সান নিউজ ডেস্ক : সকালে জাতীয় বস্ত্র দিবস উদযাপন ও ৬টি টেক্সটাইল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: সন্ধ্যায় আসছেন ডেরেক শোলে
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় বস্ত্র দিবস উদযাপন ও ৬টি টেক্সটাইল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্ত্র মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ খাতকে সুসংহত ও গতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আমাদের সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, আমরা বস্ত্রশিল্প খাতকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম করে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্রখাতের অবদান অপরিসীম। আমাদের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ অর্জিত হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে যার ৫৩ শতাংশই নারী। পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটিরও বেশি মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বস্ত্রখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প মৃতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে
তিনি বলেন আরও, আমাদের বস্ত্র উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানির ঐতিহ্য রয়েছে। মেয়েদের কর্মসংস্থানে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে পোশাক শিল্প। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীরা এসে কাজ করে। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও তারা বিশেষ অবদান রাখছে। একেকটি পরিবারও আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য মোট রপ্তানিতে সিংহভাগ অবদান রেখে রপ্তানি আয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। আশির দশকের শেষার্ধে পাট ও পাটজাত পণ্যের আয়কে অতিক্রম করে পোশাক শিল্প রপ্তানি আয়ে প্রথম স্থানে চলে আসে। ১৯৮১-৮২ সালে মোট রপ্তানি আয়ে এই খাতের অবদান ছিল অতি সামান্য।
সরকারপ্রধান বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশের ৪৫.৭০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা ২০২১ সালের তুলনায় ২৭.৬৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পোশাক রপ্তানি ১৫.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য পোশাক খাত থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের পণ্য রপ্তানি করা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই বাংলাদেশ ২০২২ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে একটি নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে। করোনা মহামারির ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত রাখতে সরকারের পোশাক খাতে ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনার ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটেও এ খাত এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, ন্যূনতম মজুরি কমিশন শক্তিশালী করা, শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম বিধিমালা জারির মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিল্প এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন কর্মপরিবেশকে করেছে নিরাপদ। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরে ফলে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের কারখানাগুলো সবুজ কারখানার মানদণ্ডে বিশ্বে এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের হিসাব মতে শীর্ষ ১০০ গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে ৫০টিই বাংলাদেশের। আর সেরা ১০ জনের মধ্যে আটজন এখান থেকেই এসেছেন। এই অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত বাংলাদেশে এখন সবুজ কারখানার সংখ্যা এখন ১৮৭টি ।
আরও পড়ুন: গঠিত হলো জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ
তিনি বলেন, বৈশ্বিক নানা কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা উপকরণের দাম বাড়ছে। এতে করে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। তবে, কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব। পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ সমন্বয় করতে হবে।
বস্ত্রখাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পরিপূর্ণ সুবিধাদি গ্রহণ এবং এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনবল সৃষ্টি করার জন্য আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বস্ত্র অধিদপ্তরে দ্রুততর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করা হয়েছে এবং ই-নথির মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এখন সহজে ও স্বল্প সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় সকল সেবা গ্রহণ করতে পারছেন, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁতশিল্পের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প। দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ তাঁতশিল্প যোগান দিয়ে থাকে। সরকার তাঁতিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, মূলধন যোগান, গুণগত মানসম্মত তাঁতবস্ত্র উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাঁতিদের ব্যবহার্য উপকরণে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ও সমুদয় মূল্য সংযোজন কর মওকুফ করে আমদানির সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: তেঁতুলিয়ায় টিউলিপ বাগানে ড্যানিশ রাষ্ট্রদূত
তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে হলে বিশ্ববাজারের সাথে ধারাবাহিকতা রেখে টেক্সটাইল পণ্যের বৈচিত্রকরণ ও পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। একই সাথে, আমাদের বিদ্যমান পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে ‘ভ্যালু অ্যাড’ এবং দেশের রফতানি আয় বাড়াতে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে। আমাদের রপ্তানি পণ্যের তালিকা খুব বেশি নয়, অনেকটা পোশাকশিল্প-নির্ভর। আবার আমাদের রপ্তানি মূলত উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশ-নির্ভর। আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি নতুন নতুন দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে আমি রপ্তানিকারকদের আরও উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা এগিয়ে আসুন, আমাদের সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মসলিন একসময় জগদ্বিখ্যাত ছিল। মসলিনের এই হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে ঢাকাই মসলিন কাপড় তৈরির কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলা, সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও ঢাকাই মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার করে হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। মসলিনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবোতে ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও পাটপণ্যের প্রসারেও আমাদের সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছি। এখন পাট দিয়ে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি বস্ত্র নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ বলেছিলেন, “বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে বিনা দ্বিধায় এ আশ্বাস আপনাদের দিতে পারি যে, আমাদের আমদানি নির্ভর অর্থনীতি প্যাটার্ন খুব শিগগিরই পাল্টে যাবে এবং জিনিসপত্রের দাম কমানোও সম্ভব হবে।”
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাসে কিশোরের মৃত্যু
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ।
সান নিউজ/এসআই