নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্তমানে সারাবিশ্বের মানুষের মাঝে নতুন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। গণমাধ্যমেও তা প্রচার এবং প্রকাশ হচ্ছে গুরুত্বের সঙ্গে।
কিন্তু সাধারন মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে তেমন কোন প্রকার সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মিতু আক্তার ( ৩০)। রাজধানীর কারওয়ানবাজার বাস স্টপেজে তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নিজেদের উদ্যোগে প্রত্যেকের বাড়ি কিংবা ঘরের চারপাশ পরিস্কার রাখা উচিৎ, ঘরের বাইরে মাক্স ব্যবহার করা উচিৎ’। মজার বিষয় হচ্ছে তখন তার নিজের মুখেও কোন ধরণের মাস্ক ছিল না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা আর এক ব্যক্তি খালেদ সাইফুল্লাহ (৩৫) বলেন, আমরা দেখছি ভয়ানক এই ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর জন্য সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য নি:সন্দেহে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তাদেরকে আগে নিজেকে সচেতন রাখতে হবে। টেলিভিশন-পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারিত বিশেষজ্ঞ নির্দেশনাগুলো সতর্কতার সঙ্গে অবলম্বন করতে হবে।
হাতিরপুল এলাকায় মঞ্জুরুল আলম নামে এক সংবাদকর্মীকে দেখা গেল তার সহকর্মীকে এ বিষয়ে জ্ঞান দিতে। শোনা গেল তিনি বলছেন, ‘ঘরের বাইরে বের হলে এই মুহুর্তে সবারই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে ন্যূণতম দেড় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে’। অথচ সেই সংবাদকর্মীর নিজের মুখেই ছিল না তখন মাস্ক এবং কথা বলছিলেন তার সহকর্মীর একেবারে গা ঘেষে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, ৯৯ ভাগ মানুষের মুখেই কোন মাস্ক নেই, যেখানে সেখানে হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন। অনেকে নোংরা জাগায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন কিংবা সময় কাটাচ্ছেন।
কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদ্যোগে করোনা ভাইরাস থেকে প্রতিকার পেতে সচেতনামূলক লিফলেট বিলি করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। তবে লিফলেটের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে দেখা গেছে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীকেই।
করোনা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?
খুব সহজেই এ ভাইরাস একজন থেকে আরেক জনের মধ্যে ছড়াতে পারে। এর মধ্যে:
# শারীরিক ঘনিষ্ঠতা, এমনকি করমর্দন থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে।
# রোগী বা তার জিনিসপত্র ধরার পর ভালো করে হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ, নাকে হাত দিলে এই রোগ ছড়াতে পারে।
# হাঁচি-কাশি থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়:
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও বলছে, কিছু সাধারণ নিয়ম মানলেই এড়ানো যাবে এই সংক্রমণ।
# যতটা সম্ভব ঘরেই থাকার চেষ্টা করুন। সময় কাটানোর জন্য ভালো কোনো সিনেমা দেখুন বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন। তবে বাইরে প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়াই ভালো।
# বাইরে বের হওয়ার আগে সঙ্গে মাস্ক নিতে ভুলবেন না।
# বাস, ট্রেন বা এজাতীয় গণপরিবহনগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
# বাইরে থেকে ফিরে হ্যান্ডওয়াশ বা লিকুইড সোপ দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
# বাইরে যাওয়ার আগে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে যান। সকালে ঘণ্টাখানেকের জন্য জানালা খোলা রাখুন। তাতে পর্যাপ্ত সতেজ বাতাস এবং সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশ করবে।
# সুস্থ এবং শক্তিশালী থাকতে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর ফলমূল এবং পর্যাপ্ত পানি খাবেন। কোনো কিছু খাওয়া কিংবা রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে নেবেন।
# ডিম কিংবা মাংস রান্নার সময় চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত সময় ধরে রান্না করতে। খেয়াল রাখবেন, এগুলো যেন অবশ্যই সেদ্ধ হয়।
# ময়লা কাপড় দ্রুত ধুয়ে রাখার চেষ্টা করুন, দিন বা সপ্তাহ ধরে ফেলে রাখবেন না।
# ঘর পরিষ্কার রাখুন। নিয়মিত আপনার থাকার ঘর এবং কাজের জায়গা পরিষ্কার করুন। এক্ষেত্রে ইথাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করুন। এটি আপনি যেকোনো ওষুধের দোকানেই পাবেন।
# সুরক্ষিত থাকতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার পরিচিত কেউ আক্রান্ত মনে হলেও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যতটুকু পারা যায় রোগীর সহচার্য এড়িয়ে চলাই ভাল। না হলে:
# রোগীর কাছ থেকে আসার পর ভালো করে হাত ধুতে হবে। হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। প্রয়োজনে রোগীর কাছ থেকে দূরে থাকুন।