নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার কোন প্রকার তথ্য দিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। আইনি নোটিশ পাঠিয়েও লাভ হচ্ছে না’।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগের কথা তুলে ধরেন সংগঠনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
নির্বাচনী প্রার্থীদের তথ্য না দেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘কমিশন এবার তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে এর আগে সব সময় তথ্য পেয়ে এসেছি। এবার তারা তথ্য দিচ্ছে না। এটার কারণ কি, নাকি এটা তাদের অযোগ্যতা, তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। তাতেও কোন জবাব না পেয়ে সর্বশেষ আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। তা সত্ত্বেও তারা কোনো টু শব্দ করছে না।
তিনি বলেন, তথ্য পাওয়ার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনে এ তথ্য জানা অপরিহার্য। তারপরও নির্বাচন কমিশন কোনো কর্ণপাত করছে না। তারা আইন-কানুন, বিধি-বিধানের কোনো তোয়াক্কা করছে না। নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদ জানান তিনি।
আইনি নোটিশের পরও নির্বাচন কমিশন তথ্য না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও এক প্রশ্নের জবাবে জানান বদিউল আলম মজুমদার।
বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ী বেশি দেখা যাচ্ছে। তাতে মনে হচ্ছে, রাজনীতি এখন পুরোপুরি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এতে আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ব্যবসায়ীদের করায়ত্ব হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি এখন ধনাঢ্য ও অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করছে।’
এর ফলে প্রার্থীদের মানের অবনতি হচ্ছে উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন, দেখে মনে হচ্ছে কাউন্সিলর প্রার্থীও দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে হচ্ছে। অথচ শুধুমাত্র মেয়র পদে দলীয় ভিত্তিতে প্রার্থী হবেন। কিন্তু কাউন্সিলর পদে নয়। যদিও বিষয়টি আমরা নিশ্চিত নই। তবে দলীয়ভাবে কাউন্সিলর প্রার্থী হলে প্রার্থী সংখ্যা কমে যায়। আর প্রার্থীদের সংখ্যা কমে যাওয়া নাগরিকদের জন্য ইতিবাচক নয়। নির্বাচনে বেশি প্রার্থী মানেই যোগ্যপ্রার্থীর অংশ গ্রহণ। আর এতে বেশি যোগ্য প্রার্থীই নির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা রয়ে যায়।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক পলিথিনে মোড়ানো পোষ্টারের বিষয়ে বদিউল আলম বলেন, এরইমধ্যে উচ্চ আদালত লেমিনেটিং করা পোষ্টার প্রদর্শনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কিন্তু এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের কোনো সক্রিয়তা নেই বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থা। কেউ যেন দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। যাতে সরকারি দল বা সরকার তাদের উপর বিরাগভাজন হবে। এটা কিন্তু একটা অশনি সংকেত। তার মানে অন্যায় আরও বেড়ে যাবে।
ইভিএম ভোটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা নিজেই মেশিনকে অপারেট করে যাদের আঙ্গুলের ছাপ পড়ে না, তাদের ভোট দিতে পারতেন। এরকমভাবে তিনি ২৫ শতাংশ ভোট দিতে পারবেন। এখন এটি যদি চালু থাকে তাহলে একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা তাদের ক্ষমতা বলে তাদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দেয় তাহলে সেটি হবে ভয়ানক অবস্থা। আমরা জানিনা এ নির্বাচনে এ রকম এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে কিনা।
তিনি বলেন, ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়া হলে তাতে তো একটা ডকুমেন্ট থাকে। কিন্তু ইভিএমে কাকে ভোট দিয়েছেন তার কোনো ডকুমেন্ট থাকবে না। একজন ভোটার তার প্রার্থীকে ভোট দিলেন কিন্তু কাউন্ট হলো অন্যপ্রার্থীর পক্ষে। এ ক্ষেত্রে অডিট করার কোনো সুযোগ নাই। নির্বাচন কমিশন যা বলবে তা ই বিশ্বাস করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার, সুজনের সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।