স্টাফ রিপোর্টার : তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেফতারের বিষয়টি আগে বললে ভালো হতো।
আরও পড়ুন : সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি এ ব্যাপারে একমত, তাকে (শামসুজ্জামান) গ্রেফতার করার পর, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এ কথাটি বললে ভালো হতো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনলাইন ভার্সন প্রেস কাউন্সিলের অধীনে আসেনি। অনলাইন নিউজ মিডিয়া ইজ নট আন্ডার দ্য জুরিসডিকশন অব প্রেস কাউন্সিল, অর ফেসবুক পেজ অফ এনি নিউজ পেপার ইজ নট আন্ডার দ্য জুরিসডিকশন অব প্রেস কাউন্সিল এবং প্রেস কাউন্সিলের তিরস্কার করা ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা নেই।
আরও পড়ুন : জামিন নামঞ্জুর, শামসুজ্জামান কারাগারে
তথ্যমন্ত্রী বলেন, তাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তার আগে মামলা হয়েছে। মামলা হওয়ার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোর্টে প্রডিউস করা হয়েছে। এখন প্রথম আলো যে ব্যাখ্যা দিয়েছে কোর্টে সে ব্যাখ্যা দেবে, কোর্ট সেটার বিচার করবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২৬ তারিখ অনলাইনে যে সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে এটি অবশ্যই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিমূলে আঘাত হানা হয়েছে। স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে, জাতীয় স্মৃতিসৌধ আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, সেখানে একটা ছেলেকে ১০ টাকা দিয়ে ফুসলিয়ে তাকে দিয়ে কথা বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সে যেটি বলেনি সেটি প্রচার করা হয়েছে, এটি ঠিক হয়নি বলেই তো তারা সরিয়ে নিয়েছে। এখানে অবশ্যই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিমূলে আঘাত হানা হয়েছে।
আরও পড়ুন : দু-তিনটি মামলার তথ্য জানি
তিনি আরও বলেন, তুলে নেওয়া এবং গ্রেফতার হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। কাউকে অপরাধবিহীনভাবে কেউ যদি নিয়ে যায় সেটা তুলে নেওয়া। আর কারও অপরাধ হয়েছে, মামলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কাউকে যদি নিয়ে যায় সেটা হচ্ছে গ্রেফতার করা। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি যদি কাউকে আঘাত করে আহত করি এবং এরপর সরি বলি তাহলে কি আমার অপরাধ ঢেকে যায়?
ভুল হতে পারে- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন পাল্টা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভুল। রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে আঘাত হেনে সেটি কি ভুল? ভুল যদি হয় তারা সেটা আদালতে ব্যাখ্যা দেবে। কিন্তু যে সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে সেটি এখনো ফেসবুকে আছে। এখনো তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছে। সরে গেলেও তো সরে যায় না যেকোনো জিনিস।
আরও পড়ুন : সাংবাদিক শামসুজ্জামান আদালতে
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নাসিমনগরের ঘটনা সেটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিছুক্ষণ পরে। কিন্তু এরপর তো দেশে দাঙ্গা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনা সেটাও কিছুক্ষণ পর সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এরপরও দেশে হাঙ্গামা হয়েছে। অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। সুতরাং এটা আদালতে তারা ব্যাখ্যা দেবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের আইন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করেছে। ইউএসএতে সাইবার ল’ অ্যান্ড পানিশমেন্ট ইন ইউএসএ। ইউএসএতে এর শাস্তি ২০ বছর এবং ডিজিটাল অপরাধের কারণে যদি কারও মৃত্যু হয়, লাইফ টাইম প্রিজন (যাবজ্জীবন কারাদণ্ড)।
আমাদের দেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অত টাফ নয়। ইউএসএ’র ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট টাপার দেন আওয়ার ল’।
আরও পড়ুন : আ'লীগ ৪র্থ মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার ইঙ্গিত
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গার্ডিয়ানের জানুয়ারি মাসের রিপোর্ট, এভরি ডে ৯ পার্সেন্ট ইজ অ্যারেস্টেড ইন ইউকে বিকজ অফ দ্য ডিজিটাল অফেন্স।
ডিজিটাল অফেন্সের কারণে পার ডে অন ইন অ্যাভারেজ ৯ পার্সেন্ট ইজ অ্যারেস্টেড। তিনি বলেন, আমাদের দেশে হচ্ছে? হচ্ছে না। কারণ এ আইন সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।
জামিন নামঞ্জুর, শামসুজ্জামান কারাগারে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত।
আরও পড়ুন : প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা
শামসুজ্জামানকে আজ আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার পরিদর্শক আবু আনছার।
শামসুজ্জামানের পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী, প্রশান্ত কুমার কর্মকার। আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন।
এদিন সকাল ১০ টার দিকে শামসুজ্জামানকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানির সময় তাকে এজলাসে তোলা হয়।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের গণতন্ত্র পরিপক্ব
বুধবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁও থানায় শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।
মামলার এই তথ্য নিশ্চিত করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপূর্ব হাসান জানান, মো. গোলাম কিবরিয়া বাদি হয়ে শামসকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৫৮।
মামলার এজাহারে বলা হয়, শামসুজ্জামানের প্রস্তুত করা প্রতিবেদন প্রথম আলোতে স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের কারণে বাংলাদেশেসহ বহিঃবিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন : মামলার পর আটক শামসুজ্জামান
একাত্তর টিভির একটি প্রতিবেদনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে প্রথম আলোর প্রতিবেদন।
প্রসঙ্গত, একই ঘটনায় বুধবার মধ্যরাতে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, শামসুজ্জামান, সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে আবদুল মালেক নামে এক আইনজীবী রাজধানীর রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
সান নিউজ/এইচএন