এই ধরনের ঘটনা ঘটে তখন ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এটি অনেক ডিপার্টমেন্টে চিন্তাও করে না। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ ডিপার্টমেন্টে তাৎক্ষণিক জেরা করা হয়, কেন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে।
মোবাইল ফোন চুরি নিয়ে সাধারণ মানুষের জিডি না করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা জিনিস আমাদের বুঝতে হবে, ব্যক্তিগত জিনিস ও নিজের শরীরের নিরাপত্তা কিন্তু পৃথিবীতে প্রত্যেকের নিজেরই দিতে হয়। রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে। তবে অনেকে দেখা গেছে রাতে বা বাসের বাইরে মোবাইল রেখে কথা বলছে, সেটা টান দিয়ে নিয়ে নিচ্ছে। এই ধরনের বিষয়গুলোর কারণেই কিন্তু মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়ে থাকে।
সান নিউজ/জেএইচ