নিজস্ব প্রতিনিধি:
সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য সরকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে তাতে করোনার প্রভাব হিসাব করা হয়নি বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত করা হয়েছে। এই ধরনের প্রবৃদ্ধি হিসাব সরকারের নীতি প্রণয়নে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। এছাড়াও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রয়োজনে যুক্ত দেশগুলোও বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সিপিডি। রোববার (১৬ আগস্ট) আয়োজিত এক অনলাইন বিফ্রিংয়ে এসব কথা বলা হয়।
সিপিডি’র বিশ্লেষণে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের হিসাব করেই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব দেওয়া হয়েছে। তবে করোনা সময়কালীন অর্থ বছরের শেষ তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) তথ্য-উপাত্ত প্রাক্কলিত জিডিপিতে হিসাব করা হয়নি। করোনার প্রভাব হিসাবে নিলে প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। সিপিডি’র আগের হিসাবে এই হার ২.৫ শতাংশ বা তার কাছাকাছি হওয়ার কথা।
করোনার প্রভাব হিসাবে নিয়ে প্রকৃত তথ্য উপাত্ত দিয়ে হিসাব করলে যে প্রবৃদ্ধি পাওয়া যাবে, সেটা অন্য অনেক দেশের তুলনায় সম্মানজনক হবে বলে মনে করে সিপিডি।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে -০.৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১.৮১ শতংশ। সেখানে বাংলাদেশের ৫.২৪ শতাংশ।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত করা হয়েছে। এটিকে সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি শুধু সংখ্যা নয়। যদি দারিদ্র্য না কমে, বৈষম্য যদি বেড়ে চলে, কর্মসংস্থান তৈরি না হয়; তাহলে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দিয়ে কোনও কাজ হয় না।’ প্রবৃদ্ধি এখন রাজনৈতিক সংখ্যা হওয়ায় তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতাও খর্ব করা হচ্ছে বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন।
তথ্য উপাত্তের দুর্বলতা দূর করতে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। প্রতি তিন মাস পর জিডিপি’র হিসাব করা ও সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য অঞ্চলভিত্তিক জিডিপি’র হিসাব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উপাত্তের জন্য আলাদা একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করে সিপিডি’র ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকার চাইলে সিপিডি সব ধরনের সহায়তা করবে।’
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকার জিডিপি’র যে ধরনের প্রাক্কলন করেছে, তাতে দারিদ্র্যের হার বাড়ার কথা নয়। আর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা যদি না বাড়ে, তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোরও কথা নয়। সরকারের মধ্যে এত উদ্বেগ সৃষ্টির কিছু নেই।’