বনিক কুমার, গোপালগঞ্জ থেকে:
নানা প্রতিকূলতায়ও বাংলাদেশ বেতারের গোপালগঞ্জ কেন্দ্র বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। সমস্যার পাহাড় থাকলেও এই কেন্দ্রটি নিজস্ব উদ্যোগে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে চলছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মধন্য ভূমিতে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ বেতার, গোপালগঞ্জ (এফএম ৯২.০ মেগাহার্জ) কেন্দ্রের। এই কেন্দ্রটি থেকে খুলনা, বরিশাল, মাদীরীপুর, ফরিদপুর ও নড়াইল জেলার মানুষ অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। কিন্তু টাওয়ার সেটিংজনিত কারণে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান শোনা যায় না।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কেন্দ্রটি জাতির পিতার নীতি-আদর্শ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি দায়বদ্ধ থেকে জেলার তৃণমূল মানুষের জীবন মানের উন্নয়নে তথ্য, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে আসছে। এসব অনুষ্ঠানে জেলার বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, জেলা প্রশাসক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ব্যক্তি, সাংবাদিক, স্থানীয় শিল্পী উপস্থাপক-উপস্থাপিকারা অংশ নিয়ে আসছেন।
চলতি বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। কেন্দ্রটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মুজিববর্ষ এবং শোকের মাস আগস্ট ২০২০ যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালনে প্রচার করছে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
মুকসুদপুর উপজেলার জলিলপাড় গ্রামের বিধান চন্দ্র ঠিকাদার, মম্মথ বালা ও বানিয়ারচর গ্রামের গণপতি মণ্ডল এবং ফরিদপুর জেলার মধুখালী গ্রামের গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘আমরা অনেক আগের থেকে বেতার শুনি। গোপালগঞ্জ কেন্দ্র হওয়ার পর ভেবেছিলাম, এই অঞ্চলের সকল ধরনের খবরা-খবর শুনতে ও জানতে পারবো। কিন্তু তার কিছুই হলো না। আমরা এই স্টেশনের অনুষ্ঠান শুনতে চাই।’
আবৃত্তি শিল্পী প্রদ্যোত রায় বলেন, ‘গোপালগঞ্জ বেতার যেসব অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে, তা আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার হয়ে থাকে। সব অনুষ্ঠান আমি শুনি। আমার কাছে ভালোই লাগে।’
জেলা কালচারাল অফিসার আল মামুন বিন সালে বলেন, ‘গোপালগঞ্জ কেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গরুপে চালু হলে এ জেলার শিল্প, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।’
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এহিয়া খালেদ সাদী বলেন, গোপালগঞ্জে যে প্রতিভাবান শিল্পীরা রয়েছেন, তাদের দিয়েই এই বেতার কেন্দ্রটিকে ভালো মানের কেন্দ্রে রুপান্তরিত করা সম্ভব। তবে সকল ধরনের ইন্সটুমেন্ট এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তাহলেই গোপালগঞ্জে স্থাপিত কেন্দ্রটির উদ্দেশ্য সফল হতো।
বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ বেতার, গোপালগঞ্জ কেন্দ্রটিকে দ্রুত রাজস্বখাতে আনাসহ সকল সমস্যার সমাধান করে আধুনিক যুগোপযোগী গণমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
গোপালগঞ্জ স্টেশনের উপ-আঞ্চলিক প্রকৌশলী এম এস সোবাহান মাহমুদ বলেন, ‘এর পরিধি হচ্ছে কেন্দ্রবিন্দু থেকে চারপাশের ৫০ কিলোমিটার। এর আওতায় যেসব মানুষ বা শ্রোতা রয়েছেন তারা আমাদের স্টেশনের অনুষ্ঠান (এফ এম ৯২.০ মেগাহার্জ) শুনতে পারবেন। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর এলাকার শ্রোতারা শুনতে পারেন না। বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের জানানো হয়েছে।’
সহকারী পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মুকসুদপুর উপজেলার শ্রোতাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, তারা ঠিকমতো শুনতে পারেন না। তাই পরিমাপ জানতে টাওয়ার সেটিং ঠিকমতো হয়েছে কি না, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
পরিচালক শ্যামল কুমার দাস বলেন, ‘জাতির পিতার পূণ্য জন্মভূমিতে অবস্থিত বাংলাদেশ বেতার, গোপালগঞ্জ কেন্দ্রটি প্রকল্পের আওতাধীন থাকায় বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন লোকবল স্বল্পতা, বাজেট, যানবাহন ও টেলিফোন লাইন না থাকা ইত্যাদি। এতোসব সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা নিরলস পরিশ্রম, আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা, পেশাদারিত্ব, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতায় মানসম্পন্ন সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দিয়ে চলেছি।’
গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদার কেন্দ্রটি পরিদর্শনে এসেছিলেন। তিনি কিছু সমস্যার সমাধান এবং দুইজন নিরাপত্তা প্রহরী, একজন অফিস সহায়ক ও একজন কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সমস্যা সমাধানেরও পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
সান নিউজ/ এআর