আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি : বান্দরবানে রুমা উপজেলায় পাইন্দু ইউনিয়ন এলাকায় সেনাবাহিনী ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন প্রাণ ভয়ে ৪ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে উপজেলা সদরে আশ্রয় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন : সারদা একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রী
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুন শিবলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মুয়ালপি পাড়ার (গ্রাম প্রধান) সানা অং মারমা জানান, শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সাথে সেনাবাহিনীর দফায় দফায় যুদ্ধ চলছে। সেজন্য তার পাড়ার ৫২ পরিবারের মধ্যে ৪০ পরিবার রুমা উপজেলার মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের হল রুমে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাকি ১২ পরিবার কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন এই মুহুর্তে বলতে পারছেন না। বেলা ২টা থেকে রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় রুমা সদরে পৌঁছান বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন : এইচএসসির ফল ৮ ফেব্রুয়ারি
পাইন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উহ্লা মং মারমা জানান, মুয়ালপিতে ৫২ পরিবারের মধ্যে ৪৫ পরিবার মারমা।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাড়ি ছেড়ে রুমা উপজেলা সদরে আশ্রয় নিয়েছে ২২ জন পুরুষ, ১৪ জন নারী ও ৪ শিশু। তাদেরকে রুমা উপজেলায় মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের হলরুমে খাওয়া ও থাকার সুব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান তার ইউনিয়নে মুয়ালপি পাড়া, আর্থা পাড়া, প্রাংসা পাড়া, ইলি চান্দা পাড়া, ক্যকটাই পাড়া, ঞ্যোংক্ষ্যং পাড়াসহ প্রায় ১২টি পাড়ার লোকজন ৩দিন ধরে আতঙ্কে নিজেদের পাড়া ছেড়ে বিভিন্ন জঙ্গলে ও আত্বীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
আরও পড়ুন : শিশুরা স্মার্ট দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে
রুমা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মামুন শিবলী জানান, মুয়ালপি পাড়ার ২২ জন পুরুষ, ১৪ জন নারী ও ৪ জন শিশু রুমা মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদ থেকে কম্বল দেওয়া হয়েছে। পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদ ও আশ্রমের ভান্তে তাদেরকে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়দের কাছে শুনেছেন প্রায় ১২টি পাড়ার লোকজন প্রাণভয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাড়া (গ্রাম) ছেড়ে পালিয়েছেন।
আরও পড়ুন : রোববার রাজশাহীতে ২৫ প্রকল্প উদ্বোধন
গত বছরের অক্টোবর থেকে রুমা, রোয়াংছড়ি উপজেলায় কুকিচিন ন্যশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চলছে।
গত ১২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানিয়েছিলেন কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দুর্গম এলাকায় কেএনএফকে মাসিক তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে নতুন জঙ্গী সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : ইউনিয়ন পরিষদে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিতে ৪ প্রস্তাবনা
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, র্যাব বান্দরবানে ১২জন জঙ্গী আর বিভিন্ন সময় ১৪জন কেএনএফ সক্রিয় নেতা সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। কুকি চিনের সশস্ত্র সদস্য সংখ্যা দুশতাধিক হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক ভয়াবহ সশস্ত্র গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধেক ভূমি নিয়ে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন ক্ষমতাসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কুকি-চিন রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবীতে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করার চেষ্টা করছে।
২০২২ সালের ২৪ মার্চ ভারতের মিজোরামে অবৈধ সরঞ্জামসহ এই সংগঠনের ৬ বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিকে আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ১৯৯ নং পারভা ব্যাটালিয়ন। এরপরই সংগঠনটি আলোচনায় আসে।
আরও পড়ুন : সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে
ভারতীয় পত্রিকার সূত্রে, ২৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাংলাদেশের রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ট্রাই জংসনের কাছাকাছি ভারতীয় অংশের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মিজোরাম রাজ্যের লংতলাই জেলার পারভা থেকে ঐ ৬ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে করা হয়।
আটকৃতরা হলো, রামডিন্ডলিয়ান (২০) পিতা: লালথান কুং, সাংখুং বম (৩২), লিয়ান বাভিসাং, লালসাংরেম বম (৩৪), লালরাম মাউই (৪৫), নুনসাং বাওম (৩৯)। তারা সকলেই নিজেদের বাংলাদেশের বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা উপজেলার বাসিন্দা বলে বিএএসফের কাছে পরিচয় দেয়।
গ্রেফতারের পর আসামিদের কাছে থাকা একটি চিঠিতে কুকি-চীন ন্যাশনাল আর্মির সভাপতি এবং চীফ অফ স্টাফের সীলমোহরসহ অন্যান্য উদ্ধারকৃত সরঞ্জামাদি দ্বারা সন্দেহজনক হওয়ায় তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফের ১৯৯নং পারভা ব্যাটালিয়ন কমান্ডার।
আরও পড়ুন : সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে
এসময় তাদের থেকে ১টি, কমান্ডো নাইফ-৩টি ও মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি বিএসএফ জব্দ করে। প্রাথমিকভাবে আটককৃত ব্যক্তিরা বাংলাদেশের বম জনগোষ্ঠীর বিদ্রোহী সংগঠন কুকি-চীন ন্যাশনাল আর্মির সদস্য বলে ধারণা করা হয়।
বিএসএফ জানায়, প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটককৃত ৬ বাংলাদেশী বিচ্ছিন্নতাবাদীকে লংতলাই জেলা পুলিশের কাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন