নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও সক্রিয় রয়েছে’ অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সরকার জঙ্গিগোষ্ঠীর বিষদাঁত ভেঙে দিলেও গোপনে গোপনে তাদের এখনও সক্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তারা সুযোগ খুঁজছে। আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলায় কোনও ষড়যন্ত্রকারীর ঠাঁই নেই। প্রশ্রয় নেই কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তির। সব ষড়যন্ত্র মাড়িয়ে জনগণের ভালোবাসা এবং সমর্থন নিয়ে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চলমান যে যাত্রা, তা এগিয়ে যাবে অদম্য গতিতেই।’
দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের সংসদ ভবনের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
দেশে সিরিজ বোমা হামলার জন্য বিএনপি সরকারকে দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলার জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি, নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, জনবল ও বোমা সরবরাহ এতসব একদিনে গড়ে ওঠেনি। তবে রাষ্ট্রযন্ত্র সেদিন নীরব ছিল কেন? নিশ্চয়ই সরকার প্রশ্রয়দাতা আর পৃষ্ঠপোষক ছিল। না হলে কীভাবে এ দীর্ঘ প্রস্তুতি জঙ্গিরা গ্রহণ করলো? এ দেশের রাজনীতিতে তেমনি ১৫ আগস্টের মাধ্যমে নির্মম হত্যাকাণ্ডের সূচনা হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। আবার ২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলাও সেই আগস্ট মাসে। তাই বলবো, ১৫ আগস্ট, ১৭ আগস্ট, ২১ আগস্ট সবই একসূত্রে গাঁথা। এসব হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড বিএনপি। এসব হত্যা, সন্ত্রাসও ষড়যন্ত্রের অংশ।’
বিএনপিকে জঙ্গিবাদের আশ্রয়দাতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এদেশে হত্যা-সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আর জঙ্গিবাদকে তারাই প্রশ্রয় দিয়েছে। লালন-পালন করে ক্যানসারে রূপান্তর করেছে। সেদিনের বোমা হামলা ছিল জেএমবিসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর শক্তি প্রদর্শন। এটি ছিল প্রকাশ্যে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। একযোগে তারা তাদের শক্তি জানান দিয়েছিল। ক্ষমতার মসনদে থেকে তাহলে কী করেছিল বিএনপি?’
আগস্ট মাস এলেই দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ শঙ্কায় থাকে উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও সক্রিয় রয়েছে। তারা সুযোগ খুঁজছে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আর কোনও ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট এ দেশে যেন না আসে। না আসে ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা কিংবা হলি আর্টিজানের ঘটনা। চাই না রমনা বটমূলের মতো নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা আছেন বলেই ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। জাতির কলঙ্কমোচন হয়েছে। তিনি আছেন বলেই যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে। জাতি পাপের বোঝা থেকে মুক্ত হয়েছে। তিনি আছেন বলেই জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এবং শক্ত হাতে দমন করা হচ্ছে।’
বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এ দেশের রাজনীতিতে হত্যা, সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার তাদের হাত ধরেই। এখনও তারা সেই অপচর্চা অব্যাহত রেখেছে। নির্লজ্জভাবে তারা গুম-খুনের কথা বলে। আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, তারা কি অপারেশন ক্লিন হার্ট পরিচালনা করেনি? ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় ৯৭ জনকে হত্যা করেছিল। অপারেশন ক্লিন হার্টের হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি দিয়েছিল। অথচ আজ মানবাধিকার আর হত্যার বিচারের কথা বলে। গুম-খুনের কথা বলে। শেখ হাসিনা কোনও খুনিকে ইনডেমনিটি দিয়ে বাঁচাননি, খুনকে জায়েজ করেননি। হত্যা-সন্ত্রাস-ভয়ের রাজনীতির যাদের ঐতিহ্য, তাদের ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নলে।’
আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেন, উন্নয়নবিরোধী অপশক্তি এখনও আছে চারপাশে। তারা দেশের উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়াকে মেনে নিতে পারে না। উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এখনও সুযোগ খুঁজছে। তারা শান্তি ও স্বস্তির বাংলাদেশ চায় না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধ আগামীর পথে এগিয়ে যাওয়া তাদের গাত্রদাহ। তারা দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যেতে চায়, চায় সংঘাতে জর্জরিত রক্তময় প্রান্তর। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে চায়। কিন্তু যতক্ষণ দেশরত্ন শেখ হাসিনা আছেন, আমাদের সমৃদ্ধ আগামীর বিনির্মাণে অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাবেই। সতর্কতার পাশাপাশি আমাদের সুদৃঢ় ঐক্যের মন্ত্রে উজ্জীবিত হতে হবে সম্মিলিত প্রয়াসে। শেখ হাসিনার হাতকে করতে হবে শক্তিশালী।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।