নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর তাণ্ডব, নিহত বেড়ে ২১
রোববার (২ এপ্রিল) বিকেলে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো.আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
প্রথম আলোর সম্পাদকের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন : রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
এ দিন সকালে হাইকোর্টে এ জামিন আবেদন করা হয়।
গত ২৯ মার্চ রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন আইনজীবী আবদুল মালেক। এ মামলায় প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন : ৩০ মে নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু
মামলার এজাহারে অনুযায়ী, মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এটি প্রথম আলো তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে। সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। শিশুটির নাম জাকির হোসেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে- ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।’
আরও পড়ুন : পেঁয়াজের কেজি ২৫ টাকা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদটি স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন।
এতে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে দেশের জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মহান স্বাধীনতা দিবসে এ সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন : বাড়তে পারে তাপমাত্রা
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে একাত্তর টিভির সংবাদে বলা হয়, প্রথম আলো পত্রিকা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা ঐ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে ও নাম-পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয় শিশুটির নাম জাকির হোসেন। কিন্তু অনুসন্ধান করে দেখা যায় ঐ শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। তার বাড়ি সাভার থানার কুরগাঁও পাড়ায়। তার বাবা একজন রাজমিস্ত্রি ও মা মুন্নী বেগমের ৩ সন্তানের মধ্যে মেজো সন্তান সবুজ।
আরও পড়ুন : যুদ্ধে ইউক্রেনের ২৬২ ক্রীড়াবিদ নিহত
ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, সে দিনমজুর। কিন্তু ৭ বছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝেমধ্যে ফুল বিক্রি করে।
এজাহারে বলা হয়, শামসুজ্জামানের প্রস্তুত করা প্রথম আলোর ঐ সংবাদে আরও বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’।
আরও পড়ুন : প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন
প্রকৃতপক্ষে ঐ শিশুটি এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। শিশুটি জানায়, সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এ ছবি তুলেছে।
এতে প্রমাণিত হয়, স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এ মিথ্যা সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন করে সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : বেনাপোলে আটকা হাজারো পণ্যবাহী ট্রাক
ফলে দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রেক্ষিতে ২৯ মার্চ সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া নামের একজন বাদী হয়ে ডিএমপির তেজগাঁও থানায় সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
আরও পড়ুন : গ্রেফতার ইস্যুতে আইজিপি, ওয়েট অ্যান্ড সি
মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি ফটোকার্ডে একজন দিনমজুরের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়। কিন্তু সে উদ্ধৃতির সাথে জুড়ে দেওয়া হয় একটি শিশুর ছবি। দিনমজুরের উদ্ধৃতির সাথে শিশুর ছবি প্রকাশের অসংগতির কারণে ১৭ মিনিটের মধ্যেই ফটোকার্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে প্রত্যাহার করে সংশোধনী দেয় প্রথম আলো।
সান নিউজ/এনজে