নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন রাজধানীতে ঢাকার আশেপাশের জেলা থেকে মানুষের সমাগম বাড়তে পারে এমন আশংকা পুলিশের। আর তা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে পুলিশ। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন দিন আগে গত বুধবার নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন ( ইসি)। সেই বৈঠকে ভোটের দিন বহিরাগতদের রাজধানীমুখী হওয়া ঠেকাতে ঢাকার প্রবেশ পথে তল্লাশীর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
কিন্তু পহেলা ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরও আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন জড়ো হতে শুরু করেছেন ঢাকায়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উভয় দলেরই বিভিন্ন জেলা শাখা এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করেছেন ঢাকায়। তারা নিজ নিজ দলের মেয়র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন, কেউ কেউ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাচন পরিচালনাসহ বিবিধ কাজে। ঢাকার বাইরে থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের রাজধানীতে এনে জড়ো করার বিষয়টি দুই দলেরই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক নির্দেশনা বলে জানা গেছে।
এদিকে পিছিয়ে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তাদের অনেকে নিজ নিজ এলাকা থেকে আত্মীয়-স্বজন-কর্মী-সমর্থকদের এনে নিজ নিজ নিজ ওয়ার্ডে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আর সেই বহিরাগতরা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা।
শুধু প্রচার-প্রচারণার কাজের জন্যই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই দলেরই শীর্ষ কয়েক নেতা সান নিউজকে বলেন, ভোটের দিন মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে অনেক ধরণের কৌশল অবলম্বন করতে হয়। এটিও তার অংশ। মূলত ভোটের দিনকে সামনে রেখেই বাইরে থেকে নেতাদের ঢাকায় জড়ো করা হচ্ছে বলে জানান তারা। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি কেন্দ্রে-কেন্দ্রে পাহারা দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে অতিরিক্ত মানুষ সমাগমের বিষয়ে অভিন্ন সুর তাদের কথায়।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা জানান, বেশ কয়েকটি জেলার মূল দল এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের জেলা-উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ পদ-পদবিধারী অনেক নেতাই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাদের অনেকে দলের দুই দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনের নির্বাচন পরিচালনা, সমন্বয়সহ করাসহ গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনার দায়িত্বও পালন করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগেরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আরও আগে থেকেই ঢাকা জড়ো হতে শুরু করেছেন ঢাকাতে। তারা নিয়মিতভাবে দক্ষিণে শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তরে আতিকুল ইসলামের পক্ষে নিয়মিত প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।শুধু প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ, মিছিল, মিটিং-ই নয়, ভোটের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্রে-কেন্দ্রে পাহারায় থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যে কোনো ধরনের নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য তাদেরকে কেন্দ্রীয়ভাবেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতারাও বলছেন, এবার যেহেতু শেষ পর্যন্ত লাড়াই করা হবে, তাই ভোটের দিন ভোর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্র পাহারা দেবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ কাজে ঢাকা মহানগর নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও মূল দল এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় জড়ো করা হচ্ছে।
এর প্রতিফলন এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে। কয়েকদিন আগে থেকেই ঢাকায় বিভিন্ন কাজের সূত্রে আসা কর্মমুখী মানুষের জন্য অধিকাংশ হোটেলে রুম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সুযোগ বুঝে কোন কোন হোটেল তাদের রুম ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০০৯ সালে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন কমিশন মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী প্রচারের বাইরে রাখার বিষয়টি বিধিমালায় যুক্ত করে।
কিন্তু সেই বিধি লংঘনের অভিযোগও উঠতে থাকে একের পর এক। ২০১৮ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে সেখানে গিয়ে হাজির হন খুলনার নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য।
একই ধরণের আচরণ বিধি লংঘনের ঘটনা ঘটে বরিশাল এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও। যার রেশ রয়ে যায় ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনেও। এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কথা ওঠে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র পক্ষ থেকে। নির্বাচন কমিশনের খানিকটা ভূমিকার কারণে সেই বিতর্ক এবং মন্ত্রী-এমপিদের মাঠে নামা বন্ধ হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না দুই দলের পক্ষেই বহিরাগতদের ঢাকা জড়ো হওয়ার বিষয়টি। শুধুমাত্র ভোটের দিন ঢাকার প্রবেশ পথে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে বহিরাগতদের কতোটুকু ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে রয়েছে বড় প্রশ্ন।