সৈয়দ মেহেদী হাসান, বরিশাল থেকে:
বাবুগঞ্জ উপজেলার সুগন্ধা নদীর অব্যাহত ভাঙনে এবার ঝুঁকিতে পড়েছে বরিশাল বিমানবন্দর। ইতোমধ্যে নদীভাঙনে ওই উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের ব্লক ও বেড়িবাঁধের প্রায় এক হাজার ফুট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দেবে গেছে ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা গ্রামের সংযোগ সড়কের প্রায় ৪০০ ফুট, তলিয়েছে প্রায় ২৭০ একর জমির ফসল।
আর বরিশাল বিমানবন্দরের উত্তর প্রান্তের রানওয়ের বর্ধিতাংশের জমি ভাঙনের মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, বর্তমানে নদীর ভাঙন পয়েন্ট থেকে বিমানবন্দরের দূরত্ব ৩০০ ফুটেরও কম। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে হাজার কোটি টাকার বরিশাল বিমানবন্দর ও প্রস্তাবিত নতুন বিমানঘাঁটি।
বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক রথীন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, রানওয়ের উত্তর প্রান্তের বর্ধিতাংশের কাছে সুগন্ধা নদীর অবস্থান। ভাঙন আগ্রাসী রূপ ধারণ করলে বরিশাল বিমানবন্দরের জন্য সেটা অবশ্যই বিপদের কারণ হবে। নদীভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত সেখানে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
সুগন্ধার ভাঙনে সর্বশেষ সোমবার (১৭ আগস্ট) রাতে গৃহহীন হয়েছেন রাশেদ খান মেনন মডেল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হাজী আলতাফ হোসেন আকন। তার বসতবাড়ির ৩২ শতাংশ জমি রাতের মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি কমতে শুরু করলে সেই পানি দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হচ্ছে। নদীর সেই ঢলে বিপৎসীমার ওপরে উঠে যায় নদীর পানি। আর তাতেই ভাঙন শুরু হয়েছে সুগন্ধা পাড়ে।
এরই মধ্যে ভাঙনে গৃহহীন হয়েছেন ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের ২৩টি পরিবার। ব্লকবাঁধ ভেঙে ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা সড়কের ৪০০ ফুটের বেশি অংশ নদীবক্ষে হারিয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের আরও প্রায় শতাধিক পরিবারসহ উত্তর ক্ষুদ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আল-কারিম কেরাতুল কোরআন মাদ্রাসা, রাশেদ খান মেনন পাঠাগার, বকুলতলা বাজার, বকুলতলা ময়দান জামে মসজিদ, বেপারি বাড়ি জামে মসজিদ ও মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ।
ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের বকুলতলা ময়দান জামে মসজিদের সম্পাদক জামাল হোসেন গাজী জানান, আকস্মিক ভাঙনে ২৩টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন বকুলতলা বাজার ও ময়দান জামে মসজিদসহ তীব্র ভাঙন ঝুঁকির মুখে রয়েছে সেখানকার আরও ১৪টি স্থাপনা।
রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫নং ওয়ার্ড সদস্য সুলতান মোল্লা জানান, কয়েক বছর আগে বিমানবন্দরের জমি রক্ষায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীরে ব্লকবাঁধ নির্মাণ করা হলেও ওই বাঁধের প্রায় ৮০ শতাংশই এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা সড়কটিও দ্রুত ভেঙে গিয়ে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নদীভাঙনে বিলীন হওয়া বসতবাড়ি এবং ভূমির তথ্যসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে ইউনিয়ন পরিষদ ও ভূমি অফিসকে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে এখনই জরুরি খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি আমরা।’
বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, নদী যে গতিতে ভাঙছে, তাতে বিমানবন্দরের রানওয়ে পর্যন্ত যেতে বেশি সময় লাগবে না। ভাঙন রোধে এখনই স্থায়ী সমাধান করা দরকার।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মহাপরিচালক মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘জিও ব্যাগ কিংবা ব্লক দিয়ে নদী ভাঙন রোধের সাময়িক চেষ্টা করা হয়। স্থায়ী প্রতিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগে নদীশাসন ও গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা স্থায়ী পদক্ষেপের বিষয়ে চেষ্টা করছি।’
সান নিউজ/ এআর