সান নিউজ ডেস্ক:
চীন এখন মাস্কের নগরী। মরণঘাতি ভাইরাস করোনা থেকে পরিত্রান পেতে সার্জিক্যাল মাস্কই এখন দেশটির মানুষের প্রাথমিক অবলম্বন হয়ে উঠেছে। এই মুহর্তে দেশটির ২০ কোটিরও বেশি মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে। খুব স্বাভাবিকভাবে সংকট দেখা দিয়েছে জীবানু থেকে পরিত্রাণের অন্যতম এই উপকরণটির।
যেহেতু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ভয়াবহ রকমের ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই মাস্কের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে এইসব দেশেও। বাংলাদেশের সাধারন মানুষের কিছু অংশ এরই মধ্যে ঝুঁকেছেন মাস্ক ব্যবহারের প্রতি। তবে প্রশ্নে উঠেছে, এভাবে মাস্ক ব্যবহার করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব কিনা? এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। একপক্ষ বলছেন, করোনা থেকে দূরে থাকতে মাস্ক ব্যবহারের কোন কার্যকারিতা নেই। কেউ কেউ আবার বলছে বলছেন, করোনার মতো ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ব্যবহারের যথাযথ নিয়ম মেনে চলাতেও গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
মাস্ক সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘আতঙ্কিত হয়ে কোনো লাভ নেই। নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু করোনা ভাইরাসটি হাঁচি-কাশি থেকে ছড়িয়ে পড়ছে, তাই একে অন্যের সামনে হাঁচি দেয়া যাবে না। একটু পর পর হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে’।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঠান্ডা, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাস নিতে অসুবিধা, জ্বর, এগুলিই করোনাভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সংস্পর্শে এলে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে যে কেউ। তাই এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রথমেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার সহায়ক হতে পারে, যদি সঠিক আবহাওয়া ও সঠিক উপায়ে এটি ব্যবহার করা হয়।
জর্জিয়ার আটলান্টার ইমোরি ইউনির্ভাসিটি স্কুল অব মেডিসিনের সহকারী প্রভাষক মেরিবেথ সেক্সটন জানান, সর্বাধিক পরিহিত, সস্তা এবং ডিসপোজেবল মাস্ক, যা সার্জিক্যাল মাস্ক হিসেবে পরিচিত, এটি করোনা ভাইরাসকে আটকাতে পারে, তবে নির্মূল করতে পারে না। এমনকি নিখুঁতভাবে ব্যবহারের পরও, এই মুখোশগুলো থেকে কোনো ভাইরাস বা রোগ সংক্রামক জীবাণু পাশ দিয়ে পিছলে যেতে পারে বা চোখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
এ ধরনের সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণত হলুদ বা নিল রংয়ের হয়ে থাকে। যা রাবারের মাধ্যমে শক্তভাবে কানের মধ্যে আটকানো যায়। এর মাধ্যমে মুখ, চিবুক ও নাক ঢাকা সম্ভব হয়।
তবে ব্যবহারের পাশাপাশি এ ধরনের মাস্ক সঠিকভাবে খোলার বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খোলার সময় খেয়াল রাখা উচিত যেন এতে কোনো ময়লা না লাগে এবং একবারে খোলা যায়।
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড- এর ড. জেক ডানিং বলেন, মাস্ক যদি পরতেই হয় এবং এটা থেকে উপকার পেতে হয়, তবে সেটা পরতে হবে সঠিকভাবে। বদলাতে হবে নিয়মিত এবং এগুলো যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, এক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নির্দেশিকা মানতে হবে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অনেকেই ফেস-মাস্ক ব্যবহার করছেন। কিন্তু অনেকেই ভুল পদ্ধতিতে মাস্ক ব্যবহারের ফলে ভাইরাসে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।
কিভাবে সঠিক ভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সেই পরামর্শ দিয়েছেন একজন WHO বিশেষজ্ঞ ।
মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম:
আমরা মাস্ক ব্যবহার করছি ঠিকই কিন্তু রোগ জীবাণুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারছি না।
সার্জিকাল মাস্ক এর দুটি অংশ আছে, একটি নীল অন্যটি সাদা। মূল ফিল্টারটি এই দুই লেয়ারের মাঝে অবস্থিত। জ্বর সর্দি কাশি ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে নীল রঙের অংশটি বাইরে দিকে রেখে সাদা অংশটি ভিতরের দিকে রেখে মাস্ক পরিধান করা উচিত।
আর কেউ যদি রোগমুক্ত ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তবে বাইরের ধুলাবালি ও রোগ জীবাণু যাতে শরীরে সহজে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সাদা অংশটি বাইরে এবং নীল অংশটি ভিতরে দিয়ে পরিধান করতে হবে।
প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নাকের অস্থি সংলগ্ন অংশে সুরক্ষা বেল্টটি ভালোভাবে চেপে দিতে হবে।
কথা বলার সময় মাস্ক পুরোপুরি খুলে কথা বলা উচিৎ। একটি মাস্ক ২৪ ঘণ্টার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা উচিত নয় ।
মাস্ক সংকট:
এদিকে চীনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, কোরিয়াসহ উন্নত দেশগুলোতেই এর চাহিদা বাড়ছে বেশি। ফলে পণ্যের দামও গেছে বেড়ে। অস্ট্রেলিয়ায় এ সপ্তাহে এটার ঘাটতি পড়েছে। তাইওয়ান ইতোমধ্যে কয়েক তাদের উৎপাদিত মাস্ক বিদেশে পাঠানো বন্ধ ঘোষণা করেছে মাসের জন্য। ম্যাকাওতে পাগলপ্রায় ক্রেতাদের মাস্ক ক্রয় কমাতে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হচ্ছে। জাপানে মাস্ক উৎপাদক সবচেয়ে বড় কোম্পানিটি ১৭ জানুয়ারি থেকে সব কর্মীর ছুটি বাতিল করে দিয়েছে।
মাস্কের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চীনের কোথাও কোথাও মাস্ক বিক্রি হচ্ছে স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি দামে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের শেষ দিকে ‘করোনা ভাইরাস’ নামে নতুন এক ভাইরাস শনাক্ত করা হয় চীনে, যার সংক্রমনে এরই মধ্যে প্রায় ১৫০ মানুষের প্রানহানি ঘটেছে দেশটিতে, আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। করোনা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৫টি দেশে।